Advertisement
E-Paper

শৌচালয়েই সন্তানের জন্ম দিল পুঁটি, পুলিশ নাম রাখল সংযোগ

কলকাতা পুরসভার গণশৌচাগারে নিজেই সন্তান প্রসব করেছেন শুনে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২৩
সন্তান কোলে পুঁটি দেবী। সোমবার, বাজেকদমতলা ঘাটে। নিজস্ব চিত্র

সন্তান কোলে পুঁটি দেবী। সোমবার, বাজেকদমতলা ঘাটে। নিজস্ব চিত্র

সোমবার বিকেল সওয়া পাঁচটা। বাজেকদমতলা ঘাটে কাপড়ে মুড়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া পুত্রসন্তানকে নিয়ে বসে ছিলেন বিহারের বাসিন্দা এক মহিলা। সাহায্য চাইছিলেন পথচলতি লোকজনের। কলকাতা পুরসভার গণশৌচাগারে নিজেই সন্তান প্রসব করেছেন শুনে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। তাঁদেরই মধ্যে এক জন ফোন করেন পুলিশে। তার পরে সেই মহিলাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায় উত্তর বন্দর থানার পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বিহারের নাহাটির আকবরপুরের বাসিন্দা ওই মহিলার নাম পুঁটি দেবী। স্বামী লখিন্দর মাঝি ইটভাটার কর্মী। ছাব্বিশ বছরের পুঁটি স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে প্রথম বার কলকাতায় এসেছিলেন। এ দিনই তাঁর বিহারে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বাজেকদমতলার সামনে থেকেই বিহারের বাস ছাড়ে। লখিন্দর স্ত্রীকে টিকিট কেটে বাসে বসিয়ে দিয়ে চলে যান।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা বাস থেকে নেমে শৌচাগারে যান। সেখানেই তাঁর প্রসব হয়ে যায়। প্রসবের সময়ে তিনি কারও সাহায্য চাননি। প্রসবের পরে নিজেই সন্তানকে কাপড়ে মুড়ে বাজেকদমতলা ঘাটে বসে লোকজনের কাছে সাহায্য চান। তাঁর কাছে মোবাইল ফোন ছিল না। পথচারীরা বাজেকদমতলার পাশে রিভার ট্র্যাফিকের দফতরে ফোন করেন। পরে সেখান থেকে উত্তর বন্দর থানায় খবর দেওয়া হয়। উত্তর বন্দর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পুঁটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। সঙ্গে ছিলেন মহিলা পুলিশকর্মীরাও।

সোমবার রাতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুঁটিকে ভর্তি করার পরে সেখানেই শিশুটির নাড়ি কাটা হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মা ও শিশুর শারীরিক অবস্থার উপরে নজর রাখছেন চিকিৎসকেরা। পুলিশ চেষ্টা করছে মহিলার সঙ্গে কথা বলে তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে।

পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, ওই মহিলা প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা। এখানকার ভাষা বোঝেন না। প্রথম বার কলকাতায় এসেছেন। কোনওক্রমে নিজের ঠিকানা নাহাটি এবং আকবরপুরটুকু বলতে পেরেছেন। স্বামীর ফোন নম্বরও জানেন না। যে কারণে তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমস্যা হচ্ছে।

তবে ওই মহিলার সদ্যোজাত সন্তানটির যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর রেখেছেন উত্তর বন্দর থানার মহিলা পুলিশকর্মীরা। হাসপাতালে শিশুটিকে মায়ের থেকে নিয়ে থানার মহিলা পুলিশকর্মীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ইতিমধ্যে কয়েক জন পুলিশকর্মী মিলে শিশুটির নামকরণও করে দিয়েছেন। কলকাতা পুলিশের একটি অ্যাপের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তার নাম রাখা হয়েছে ‘সংযোগ’।

এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘মহিলা এখানকার ভাষা বোঝেন না। তাঁর ভাষাও বুঝতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও পথচারীরা কেউ তাঁকে এড়িয়ে যাননি। আমরাও খবর পাওয়া মাত্র ছুটে গিয়েছি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে। অনেকের ক্ষেত্রেই সব সময়ে পরিস্থিতি এতটা অনুকূল হয় না। বাচ্চাটির ক্ষেত্রে সব ক’টি যোগাযোগই সময় মতো কাজ করেছে। ওর নাম তো সংযোগ হওয়াই উচিত।’’

Police Toilet New Born Baby
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy