Advertisement
E-Paper

নিষ্ঠাকে কুর্নিশ জানিয়ে বন্ধু পুলিশ

পুলিশ সূত্রে খবর, বহু বছর ধরে সততার সঙ্গে, একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে যাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে কলকাতা সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের তরফ থেকে বছর খানেক আগে করে দেওয়া হয়েছে এই কিয়স্ক।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০১
কিয়স্কে কাজে ব্যস্ত রামদাস। সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের সামনে। —নিজস্ব চিত্র।

কিয়স্কে কাজে ব্যস্ত রামদাস। সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের সামনে। —নিজস্ব চিত্র।

দূর থেকে দেখে মনে হয় বুঝি পুলিশ কিয়স্ক। ভাল করে দেখলে নজরে আসে, কলকাতা সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের ঠিক সামনে নীল-সাদা সেই কিয়স্কে লুঙ্গি-গেঞ্জি গায়ে বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে বসে এক মনে জুতো পালিশ করে চলেছেন এক ব্যক্তি। মুঙ্গেরের রামদাস মুচি, সবার কাছে তাঁর পরিচয় অবশ্য রামু নামেই।

কিন্তু কিয়স্কে বসে জুতো পালিশ কেন?

পুলিশ সূত্রে খবর, বহু বছর ধরে সততার সঙ্গে, একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে যাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে কলকাতা সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের তরফ থেকে বছর খানেক আগে করে দেওয়া হয়েছে এই কিয়স্ক। তিন দশক আগে, ভিটেমাটি ছেড়ে বছর তেরোর কিশোর রামদাস এ শহরে এসে কিছু দিন এ দিক ওদিক ঘোরেন। অবশেষে থিতু হন এই রবীন্দ্র সদন চত্বরে। এখানেই রয়ে গিয়েছেন চেহারায় বৃদ্ধ, ৪৫ বছরের রামদাস।

কেমন ছিল পুরনো এক্সাইড মোড়? এখন যেখানে সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের অফিস, সেখানে ছিল ট্রাম কোম্পানির অফিস। কোম্পানির ক্যান্টিনটা ছিল তার পাশেই। আঙুল তুলে পাশের বাড়িটা দেখিয়ে বলেন, ‘‘এই সৈনিক ভবন, তার পাশের তথ্য কেন্দ্র আর রবীন্দ্রসদন ছিল শুধু। আর ছিল ক্যালকাটা ক্লাব। নন্দন তৈরির কাজ চলছিল। প্রায় ফাঁকা, নিরিবিলি বলেই বেছে নিয়েছিলাম জায়গাটা।’’ কথার ফাঁকে ফাঁকে একের পর এক পথচলতি মানুষকে পথনির্দেশিকা দিয়ে চলেছেন রামদাস। বিড়বিড় করে বলেন— ‘‘রোজগার কম হত, তবু কোনও লোভের পথে পা বাড়াইনি। তাই শান্তি ছিল। বাবা মারা যাওয়ায় পড়াশোনাটা আর করা হয়নি।’’ বাড়ি ছেড়ে প্রথমে হাওড়া, পরে শিয়ালদহ স্টেশনে জুতো পালিশের চেষ্টা করেছিলেন রামদাস। কিন্তু ওখানে বড্ড ভিড় আর রাজনীতি, তাই ভয়েই পালিয়ে আসেন রামু।

পুলিশ দাদাদের জন্য এখন যে তাঁর সামান্য হলেও স্বচ্ছলতা এসেছে, তা জানাতে ভুললেন না কৃতজ্ঞ রামদাস মুচি। প্রতি মাসে সাউথ ট্র্যাফিক গার্ড থেকে তাঁর মাসোহারা মেলে ছ’হাজার টাকা। ময়দান থানা দেয় এক হাজার টাকা। কীসের জন্য? রামদাস বলে চলেন— ‘‘রোজ সকাল ছ’টায় ট্র্যাফিক অফিসে ঢুকে খাতা খুলে দেখে নিই, কার ডিউটি কখন? যাঁর আগে থাকে, তাঁর জুতোটা আগে পালিশ করে দিই। এর পরে সারা দিন ধরে বাবুরা যে যেমন বলেন। মাসের শেষে এ জন্যই মেলে টাকাটা।’’ কত বছর ধরে এই ব্যবস্থা? মাথা চুলকে রামদাসের জবাব, বোধ হয় বারো-তেরো বছর হল। দেড় হাজার টাকা দিয়ে শুরু।

সাত হাজার টাকার পুরোটাই রামদাস পাঠিয়ে দেন মুঙ্গেরে স্ত্রীর কাছে। ওই টাকার ভরসায় চলে সংসার আর ছোট ছেলের পড়াশোনা। নিজে পড়তে পারেননি, তাই খামতি রাখেননি ছেলের পড়াশোনায়। পটনার কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে সে। বড় ছেলে দর্জির কাজ করেন ভিন্ রাজ্যে। কাজের শেষে নিজে ফেরেন রাজাবাজারে, দৈনিক ৭০ টাকার ভাড়ার ঘরে।

রামদাসের পাশে এ ভাবে থাকা নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে নারাজ সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের ডিউটি অফিসার। বলে উঠলেন, ‘‘প্লিজ, এটা একেবারেই আনঅফিসিয়াল। ওঁর টাকার দরকার, আর আমাদের এখানে কাজ করার লোক দরকার। সৎ রামদাসকে তিন বছর ধরে দেখছি, ঝড়-জলেও ঠিক কাজে আসেন। দুই বড়বাবু-সহ ৩০ জন ট্র্যাফিক গার্ড রয়েছেন এখানে। রামদাসকে নিয়ে আমরা খুশি। হাজার ব্যস্ততায় এ দিকটা নিয়ে আর ভাবতে হয় না।’’ একগাল হেসে তখন সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে রামদাস।

South traffic guard Kolkata police কলকাতা সাউথ ট্রাফিক গার্ড
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy