Advertisement
E-Paper

উর্দির প্রতি অবজ্ঞা বাড়ছে ভোটের শহরে

পুলিশকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতা বাড়ছে বই কমছে না। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই আক্রোশের লক্ষ্য ট্রাফিক পুলিশ, তবু এই সব ঘটনায় উর্দির প্রতি সম্ভ্রমই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৪
প্রহৃত পুলিশ সেলিম সরকার

প্রহৃত পুলিশ সেলিম সরকার

পুলিশকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতা বাড়ছে বই কমছে না। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই আক্রোশের লক্ষ্য ট্রাফিক পুলিশ, তবু এই সব ঘটনায় উর্দির প্রতি সম্ভ্রমই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। ভোটের আগে যখন শহরের আইনশৃঙ্খলার উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি, সেই সময়েই উর্দিধারীদের প্রতি সম্ভ্রম হারানোর এই প্রবণতা বাড়তে থাকা উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, পুলিশকে ভয় না পেলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার জটিলতা বা আশঙ্কা রয়েই যায়।

শুক্রবার এবং সোমবার। ‘কেস’ দিতে আসা ট্রাফিক পুলিশের উপরে চড়াও হওয়ার আরও তিনটি ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পুলিশকে পরোয়া না করাটাই কার্যত নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ শহরে। সোমবার দুপুরে উল্টোডাঙার মুচিবাজারে হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের ধরতে গিয়ে ফের প্রহৃত হন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মী। মানিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সুজিত ঘড়াই এবং নিমাই দেবনাথ। সুজিত কলকাতার বড়তলা এবং নিমাই উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছির বাসিন্দা।

কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন মুচিবাজার মোড়ে ডিউটি করছিলেন উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল সেলিম সরকার। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ ওই এলাকা দিয়ে শ্যামবাজারের দিকে যাচ্ছিল একটি মোটরবাইক। আরোহী তিন যুবকের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। ওই কনস্টেবল গাড়িটি থামাতেই তাঁর সঙ্গে ওই তিন যুবকের বচসা বাধে। অভিযোগ, তার জেরেই সুজিত ওই কনস্টেবলকে সপাটে চড় মারে। সেলিম তিন জনকে ধরতে উদ্যত হলে তাঁরা মারপিট করে ওই কনস্টেবলের জামাও ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ। সুজিত ও নিমাইকে ধরে ফেলে সার্জেন্টের সঙ্গে মানিকতলা থানায় নিয়ে যান ওই কনস্টেবল। বাকি এক যুবক পালিয়ে যায়।

এর আগে শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ ভবানীপুর ট্রাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট এবং রাত ৯টা নাগাদ টালিগঞ্জ ট্রাফিক গার্ডে আর এক সার্জেন্ট বেপরোয়া গা়ড়ি আটকাতে গিয়ে প্রহৃত হন। শুক্রবার বিকেলে মনোহর পুকুর রোডের মোড়ে সিগন্যাল লাল থাকা সত্ত্বেও রাসবিহারীর দিকে এগিয়ে গিয়েছিল একটি গাড়ি। কর্তব্যরত সার্জেন্ট অভিষেক ঘোষ গাড়িটিকে জরিমানা করতে গেলে আরোহীদের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁর। এর পরেই ওই দুই যুবক তাঁকে নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকেই আরোহী দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। এর পরে রাত ৯টা নাগাদ রবীন্দ্র সরোবরে এক সিনেমা হলের সামনে বেপরোয়া বাইক আটকাতে গিয়ে হাতে চোট পান সার্জেন্ট মহম্মদ আলাউদ্দিন।

শুধু বেপরোয়া বাইক নয়, পানশালার ঝামেলা বা দুষ্কৃতী দলের তাণ্ডবেও ইদানীং সহজ ‘টার্গেট’ হয়ে গিয়েছে পুলিশই। এমনকী দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রথমে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে তুলে তাঁদের উপরে চড়াও হন সাধারণ মানুষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বচসা গড়ায় শারীরিক ভাবে নিগ্রহে। যদিও এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ সত্যি হলেও বেশির ভাগ সময়েই পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই কিছু পরিস্থিতিতে পুলিশের কিছু করার থাকে না। চলতি মাসের ৮ মার্চ ওয়াটগঞ্জে বেপরোয়া মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যান এক যুবক। পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। ভাঙচুর করা হয় ডিসি (বন্দর) সুদীপ সরকারের গাড়িও। একই ভাবে এ বছরের ৩০ জানুয়ারি পার্ক স্ট্রিটের একটি পানশালায় ঝামেলা থামাতে গিয়েও প্রহৃত হয় পুলিশ।

কিন্তু কেন পুলিশের প্রতি এই বেপরোয়া মনোভাব? পুলিশের একাংশের মতে, এর পিছনে যেমন রয়েছে যৎসামান্য জরিমানার অঙ্ক, তেমনই দুষ্কৃতীদের পিছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মদতও এর জন্য দায়ী। রাস্তায় গাড়ি আটকালে সামান্য টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড় পাওয়ার প্রবণতা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিভিন্ন নেতার নাম করে হুমকি দেওয়াও। আর তাতে কোনও পুলিশ অফিসার রাজি না হলেই তাঁদের ভাগ্যে জোটে প্রহার।

Police Beaten city kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy