Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bowbazar

ভাঙা বাড়ি ফিরবে কি, ভোট উৎসবে প্রশ্ন বৌবাজারের

গত সেপ্টেম্বরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ চলছিল। তার জেরেই সেকরাপাড়া ও দুর্গা পিতুরি লেনের ২৪টি বাড়ি ভেঙে পড়েছিল বলে জানান ভিটেহারা ওই দুই পাড়ার বাসিন্দারা।

কর্মকাণ্ড: দুর্গা পিতুরি লেনে চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। ছবি: রণজিৎ  নন্দী

কর্মকাণ্ড: দুর্গা পিতুরি লেনে চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। ছবি: রণজিৎ নন্দী

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০২:৩০
Share: Save:

কেউ থাকেন বেলেঘাটায়, কেউ বেহালায়, কেউ বা আমহার্স্ট স্ট্রিটে। কারও ঠিকানা আবার সল্টলেক। বাড়ির মালিক ছিলেন সকলেই। বর্তমানে সবাই ভাড়াটে। বৌবাজারের সেকরাপাড়া ও দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দাদের অবস্থা এখন এমনই। কলকাতায় স্থায়ী ঠিকানা থাকা সত্ত্বেও সেখানকার ৮০টি পরিবার এখন ছিন্নমূল। তাই আসন্ন কলকাতা পুরসভার ভোট নিয়ে কোনও উৎসাহই নেই তাঁদের মধ্যে। ভোটের চেয়ে তাঁরা বেশি ভাবিত আগামী দিনে নিজেদের হারিয়ে যাওয়া ঠিকানা নতুন করে ফিরে পাওয়া নিয়ে। সেই চেষ্টাতেই চলছে তাঁদের দৌড়ঝাঁপ।

গত সেপ্টেম্বরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ চলছিল। তার জেরেই সেকরাপাড়া ও দুর্গা পিতুরি লেনের ২৪টি বাড়ি ভেঙে পড়েছিল বলে জানান ভিটেহারা ওই দুই পাড়ার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, আরও বহু বাড়ি বিপজ্জনক ভাবে ভেঙেচুরে গিয়েছে। ওই দুর্ঘটনার সময়ে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ানো রাজনৈতিক নেতানেত্রীরাও এখন আর তাঁদের খোঁজ রাখেন না বলে অভিযোগ ঘরহারাদের।

এক দুপুরে দুর্গা পিতুরি লেনে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ি ভেঙে তৈরি হওয়া ফাঁকা মাঠে জোরকদমে চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। জানা গেল, সময়-সুযোগ মতো প্রতিদিনই সকলে এসে এক বার করে নিজেদের পুরনো ঠিকানা ঘুরে যান। মেট্রো রেলের স্থানীয় অফিসে গিয়ে তাঁরা খোঁজ নেন, কবে নতুন করে বাড়ি তৈরি হবে তাঁদের জন্য। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপও তৈরি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। এই সব কথাই জানাচ্ছিলেন আশিস সেন, সঞ্জয় সেন, পিয়ালি সেনরা।

বাড়ি ভেঙে ধুলোয় মিশে গিয়েছে সকলেরই। দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিতোষ করের। পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েও মেট্রোর উপরে রাগ কমেনি কারও।

কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে সেকরাপাড়া ও দুর্গা পিতুরি লেন। স্থানীয় গোয়েন্‌কা কলেজেই ওই এলাকার ভোটের বুথ তৈরি হয়। শাসক দল তৃণমূলের হয়ে বুথে এজেন্ট হওয়া এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘এখন কেউ খোঁজ রাখেন না আমাদের। ভোট আদৌ দেব কি না, ঠিক নেই।’’

তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী পিয়ালির কথায়, ‘‘আমাদের বাড়িতে তিনটি পরিবার মিলে থাকতাম। এখন সকলে বেলেঘাটার একটি তিন কামরার ফ্ল্যাটে রয়েছি। মেট্রো কত দিনে ফের আমাদের বাড়ি তৈরি করে দেবে, জানি না। মেট্রো বাড়ির ভাড়া দিচ্ছে ঠিকই। তবে ছ’মাস পরে ভাড়ার চুক্তির নবীকরণ হওয়ার কথা। তখন কতটা ভাড়া বাড়বে এবং সেই বর্ধিত ভাড়া মেট্রো দেবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে খুবই চিন্তায় রয়েছি। এখন ভোট নিয়ে আলাদা করে চিন্তাভাবনা নেই।’’

ওই বিপর্যয়ে বাড়ি ভেঙেছিল ছাপাখানার মালিক সঞ্জয় সেনের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ব্যবসা চলত বাড়ি থেকেই। এখনও ব্যবসার কাজ করার আলাদা জায়গা জোগাড় করতে পারিনি। কাছাকাছির মধ্যেই এক জায়গায় ভাড়ায় রয়েছি। নেতানেত্রীরাও এখন আর আমাদের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। আমরা সকলেই ক্ষুব্ধ।’’ অভিযোগ, এমনও অনেকে রয়েছেন, যাঁদের বাড়িভাড়ার পুরোটা মেট্রো বহন করছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১২ থেকে ১৫ হাজার ভোটার রয়েছেন। তার মধ্যে সেকরাপাড়া ও দুর্গা পিতুরি লেন মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা ৭৫০-৮০০ জন। সঞ্জয়বাবুদের হিসেব বলছে, বিপর্যয়ের কারণে অন্তত সাড়ে তিনশো মানুষ এলাকার বাইরে।

বাড়ি হারানো মানুষদের ক্ষোভ যে সঙ্গত, তা স্বীকার করছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষোভ তো থাকবেই। নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছে ওঁদের। তবে অনেকের কাছেই আমার ফোন নম্বর রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আমার কথাও হয়। ওঁরা যাতে ভোট দিতে আসেন, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE