Advertisement
E-Paper

দেহ নিয়ে রিকশায় চক্কর খুনির

পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোরে রাতপোশাক পরা অবস্থায় নবীনচন্দ্র দাস রোডের মজুমদার বাড়ির খোলা গ্যারাজে ৩২ বছরের রুমার দেহ পাওয়া যায়। এর পরে বুধবার রাতে ওই তরুণীর সঙ্গী রামকৃষ্ণ তালুকদার ওরফে পার্থকে বরাহনগরের তাঁতিপাড়ায় তাঁর ফ্ল্যাট থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। এঁরা দু’জনেই বিবাহিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
গোয়েন্দা প্রধানের দফতরে অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

গোয়েন্দা প্রধানের দফতরে অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

আচমকাই বেপাত্তা ভাড়াটে তরুণী। খোঁজ নেই তাঁর সঙ্গীরও। রাত থেকে তালা ঝুলছে ঘরে। ঠিক এর পরের দিন ভোরে, ওই বাড়ি থেকে কিছু দূরে একটি গ্যারাজে রাখা দু’টি ট্যাক্সির মাঝখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার দেহ। সেই মৃতাই কি ওই নিখোঁজ তরুণী? সন্দেহ হয়েছিল বাড়িওয়ালার।

স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে সে কথা জানতে পেরেই বরাহনগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিখোঁজ তরুণী যে ঘরে ভাড়া থাকতেন, সেখানে হানা দেয় পুলিশ। পাওয়া যায় একটি চিরকুট। তাতে লেখা এক ব্যক্তির ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতেই জানা যায়, ওই তরুণীর নাম রুমা পাল। তিনি নিমতার এমবি রোডের বাসিন্দা। এর পরে আরও নিশ্চিত হতে গ্যারাজে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের ছবি দেখানো হয় ওই ব্যক্তিকে। দেহটি রুমার বলে শনাক্ত করেন তিনি।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোরে রাতপোশাক পরা অবস্থায় নবীনচন্দ্র দাস রোডের মজুমদার বাড়ির খোলা গ্যারাজে ৩২ বছরের রুমার দেহ পাওয়া যায়। এর পরে বুধবার রাতে ওই তরুণীর সঙ্গী রামকৃষ্ণ তালুকদার ওরফে পার্থকে বরাহনগরের তাঁতিপাড়ায় তাঁর ফ্ল্যাট থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। এঁরা দু’জনেই বিবাহিত।

তদন্তকারীদের দাবি, পার্থর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরেই খুন হতে হয়েছে রুমাকে। তদন্তে তাঁরা জেনেছেন, গত রবিবার রাতে প্রথমে রুমাকে বিষ মেশানো বিরিয়ানি ও পানীয় খাওয়ান পার্থ। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ধরা পড়ার ভয়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ওই গ্যারাজে দেহটি ফেলে দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, নিমতায় রুমার স্বামী অর্জুনের তেলেভাজার দোকান রয়েছে। মাঝেমধ্যে রুমাও দোকানে বসতেন। অন্য দিকে, ডানলপে বাবার কাপড়ের দোকান দেখাশোনা করতেন পার্থ। কাজের সূত্রে মাঝেমধ্যে নিমতা আসতেন তিনি। সেখানেই তেলেভাজার দোকানে রুমা ও পার্থর পরিচয়। ফোনে গল্প করা ছাড়াও ডানলপে পার্থদের দোকানে এসে দেখা
করতেন ওই তরুণী। প্রায় এক বছর ধরে এমন চলার পরে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁরা বিয়ে করে সংসার পাতার সিদ্ধান্তও নেন।

সেই মতো দুই সন্তানের মা রুমা গত জুন মাসে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান বলে জানায় পুলিশ। অর্জুন আত্মীয়দের কাছেও খোঁজ করেছিলেন স্ত্রীর। কিন্তু হদিস পাননি কোথাও। এর পরেই নিমতা থানায় নিখোঁজ ডায়রি করেন ওই তেলেভাজা ব্যবসায়ী। অন্য দিকে, আলমবাজারের ফ্ল্যাটে যে হেতু স্ত্রী রয়েছেন, তাই সেখানে রুমাকে নিয়ে যেতে পারেননি পার্থ। তিন মাস ধরে বরাহনগরের দুই জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে কাটানোর পরে শেষে মৎস্যজীবী কলোনিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার পাতেন দু’জন। পুলিশ পার্থকে জেরা করে জেনেছে, সম্প্রতি বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা রুমা। আর তাতেই শুরু হয় সংঘাত।

পুলিশের দাবি, তখনই রুমাকে খুনের ছক কষেন পার্থ। সেই মতো রবিবার রাতে খুনের পরে পরিচিত এক রিকশাচালককে ডেকে রুমার দেহটি রিকশায় তুলে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন পার্থ। প্রথমে স্থানীয় একটি জলাশয়ে দেহ ফেলার চেষ্টা করলেও সেখানে কিছু যুবককে দেখে সিদ্ধান্ত বদলান ওই যুবক। এর পরে তিনি গঙ্গায় দেহ ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে যাওয়ার পথে রাস্তার একটি মন্দিরে বসে ওই রিকশাচালকের সঙ্গে মদ্যপান করেন পার্থ। কিন্তু এর পরেই বেঁকে বসেন রিকশাচালক। মৃতদেহ নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন তিনি। বিপদ বুঝে এর পরে ওই গ্যারাজে দেহ ফেলে পালিয়ে যান পার্থ।

স্থানীয় কাউন্সিলর অঞ্জন পাল বলেন, ‘‘বাড়িওয়ালার খটকার কথা জানতে পেরেই পুলিশকে বিষয়টা বলেছিলাম। পুলিশ ওই বাড়িতে যেতেই রহস্য ভেদ হয়।’’ পুলিশ জানায়, রুমার সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই পরিবারে অশান্তি শুরু করেছিলেন পার্থ। বোনের গলা টিপে ধরা এবং স্ত্রীর উপরে অত্যাচারের অভিযোগে এক বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি।

Arrest Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy