ফাইল চিত্র।
করোনা-যুগে ঘরবন্দি ওরাও। বাইরে বেরোনো আপাতত বন্ধ, ফলে কারও কারও মেজাজ রীতিমতো সপ্তমে চড়ে আছে। কেউ কেউ আবার ভুগছে অবসাদে। এ ভাবেই ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে পোষ্য কুকুরেরা। বাইরে না যেতে পেরে তাদের শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। আবার অসুস্থ হলেও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে না পারায় গত কয়েক মাসে মৃত্যুও হয়েছে বেশ কিছু পোষ্য কুকুরের।
লকডাউনে এ ভাবেই ভুগছে পিটিএসে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪১টি কুকুরও। কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের পশু চিকিৎসক দেবানন্দ বসাক বলেন, ‘‘সম্প্রতি পিটিএসে পুলিশকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ায় পুলিশ-কুকুরদের সকাল-সন্ধ্যার প্রশিক্ষণ নিয়মমতো হচ্ছে না। খোলা মাঠে না বেরোতে পারলে ওদের সমস্যা তো হবেই।’’ বরাহনগরের বাড়িতে পশু ক্লিনিকেও পোষ্যের অসুস্থতার কথা জানিয়ে একাধিক ফোন এসেছে বলে জানাচ্ছেন দেবানন্দবাবু। এমনকি, সময়মতো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে না পারায় অনেক পোষ্যের মৃত্যুও হয়েছে। ‘‘অসুস্থ হলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে না পেরে শুধু ফোনে ওষুধের নাম জেনে নিয়েছেন অনেকে। তবুও অনেককেই ভুগতে হয়েছে।’’— বলছেন তিনি।
পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ঘরবন্দি থাকায় মেজাজও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে পোষ্য কুকুরদের। এ ছাড়া হজমের সমস্যা, ডায়েরিয়া, মোটা হয়ে হওয়ার মতো সমস্যা তো আছেই। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বছর দশেকের পোষ্য কুকুরটি মারা যায় গত এপ্রিলে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এখনও মন খারাপ। লকডাউনে অবলা প্রাণীগুলোও ভুগছে। ও ডায়াবিটিসে মারা যায়।’’ দেবানন্দবাবুর কথায়, ‘‘কুকুর অতি সংবেদনশীল প্রাণী। তাই লকডাউনে আমাদের বিপর্যয়ের বিষয়টি ওরা অতি সহজেই বুঝতে পারছে। ফলে ওরাও মানসিক অবসাদে ভুগছে।’’ বরানগরের বাসিন্দা ঋতা বসাকও বছর পাঁচেকের ল্যাব্রাডরকে হারিয়েছেন গত এপ্রিলে। ঋতাদেবী বলছেন, ‘‘বেরোতে না পেরে ও মোটা হয়ে যাচ্ছিল। এর পরে শুরু হল বমি, পেট খারাপ। সকাল-সন্ধ্যায় বাইরে যাওয়ার সময় হলেই বোঝা যেত, ও কষ্ট পাচ্ছে।’’
অতিমারির ভয়ে অসুস্থ পোষ্যকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সংখ্যাও কমেছে বলে জানাচ্ছেন বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু ক্লিনিকের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক রুদ্রদেব মুখোপাধ্যায়। তাই ওদের নিয়ে বাইরে হাঁটতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চঞ্চল গুহ। তাঁর কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে পোষ্যদের নিয়ে একটু বেরোলে ভাল হয়। ওরাও আতঙ্কে আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy