বড়দিনের রাতে তেমন হুল্লোড় থাকে না। তাতেও বেপরোয়া মোটরবাইকে লাগাম টানতে পারেনি লালবাজার। এ বার বর্ষশেষের রাতে কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় খোদ ট্র্যাফিক পুলিশের অফিসারেরাই। তাঁরা বলছেন, পুজোর সময়ে বাইকের উপদ্রব রুখতে কড়া দাওয়াই দেওয়া হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় লাইসেন্স, গাড়ি। কিন্তু বর্ষশেষের রাতে তেমন কোনও দাওয়াইয়ের নির্দেশ শুক্রবার রাত পর্যন্ত নিচুতলাকে জানাননি লালবাজারের কর্তারা।
বর্ষশেষের রাতে হুল্লোড়ে মাতে শহর। মত্ত অবস্থায় রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া বাইক ছোটানোর দৃশ্যও কার্যত পরিচিত হয়ে গিয়েছে। পুলিশের একাংশই বলছে— এ ভাবে দুর্ঘটনা তো ঘটেই, সঙ্গে কিশোরী-তরুণীদের উদ্দেশে চলতে থাকে কটূক্তি, শ্লীলতাহানিও। এই রেওয়াজ গত কয়েক বছর পুজোর দিনগুলিতে দেখা যাচ্ছিল। তা রুখতেই পুজোয় মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করা শুরু করে পুলিশ। এক রাতেই বদলে যায় ছবিটা। নিচুতলার পুলিশকর্মীরা বলছেন, বর্ষশেষের রাতেও যদি এমন বিশৃঙ্খলা হয়, এই দাওয়াইয়ে জনতাকে বাগে আনা সম্ভব হতো। ‘‘এ বার বর্ষশেষের রাতে মোটরবাইক রোখাটাই কিন্তু আমাদের বড় পরীক্ষা,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।
আজ, শনিবার সকাল থেকেই শহরতলি, জেলার ভিড় ঢুকে পড়বে কলকাতায়। চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, সায়েন্স সিটি, ময়দানে মানুষ জড়ো হবেন উৎসবের মেজাজে। ফলে সব দর্শনীয় জায়গাতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হবে বলে লালবাজারের খবর। শহরের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে।
গঙ্গাবক্ষে প্রমোদভ্রমণে নৌকোর মাঝিদের অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে নিষেধ করা হয়েছে।
শুক্রবারই চিড়িয়াখানায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে আসল ভি়ড় শুরু হবে আজ সন্ধের পর থেকে। লালবাজারের কর্তাদের মতে, ফি বছরের মতো এ বারও বর্ষশেষের রাতে সব থেকে বেশি ভিড় টানতে পারে পার্ক স্ট্রিট এবং লাগোয়া মধ্য কলকাতার রেস্তোরাঁ-পানশালা পাড়া। তাই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই তল্লাটের উপরেই জোর দিচ্ছে পুলিশ।
বিভিন্ন এলাকা থেকে অফিসার-কর্মীদের পার্ক স্ট্রিট চত্বরে মোতায়েন করা হচ্ছে। শুধু মল্লিকবাজার থেকে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো পর্যন্ত অঞ্চলেই থাকবেন ৯০০ পুলিশকর্মী। ট্যাংরার চিনেপাড়া, ই এম বাইপাসেও পিকেট থাকবে। শহরের বিভিন্ন পার্ক-ক্লাব-হোটেলেও থাকবে বিশেষ নজরদারি। থাকবে টহলদার ভ্যানও।
লালবাজারের নির্দেশ, রাত ১২টার আগে যতক্ষণ সম্ভব পার্ক স্ট্রিট দিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। ভিড় পাতলা হতে শুরু করলেই ফের গা়ড়ি চলাচল শুরু হবে ওই রাস্তায়। কলকাতা পুলিশের এক ইনস্পেক্টর অবশ্য বলছেন, ‘‘ভিড়ের যা চেহারা হয়, তাতে রাত ১০টার পর থেকেই গাড়ি চালানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’’
লালবাজার জানিয়েছে, বর্ষশেষের রাতে শহরের রাস্তায় প্রায় সাড়ে চার হাজার পুলিশ থাকবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন দশ জন ডেপুটি কমিশনার।
সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমে থাকবেন উচ্চকর্তারা। পার্ক স্ট্রিট চত্বরে ১১টি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি হয়েছে। ব্যবহার করা হতে পারে ড্রোনও। ভিড়ে অনেক সময়েই পকেটমারি, কেপমারি হয়। তার জন্য সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনীর অফিসার-কর্মীরা ভিড়ে মিশে থাকবেন। নজর রাখা হবে অপরাধপ্রবণ এলাকাতেও। অলিগলিতে চলবে বাইকে টহলদারি। বিশেষ নজরদারি থাকছে জলপথে। তৈরি রাখা হচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, রাতের শহরে কোনও বেলেল্লাপনা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy