লেলিহান: জ্বলছে সেই কারখানা। সোমবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
আর কত দিন?
পোড়া কারখানার বাইরে উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন ওঁরা। সোমবার অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে যে পাঁচ জন কর্মী এখনও নিখোঁজ, তাঁদেরই পরিজনেরা অপেক্ষা করছেন কারখানার বাইরে। যদি কোনও খবর আসে!
নিউ ব্যারাকপুরের যুগবেড়িয়ায় ওই চেয়ার কারখানার আগুন নেভার পরেও কেটে গিয়েছে দু’টো দিন। ছাই সরিয়েও খোঁজ মেলেনি ওই পাঁচ জনের। সোমবার থেকে তাই কারখানার বাইরেই ঠায় বসে পরিজনেরা। সময় যত গড়াচ্ছে, তাঁদের ক্ষোভও তত বাড়ছে।
সোমবার ছিল খড়দহের পানশিলার বাসিন্দা সুবোধ রায়ের শাশুড়ির শ্রাদ্ধ। তাঁর শ্যালিকা রিনা রায় এসেছিলেন কারখানায় সুবোধের খোঁজে। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার আমার বাপের বাড়িতেই যাওয়ার কথা ছিল সুবোধের। শেষে ছুটি বাতিল হওয়ায় যেতে পারেনি।’’ তিনি জানান, স্ত্রী বেবিকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে কারখানায়
যান সুবোধ।
সে দিন বেলা ১১টা নাগাদ সুবোধের সঙ্গে শেষ কথা হয় বেবির। রিনা বলেন, ‘‘ওদের এক ছেলে, এক মেয়ে। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ওরা সমানে কাঁদছে। শুধু বলছে, বাবা কখন আসবে? ওদের যে কী বলব!’’ তাঁর একটাই আক্ষেপ, ‘‘মায়ের শ্রাদ্ধে এলে বেঁচে যেত ছেলেটা।’’
ওই চেয়ার সংস্থারই কামারহাটির কারখানায় কাজ করতেন আগরপাড়ার মুন্নাপ্রসাদ রায়। দিন দশেক আগে তাঁকে যুগবেড়িয়ায় বদলি করা হয়। দাদা গণেশের কথায়, ‘‘ওটাই কাল হল। ও যদি এই কারখানায় যোগ না দিত, তা হলে এমন হত না। যাঁদের এখানে বদলি করা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই বলেকয়ে কামারহাটিতে থেকে গিয়েছেন।’’
খবর শোনার পর থেকে ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন মুন্নাপ্রসাদের স্ত্রী ববি। তাঁদের বড় ছেলে রবিকিষণের বয়স চার বছর। ছোট শচীন কোলের। গণেশ বলেন, ‘‘ভাইয়ের বৌকে বলেছি, ভিতরে ওরা আটকে আছে। দমকল উদ্ধার করবে। শুধু জানতে চাইছে, কবে বাড়ি ফিরবে ও?’’
বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছিল সাজিরহাটের নিত্যানন্দের। কিন্তু তিনি তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে রাজি হননি। তাঁর জামাইবাবু সোমনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রোজ ফোনে কথা হত। সে দিন খবর পাওয়ার পরেই ফোন করলাম। এক বার বেজে কেটে গেল। তার পর থেকে ফোনটা চুপ।’’
পল্টু দুয়ারি এবং সঞ্জীব পড়িয়াও কারখানার আগুনে আটকে পড়েছিলেন। যদি কোনও খবর আসে, তাই তিন দিন ধরে কারখানার বাইরে বসে তাঁরাও। তাঁদের অভিযোগ, চার বছর আগে আগুন লাগার পরেও ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, কারখানায় আপৎকালীন দরজা পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি। ছাদে যাওয়ারও কোনও দরজা ছিল না।
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং পুলিশ বুধবারও দিনভর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। পুলিশ পোড়া কারখানায় কাউকে ঢুকতে দেয়নি। কিন্তু তারই মধ্যে নিখোঁজদের পরিবারের কয়েক জন নজর এড়িয়ে ভিতরে ঢুকে ছাই সরিয়ে খুঁজতে থাকেন স্বজনদের।
পুলিশকর্তারা বলছেন, ভিতরে আটকে পড়লেও টানা ১৬ ঘণ্টার আগুনে কারও পক্ষে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার উপরেই নির্ভর করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy