মোবাইল অ্যাপে ট্যাক্সি বুক করতেই ভেসে আসে ছবি, নাম ও নম্বর। কিন্তু সম্প্রতি একটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, চালকের আসনে যিনি বসে, তাঁর সঙ্গে মোবাইলে আসা ছবির তো মিল নেই-ই, এমনকী নামও আলাদা। আর এই ঘটনায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে।
কলকাতা শহরের অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি নিয়ে এমনিতেই বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মহিলা যাত্রীর সঙ্গে অভব্যতা করার জন্য গ্রেফতারও করা হয়েছে চালককে। পুলিশের দাবি, প্রত্যেক অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সিচালকের ছবি,
নম্বর, নাম যাত্রীর কাছে থাকার ফলে কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশের পক্ষেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু এ ভাবে পরিচয় গোপন করে কেউ গাড়ি চালালে, তাঁকে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন হয়ে উঠবে।
সম্প্রতি ওলা ক্যাবের একটি ঘটনায় পুলিশ এই তথ্য পেয়েছে। জানা গিয়েছে, ক্যাবটি বুক করার পরে যাঁর নাম ও ছবি যাত্রীর মোবাইলে উঠে এসেছিল, আদতে তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। তিনি আসলে গাড়ির মালিক। আর যিনি চালাচ্ছিলেন, সেই ব্যক্তির নাম, ছবি কিছুই ছিল না যাত্রীর কাছে। পরিচয় গোপন করেই, মালিকের নাম নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি।
সোমবার সন্ধ্যায় ওই ‘ভুয়ো’ ক্যাব চালক শেখ ইকবাল মাঝপথে গাড়ি থেকে জোর করে নামিয়ে দেন সুপ্রিয় নস্কর নামের ওই যাত্রীকে। তখনই সামনে আসে এই পরিচয় গোপন করার বিষয়টি। সুপ্রিয়বাবু জানান, বেহালা যাওয়ার জন্য রাজাবাজার থেকে ওই ওলা ক্যাবে ওঠেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, মাঝপথে লেক গার্ডেন্সে গোটা যাত্রাপথের ভাড়ার টাকা ছিনিয়ে তাঁকে জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে গাড়ির মালিক নীরজ সিংহ-কেও ডেকে নেন ইকবাল। দু’জনে মিলে সুপ্রিয়বাবুকে মারধরও করেন বলে অভিযোগ। এ দিকে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওলা বুক করার পরে সুপ্রিয়বাবুর মোবাইলের স্ক্রিনে ফুটে উঠেছিল নীরজের নাম ও ছবি। কিন্তু গাড়িটি চালাচ্ছিল ইকবাল। পরে নীরজ ও ইকবাল — দু’জনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
কী বলছে ওলা?
মঙ্গলবার থেকে একটানা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় এই ট্যাক্সি পরিষেবা সংস্থার সঙ্গে। সংস্থার এক অফিসারকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি গোটা বিষয়টি ই-মেল করে পাঠাতে বলেন। সেই মতো মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে ই-মেল করা হয়। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও উত্তর মেলেনি।
এই পরিষেবা দেওয়া অন্য সংস্থা উবের-এর কলকাতার জেনারেল ম্যানেজার অশ্বিন ডায়াস এ বিষয়ে বলেন, ‘‘প্রত্যেক যাত্রীর কাছে অনুরোধ, আমাদের গাড়িতে ওঠার আগে দেখে নিন মোবাইলে আসা ছবির সঙ্গে চালকের মুখ মিলছে কি না। না মিললে, সামান্যতম সন্দেহ দেখা দিলে ওই যাত্রা বাতিল করে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানান।’’ অশ্বিনের আশ্বাস, ‘‘আমাদের পরিষেবায় এ রকম অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সোমবার সন্ধ্যায় ওলা-র ঘটনায় সুপ্রিয়বাবুর আরও অভিযোগ ছিল, তাঁর সঙ্গে চালক যখন অভব্য আচরণ করছিলেন তখন তিনি তিন বার সংস্থার হেল্প-লাইনে ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। প্রত্যেকবার একজন ফোন ধরে বলেন, ‘‘একটু অপেক্ষা করুন। সিনিয়র স্টাফ কথা বলবেন।’’ কিন্তু, প্রতিবারই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে সেই ফোন কেটে যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবারের ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে ওলা-র কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, এ ধরনের ঘটনা যাত্রীর সুরক্ষার দিক থেকে বিপজ্জনক। কারণ, খারাপ কিছু ঘটলে গাড়ির নম্বর ছাড়া আর কিছুই থাকছে না। দ্রুত চালকের হদিস পাওয়ার উপায় নেই। অথচ তাড়াহুড়োয় অনেক সময়েই মোবাইল-বার্তায় পাওয়া ছবির সঙ্গে চালকের মুখ মিলিয়ে দেখেন না যাত্রীরা, কেবল গাড়ির নম্বর ও চালকের মোবাইল নম্বর যাচাই করে দেখে নেন।
এ দিকে অ্যাপ নির্ভর এই ট্যাক্সি পরিষেবার নিয়ম হল, গাড়ির মালিক ছাড়া অন্য কেউ গাড়ি চালালে আগে থেকেই সংস্থাটির কাছে তাঁর নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বর নথিভুক্ত করতে হবে। সেই মতো তাঁর নিজস্ব আইডি তৈরি হবে, পাসওয়ার্ড থাকবে। মালিক ছাড়া অন্য কেউ গাড়ি চালাতেই পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে সেই চালককে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সংস্থাকে জানিয়ে রাখতে হবে যে তিনিই গাড়ি চালাচ্ছেন। যাতে যাত্রীর মোবাইলে প্রয়োজনে তাঁর নাম, ছবি ও নিজস্ব মোবাইল নম্বর চলে যায়।
পাল্টা অভিযোগ অ্যাপ-ক্যাবের। একটি গাড়ির সঙ্গে একটি অ্যাপ-ক্যাবের ধাক্কা এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ দায়ের। গত শনিবার রিনি শীল নামে এক মহিলার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে
একটি অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির। মহিলা নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। রিনিদেবী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, ধাক্কা লাগার পর অ্যাপ-ক্যাবের চালক তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করে গিয়ে হুমকি দেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতারও করা হয়েছিল
ওই ট্যাক্সিচালককে। কিন্তু পরে ওই মহিলার বিরুদ্ধে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে ট্যাক্সির ক্ষতি করার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করলেন অ্যাপ-ক্যাবের মালিক।
রিনিদেবীর বিরুদ্ধে বুধবার নতুন করে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ এখনও তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তাঁর দাবি, অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সিটির থেকেও বেশি ক্ষতি হয়েছে তাঁর গাড়ির। এ দিন ওই অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও কোন জবাব দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy