Advertisement
E-Paper

পুজোর পরেই কি মণ্ডপে ঢিলে নজরদারি

বলরাম দে নামে বছর তিরিশের ওই যুবকের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। জানা গিয়েছিল, মনসা পুজোর প্যান্ডেল খোলার কাজ করছিলেন বলরাম।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৭
বিপজ্জনক: অরবিন্দ সরণিতে মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। পাশেই বিদ্যুৎবাহী তারের জট। (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: অরবিন্দ সরণিতে মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। পাশেই বিদ্যুৎবাহী তারের জট। (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

বাঁশের কাঠামোর উপরে বসে দাউদাউ করে জ্বলছেন এক যবুক। কয়েক মুহূর্তেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ল পাশের প্যান্ডেলে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। শেষে বাঁশের কাঠামো থেকে নীচে পড়ে গেল ঝলসে যাওয়া যুবকের দেহ!

গত অগস্টে বাঁকুড়ার ইন্দপুরের এই ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বলরাম দে নামে বছর তিরিশের ওই যুবকের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। জানা গিয়েছিল, মনসা পুজোর প্যান্ডেল খোলার কাজ করছিলেন বলরাম। শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে বিদ্যুতের তার ধরে ফেলায় ঘটে বিপত্তি। মুহূর্তে ঝলসে যায় তরতাজা প্রাণ।

ওই ঘটনার মতো একাধিক ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেও শহর কলকাতার হুঁশ ফেরেনি। উৎসব শেষে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্যান্ডেল খোলার ধরন দেখলেই তা স্পষ্ট। কোথাও নিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই। মাথায় হেলমেট বা কোমরে দড়ি থাকা তো দূর, অন্য কারও সাহায্য ছাড়াই তিনতলা সমান উঁচু মণ্ডপের কাঠামোয় উঠে দ়ড়ি খোলার কাজ করছেন কর্মীরা। পাশ দিয়ে বিদ্যুৎবাহী তার গিয়েছে দেখেও হুঁশ নেই। কোথাও আবার মাঠের মাঝখানে মণ্ডপের দোতলা উঁচু কাঠামোয় উঠে দাঁড়িয়েছেন এক যুবক। তাঁর ঘাড়ের উপরে উঠেছেন আর এক জন। সেই অবস্থাতেই বিপজ্জনক ভাবে আরও উঁচু একটি বাঁশের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। পড়লে রক্ষা পাওয়া যাবে? উত্তর নেই।

আলিপুরের একটি পুজোয় এ বার হাতির আদলে কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। লম্বা মই পেতে সেই হাতির মাথা খুলতে উঠেছেন এক তরুণ। নামার সময়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়লেন তিনি। হাতির কানের দিকের একটি দড়ি খুলে ফেলায় ২০ ফুট উপর থেকে লাফ দিতে হল তাঁকে!

দ্বাদশীর রাতে অরবিন্দ সরণির ফুটপাত লাগোয়া মণ্ডপ খোলার কাজ করছিলেন এক যুবক। প্রতিমা বিসর্জনের পরেই পুলিশ বলে গিয়েছে দ্রুত মণ্ডপ খুলতে হবে। ফুটপাত আটকে রাখা যাবে না। তাই রাতের অন্ধকারেই প্যান্ডেলের ছাদে উঠেছেন তিনি। পাশেই রয়েছে বিদ্যুতের পোস্ট। তার সঙ্গে ঝুলছে বিদ্যুৎবাহী মোটা তারের জট। রয়েছে ট্রামের তারও। সামান্য নিয়ন্ত্রণ হারালেই তো বিপদ? নীচে নেমে আসার পরে যুবক বললেন, ‘‘দুর্গাপুজো তো তবু ভাল। কালীপুজোয় আরও খারাপ পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। আমাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কিছু হবে না।’’ এই বেপরোয়া ভাবকে সমর্থন না করলেও ওই পুজো কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘আমরাই বা কত দিক দেখব? রাস্তায় পুলিশ আছে, তাঁরা দেখুক!’’ কিন্তু কোনও বিপদ ঘটলে তো দায় তাঁদেরও? উত্তর নেই পুজো উদ্যোক্তার।

বহুতল এবং সৌধের সংস্কার পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থা জানাচ্ছে, সাধারণত উঁচু জায়গায় কাজ করতে হলে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হয়।

কর্মীর কোমরে দড়ি বেঁধে দিতে হয়। নিয়ন্ত্রণ হারালেও সে ক্ষেত্রে ভারসাম্য ঠিক থাকে। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পরে কাজ করা বাধ্যতামূলক। তবে পুজোর প্যান্ডেল খোলার সময়ে সে সব কিছুই দেখা যায় না। পুজোর আগে প্যান্ডেল তৈরির সময়ে পুলিশ এবং দমকল পরিদর্শনে যায়। তবে সেই পর্যন্তই! প্যান্ডেল খোলার সময়ে আর ‌কারও দেখা মেলে না। এ ব্যাপারে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম এখনও নেই। তবে এলাকা ভিত্তিক পুলিশি নজরদারি থাকেই। মণ্ডপ খোলার সময়েও পুলিশকর্মীরা টহল দেন। অপ্রীতিকর কিছু দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুজো উদ্যোক্তাদেরও আরও সতর্ক হতে হবে।’’ দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘পুজোর আগেই এ ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের সতর্ক করি আমরা।’’ তবে কি পুজোর পরের নজরদারির আর প্রয়োজন নেই? জগমোহন বলেন, ‘‘বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।’’

Pandal Construction Surveillance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy