E-Paper

শর্ত লঙ্ঘন, তবু ঘোড়ার মৃত্যুতে মামলা হল না

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘোড়সওয়ার বাহিনীর ওসি সোমবার রাতেই লালবাজারে ঘোড়ার মৃত্যু ও রবিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:১০
An image of Horses

—প্রতীকী চিত্র।

রবিবার রাতে ইডেন গার্ডেন্সে বাজি ফাটানোর জেরে ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা রুজু হয়নি মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। পুলিশ আদৌ মামলা করবে কি না, তা-ও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। উল্টে যুগ্ম-নগরপাল পদমর্যাদার এক অফিসার বলে দিয়েছেন, ‘‘সে রকম কোনও পরিকল্পনা নেই।’’ বরং আওয়াজে ঘোড়া কেন ভয় পাবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে পুলিশকর্তাদের মধ্যে। আওয়াজ সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনও প্রশিক্ষণ ঘোড়াগুলিকে দেওয়া যায় কি না, সেই চর্চাও চলছে লালবাজারে। পশুপ্রেমীদের প্রশ্ন, একটি অবোলা প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে বলেই কি ‘নরম’ অবস্থান নিয়েছে পুলিশ? এ প্রসঙ্গে নগরপাল বিনীত গোয়েলকে এ দিন ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের। এ বিষয়ে রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তিনি কোনও নির্দেশ দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘোড়সওয়ার বাহিনীর ওসি সোমবার রাতেই লালবাজারে ঘোড়ার মৃত্যু ও রবিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিয়েছেন। তাতে জানানো হয়েছে, আহত দুই ঘোড়সওয়ারের মধ্যে এক জন আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি। তাঁর ঠোঁট ও মুখ মিলিয়ে ২১টি সেলাই পড়েছে। অন্য জন সেখানেই জেনারেল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। ওই রিপোর্টে পুলিশের পশু চিকিৎসক সুরজিৎ বসু (যিনি মৃত ঘোড়ার ময়না তদন্ত করেন) জানিয়েছেন, শব্দবাজির তাণ্ডবে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে পুলিশের ঘোড়া, বছর পাঁচেকের ‘ভয়েজ় অব রিজ়নস’-এর। অন্য একটি ঘোড়ার বুকে পাঁচটি সেলাই পড়েছে। সব মিলিয়ে অসুস্থ মোট তিনটি ঘোড়াকে বেশ কিছু দিন বিশ্রামে রাখতে বলেছেন তিনি।

লালবাজার সূত্রের খবর, বাজি কোথায় ফাটানো হবে, সেই তথ্য নাকি পুলিশের কাছে ছিল না। কিন্তু ম্যাচের আগেই সিএবি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ মেনে শর্তসাপেক্ষে বাজি ফাটানোর অনুমতি নিয়েছিল। লালবাজারের এক কর্তার দাবি, ‘‘কী বাজি ফাটানো হচ্ছে, আমরা জানতাম না। কোনও সবুজ বাজি সে দিন ফাটানো হয়নি। প্রতি বারই নির্ধারিত সময়ের বাইরে বাজি ফাটাতে চেয়ে আদালতে যায় সিএবি। গত বছর আদালত জানায়, পুলিশ কিছু শর্ত দিয়ে বাজি ফাটানোর অনুমতি দিতে পারে। তা-ই দেওয়া হয়।’’ যদিও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের আরও কড়া অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল। শর্ত মানা হচ্ছে কি না, তা দেখাও পুলিশের কাজ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সিএবি-ও নিয়ম মানেনি। আমরা ধুলো আটকাতে স্প্রিঙ্কলার দিয়ে ময়দানে জল দিতে বলেছিলাম সিএবি-কে। তা-ও দেওয়া হয়নি।’’ সিএবি-র সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিব নরেশ ওঝাকে এ দিন বার বার ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।

প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামসুন্দর দানা বললেন, ‘‘পুলিশের তো প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি আইনে অবিলম্বে মামলা করা উচিত। যে কোনও পশু নয়, পুলিশেরই ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে।’’ ঘোড়া ও অন্যান্য পশুর অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের সদস্য রাধিকা বসুর মন্তব্য, ‘‘কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের ঘোড়ার মৃত্যু হল এবং দুই পুলিশকর্মী আহত হলেন, পুলিশের কি চুপ থাকা মানায়? পুলিশের তরফে আরও মানবিক পদক্ষেপ আশা করা যায়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Horses Eden Gardens Firecrackers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy