Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

যোধপুর পার্ক ডাকাতিতে নয়া চক্রের ইঙ্গিত

এক মাসের বেশি পেরোলেও ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয়নি কোনও অভিযুক্ত। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, ওই ডাকাতির ঘটনায় যোগ আছে উত্তরপূর্ব ভারতের কোনও ডাকাত চক্রের। যারা এখানে ডাকাতির পরে ওই এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছে। এ ব্যপারে উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে লালবাজার যোগাযোগ করছে।

তদন্ত: ডাকাতির পরে দোকানে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

তদন্ত: ডাকাতির পরে দোকানে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

যোধপুর পার্কের সোনার দোকানের ডাকাতির পিছনে কি তবে উত্তরপূর্ব ভারতের কোনও চক্রের যোগ রয়েছে?

এক মাসের বেশি পেরোলেও ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয়নি কোনও অভিযুক্ত। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, ওই ডাকাতির ঘটনায় যোগ আছে উত্তরপূর্ব ভারতের কোনও ডাকাত চক্রের। যারা এখানে ডাকাতির পরে ওই এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছে। এ ব্যপারে উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে লালবাজার যোগাযোগ করছে।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, গত ২৭ জুলাই দুপুরে যোধপুর পার্কের একটি সোনার দোকানে ওই ডাকাতি হয়েছিল। আড়াইটে নাগাদ প্রবল বৃষ্টির মধ্যে চার দুষ্কৃতী হানা দেয় সেখানে। চার যুবকের পরনেই ছিল কালো বর্ষাতি। নাক-মুখ ঢাকা ছিল বর্ষাতি এবং হেলমেটের আড়ালে। দোকানে ঢুকে রক্ষীর মাথায় বন্দুক চেপে ধরে এক দুষ্কৃতী। আর এক জন তার মাথায় বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। এর পরেই দোকানের ভিতরে ঢুকে বাকি দু’জন ব্যাগ থেকে বন্দুক বার করে। চার দুষ্কৃতীর এক জন সোনার দোকানের কর্মীদের বন্দুক দেখিয়ে দোকানের এক দিকে নিয়ে যায়। বাকিরা গয়নাগাঁটি ব্যাগে ভরে ক্যাশ থেকে টাকাও নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগের মধ্যে থেকে করাত, হাতুড়ি, ছেনি, স্ক্রু ড্রাইভার উদ্ধার করে। ঘটনার পরে এলাকার সিসিটিভি থেকে পুলিশ দুষ্কৃতীদের ছবি পায়। যাতে দেখা যায় দুষ্কৃতীদের মুখ মঙ্গোলীয় ধাঁচের।

তদন্তকারীরা জেনেছে, গত মে মাসে গুয়াহাটির একটি সোনার দোকানে একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় দুষ্কৃতীর সংখ্যা ছিল চার। দুষ্কৃতীদের কয়েক জনের মুখ মঙ্গোলীয় ধাঁচের। এ ছাড়াও গুয়াহাটির ওই সোনার দোকানে ডাকাতির সময়ে দুষ্কৃতীরা হাতুড়ি, ছেনি ব্যবহার করেছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, যোধপুর পার্কের দুষ্কৃতীদের চেহাড়াও একই ধাঁচের। পাশাপাশি দু’টি ঘটনাতেই হাতুড়ি, ছেনি উদ্ধার করা হয়েছে। দুষ্কৃতীরা ঘটনার পরে বাসে করে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছেছিল যে সময়ে তার কিছু পরেই উত্তরপূর্ব ভারতে যাওয়ার ট্রেন থাকে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার দাবি, খোঁজখবর নেওয়ার পরে দু’টি ঘটনার অনেক মিল বেরিয়েছে। কিন্তু ঘটনার কিনারা না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না দু’টিতে একই দল যুক্ত কি না।

অসম পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, গুয়াহাটির ডাকাতির ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হলেও তার কিনারা করা হয়নি। তাঁরা প্রতিবেশী রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন ওই ঘটনার কিনারা করার জন্য।

যোধপুর পার্কের ডাকাতির পরে সিসিটিভি দেখে লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ডাকাতির পরে দুষ্কৃতীরা যোধপুর পার্কের কাছ থেকে ২৩৪ রুটের একটি বেসরকারি বাসে উঠে প্রথমে গড়িয়াহাটে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পরে অন্য একটি বাসে চেপে বাইপাসের রুবি মোড় পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে হাওড়াগামী একটি বেসরকারি বাসে করে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছয় বিকেলে। লালবাজারের তদন্তকারীদের দাবি, হাওড়া স্টেশন ঢোকা পর্যন্ত সিসিটিভি-তে ওই দুষ্কৃতীদের দেখা গিয়েছে। হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পরে তাদের আর হদিস পাননি গোয়েন্দারা। এক জন দুষ্কৃতী অবশ্য ট্যাক্সি চেপে পালিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি।

লালবাজার সূত্রে খবর, বুধবার মাসিক ক্রাইম বৈঠকে পুলিশ কমিশনার ওই ঘটনার কিনারা করার জন্য তাঁর বাহিনীর অফিসার-কর্মীকে নিজস্ব সোর্স নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে বলেছেন। যোধপুর পার্কের ওই ঘটনার পাশাপাশি বেনিয়াপুকুরের একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় ডাকাতির কিনারা করতে পারেননি গোয়েন্দারা। পুলিশকর্মীদের অনুমান, তা মাথায় রেখেই পুলিশ কমিশনার ডাকাতির কিনারায় আরও জোর দিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jodhpur Park Robbery Case Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE