Advertisement
E-Paper

বিদেশিদের কার্ডে জালিয়াতি ২২ লক্ষ

তিনি বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার। চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরে চাকরিও করেছেন। আদতে কলকাতার বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০১:১০

তিনি বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার। চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরে চাকরিও করেছেন। আদতে কলকাতার বাসিন্দা।

ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে সেই ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় ঘোষকে গ্রেফতার করেছেন কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অফিসারেরা। অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে অভিনব এক উপায়ে বিদেশিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। তবে অভিযোগ বিদেশ থেকে আসেনি, এসেছে সল্টলেকের একটি সংস্থার মালিক উমেশ চন্দ্রের কাছ থেকে।

পুলিশ জানিয়েছে, মোহালির বাসিন্দা উমেশের সঙ্গে চুক্তি করেন সঞ্জয়। নাম পরিবর্তন করে সঞ্জয় নিজের পরিচয় দেন বিশাল কুমার বলে। জানান, তিনি স্কাই-এজ নামে একটি সংস্থার মালিক। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সেই নামে কোনও সংস্থার কোনও অস্তিত্বই নেই।

বিভিন্ন পরিষেবা পেতে বিদেশিরা নিয়মিত যোগাযোগ করেন ভারতীয় সংস্থারগুলির সঙ্গে। সেই পরিষেবার বদলে যখন বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে টাকা দেন, তখন ‘গেটওয়ে’-র মাধ্যমে দেন। উমেশ এমনই এক গেটওয়ের মালিক। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু বিদেশি গ্রাহক যাতে উমেশের গেটওয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠায়, তার ব্যবস্থা করে দেবে বলে সঞ্জয় উমেশকে লোভ দেখান। চুক্তি হয় দু’জনের মধ্যে। ঠিক হয়, উমেশ যে টাকা সঞ্জয়ের মারফত নিজের গেটওয়েতে পাবেন, তার ১০ শতাংশ নিজের জন্য রেখে বাকি ৯০ শতাংশ সঞ্জয়কে দেবেন।

আর এখানেই উঠে আসে আর এক ব্যক্তির নাম। তিনি সিদ্ধান্ত সিংহ। তিনি সল্টলেকের একটি বিপিও-র মালিক। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত বিদেশিদের যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন পরিষেবার বদলে ওই বিদেশিরা টাকা পাঠান সিদ্ধান্তের কাছে। এই টাকা মূলত আসে ক্রেডিট কার্ড মারফত। পুলিশ জানায়, যখনই কোনও বিদেশি গ্রাহক নিজের ক্রেডিট কার্ড মারফত সিদ্ধান্তকে টাকা পাঠাতেন, সিদ্ধান্ত চুরি করে গ্রাহকের কার্ডের সব তথ্য জেনে নিতেন। তা গ্রাহক ঘুণাক্ষরেও টের পেতেন না। এই ভাবে কয়েক শো বিদেশির ক্রেডিট কার্ডের নম্বর, সিভিভি-সহ যাবতীয় তথ্যের ভাণ্ডার হাতিয়ে ফেলেন সিদ্ধান্ত।

২০১৫ সালের জুলাই মাস উমেশের সঙ্গে চুক্তির পরে সঞ্জয় সিদ্ধান্তের কাছে আসেন। এই কাজে শরণকুমার মাইতি নামে এক ব্যক্তির সাহায্য নেন সঞ্জয়। শরণ দু’জনের মাঝে সেতু-বন্ধনের কাজ করেন। কিছু টাকার বদলে সঞ্জয়ের হাতে বিদেশি গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য তুলে দিতে রাজি হন সিদ্ধান্ত। শুরু হয় সঞ্জয়ের ‘কেরামতি’। তিনি ওই সব বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলে উমেশের গেটওয়েতে ফেলতে শুরু করেন। পুলিশ জানিয়েছে, গত মাস দুয়েক ধরে এ ভাবে প্রায় ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার তুলে নিয়ে উমেশের গেটওয়েতে দিয়েছেন সঞ্জয়। সেই টাকা থেকে ১০ শতাংশ নিজের জন্য কেটে নিয়ে বাকি টাকা সঞ্জয়ের কাছে চুক্তি মতো ফিরিয়ে দেন উমেশ। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল।

কিন্তু বিদেশে বসে গ্রাহকেরা যখন দেখতে পান যে, আচমকাই তাঁদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেউ টাকা তুলে নিচ্ছেন, তখন তাঁরা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কাছে অভিযোগ জানাতে শুরু করেন। তদন্তে নেমে ওই সব বিদেশি ব্যাঙ্ক জানতে পারে, উমেশের গেটওয়েতে গিয়ে পড়েছে ওই টাকা। তখন সেই টাকা বিদেশি ব্যাঙ্কের তরফে তুলে নেওয়া হয়।

মাথায় হাত পড়ে যায় উমেশের। যে টাকা পেয়ে তিনি ৯০ শতাংশ নগদ তুলে দিয়েছেন সঞ্জয়ের কাছে, সেই টাকাই তাঁর গেটওয়ে থেকে ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে বিদেশি ব্যাঙ্কগুলি। উদাহরণ দিয়ে পুলিশকর্তা জানান, এক হাজার ডলার জমা পড়ার পরে নিজের জন্য ১০০ ডলার রেখে বাকি ৯০০ ডলার সঞ্জয়ের হাতে তুলে দিতেন উমেশ। পরে দেখেন তাঁর গেটওয়ে থেকে এক হাজার ডলারই তুলে নিয়েছে বিদেশি ব্যাঙ্ক।

৩০ মে পার্ক স্ট্রিট থানায় সঞ্জয়ের নামে অভিযোগ জানান উমেশ। বুধবার রাতে সঞ্জয়কে মহেশতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। কসবা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে শরণকে এবং সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে ধরা হয়েছে সিদ্ধান্তকে। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু ল্যাপটপ ও স্মার্ট ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Fraud Police arrest Engineer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy