একের পর এক বাজারে আগুন লাগায় নড়েচড়ে বসেছিল হাওড়া পুরসভা। মেয়রের নির্দেশে তৈরি হয়েছিল শহরের বাজারগুলির অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে দু’-দু’টি কমিটি। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই দুই কমিটি কোনও রিপোর্ট জমা দেয়নি। ক্ষুদ্ধ মেয়র প্রায় বাধ্য হয়েই সে দায়িত্ব তুলে দিলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনারের হাতে।
গত বছর কালীপুজোর পরদিন ভয়াবহ আগুন লাগে শতাব্দী প্রাচীন কদমতলা বাজারে। পুড়ে যায় প্রায় গোটা বাজারটিই। ক্ষতিগ্রস্ত হন দেড়শোরও বেশি দোকানদার। এর পরেই আগুন লাগে রামরাজাতলা বাজারে। দু’টি বাজারই ঘিঞ্জি বসতিপূর্ণ এলাকায় হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। ওই দু’টি বাজারে অগ্নিকাণ্ডের পরেই মেয়র রথীন চক্রবর্তীর নির্দেশে মেয়র পারিষদ (বাজার) সীমা নস্করের নেতৃত্বে তৈরি হয় দু’টি কমিটি। বাজারগুলির অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেই দুই কমিটির সদস্যদের। প্রথম কমিটিতে রাখা হয় কদমতলা বাজার এলাকার কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় ও নিকাশির মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্রকে। এ ছাড়াও রামরাজাতলা বাজারে আগুন লাগার পরে সীমাদেবীর নেতৃত্বে পুরসভার বিভিন্ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে গঠিত হয় সাত সদস্যের আর একটি কমিটি।
কিন্তু অভিযোগ, মেয়রের নির্দেশের পরে পাঁচ মাস কেটে গেলেও ওই দু’টি কমিটি রিপোর্ট দেওয়া দূরের কথা, এক দিনও বাজারগুলি পরিদর্শন পর্যন্ত করতে যাননি সদস্যেরা। ফলে শহরের প্রায় প্রত্যেকটি বাজার জতুগৃহ হয়ে থাকলেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় যে কোনও দিন বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা করছেন পুরকর্তারাই।
হাওড়া পুর এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে বাজারের সংখ্যা ১২টিরও বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘হাওড়ার এতগুলি বাজারে মধ্যে অধিকাংশেই কোনও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। পুরসভার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে কোনও দিন ফের বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।’’
বাজারগুলি নিয়ে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট না দেওয়ায় তাঁর ক্ষোভও গোপন করেননি হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ওই রিপোর্ট জমা না পড়ায় আমি ক্ষুব্ধ। আমার মনে হয়েছে, যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা এর উপযুক্ত নন। তাই আমি হাওড়ার বাজারগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য পুলিশ কমিশনারকে দায়িত্ব দিয়েছি।’’
মেয়র জানান, গত কয়েক দিনে কলকাতার ঘিঞ্জি এলাকায় বারবার আগুন লাগার পরে তিনি মঙ্গলবারই মেয়র পারিষদদের সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হাওড়ার বাজারগুলিও একই অবস্থায় রয়েছে। প্রচুর ঘিঞ্জি এলাকা আছে। আমি তাই পুলিশ কমিশনারকে হাওড়ার বাজার ছাড়াও অন্য ঘিঞ্জি এলাকাগুলির অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বলেছি। তিনি জানাবেন, কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কমিটির দায়িত্বে থাকার পরে কেন বাজার পরিদর্শন করা হল না? কেনই বা মেয়রকে রিপোর্ট দেওয়া হল না?
মেয়র পারিষদ সীমা নস্কর বলেন, ‘‘এটা ঠিকই এখনও কোনও রিপোর্ট জমা দেওয়া যায়নি। তবে বাজারগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে ওদের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাগুলি ঠিক করে নিতে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করা যায়নি। আমরা নিশ্চয় পরিদর্শন করতে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy