Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ট্যাংরা

ছক কষেই হামলা, সন্দেহ পুলিশের

আচমকা গোলমাল নয় বরং ছক কষেই হামলা চালানো হয়েছিল ট্যাংরায়। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই সন্দেহ পুলিশের। তদন্তকারীরা বলছেন, ওই এলাকায় শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের চোরা স্রোত দীর্ঘ দিন ধরেই ছিল। বন্‌ধের দিন পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবে, এটা ধরে নিয়েই গোলমাল বাধাতে চেয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেই মতো অস্ত্র জোগাড় এবং কয়েক জন দুষ্কৃতীকে ভাড়া করাও হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৯
Share: Save:

আচমকা গোলমাল নয় বরং ছক কষেই হামলা চালানো হয়েছিল ট্যাংরায়। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই সন্দেহ পুলিশের। তদন্তকারীরা বলছেন, ওই এলাকায় শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের চোরা স্রোত দীর্ঘ দিন ধরেই ছিল। বন্‌ধের দিন পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবে, এটা ধরে নিয়েই গোলমাল বাধাতে চেয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেই মতো অস্ত্র জোগাড় এবং কয়েক জন দুষ্কৃতীকে ভাড়া করাও হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের।

কোন ভিত্তিতে এ কথা বলছে পুলিশ? ট্যাংরায় মঙ্গলবার প্রকাশ্যে গুলি-বোমাবাজির ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, বিবদমান দু’পক্ষই পুজোর আগে এলাকা দখলের ব্যাপারে একটা হেস্তনেস্ত করতে চাইছিল। তার উপরে সোমবার রাতে অলোক খাটুয়ার দলের হাতে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা প্রদীপ গুহের ঘনিষ্ঠ মনোজ হাজরা নিগৃহীত হন। তার পরেই প্রতিশোধ নিতে সক্রিয় হয় মনোজ ও প্রদীপের দলবল। বন্‌ধের দিন পুলিশ ব্যস্ত থাকবে ধরে নিয়েই গোলমালের ছক কষা হয় বলে অভিযোগ। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘হামলা চালাতে তপসিয়া, পার্ক সার্কাস, বেলেঘাটার কিছু দুষ্কৃতীকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ কথা জানতে পেরে
পাল্টা লোক জোগাড় করে অলোক খাটুয়ার দলবলও।’’

লালবাজারের একাংশের দাবি, শুধু বিরোধী পক্ষ নয়, থানার অফিসারদের উপরেও আক্রোশ ছিল স্থানীয় দুষ্কৃতীদের। কারণ, গত কয়েক মাস ধরে এলাকায় বিভিন্ন বেআইনি কাজে রাশ টানার চেষ্টা করছিলেন ট্যাংরা থানার অফিসারেরা। তাই হামলার ফাঁকে পুলিশকে ‘নিশানা’ করা হয়েছিল। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সে দিন দু’দল দুষ্কৃতীর মাঝে পড়ে যান ট্যাংরা থানার কর্মীরা। হাতেগোনা কয়েক জন কর্মী নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি।

তবে লালবাজারের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, এই গোলমালের খবর কেন আগে পেল না পুলিশ? তবে কি অপরাধীদের অন্দরে পুলিশের ‘সোর্স’ ঠিক মতো কাজ করেনি? পুলিশের একাংশ বলছেন, সর্বশেষ ক্রাইম কনফারেন্সে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ বলেছিলেন, এলাকায় নিজেদের ‘সোর্স’দের যেন নিয়ন্ত্রণে রাখেন অফিসারেরা। পুজোর আগে শহর থেকে দুষ্কৃতী ধরপাকড় ও বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর হওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিপি কেন সে দিন ধরপাকড়ে জোর দিতে বলেছিলেন, ট্যাংরার ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।’’

যদিও পুলিশের নিচুতলার অনেকের মতে, ট্যাংরার গোলমালের পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেট চক্রের দ্বন্দ্ব। শাসক দলের স্থানীয় দুই নেতার মদতেই যা চলে। সেই নেতাদের পিছনে রয়েছেন সাংসদ-বিধায়কের মতো প্রভাবশালীরাও। ফলে এই গোলমালের খবর আগে পেলেও পুলিশ কতটা ধরপাকড় করতে পারত, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুলিশের অন্দরেই।

পুলিশ সূত্রে দাবি, এই গোলমালে ধৃত ১৩ জনের মধ্যে প্রদীপ গোষ্ঠী এবং অলোক গোষ্ঠী উভয়ের সদস্যরা রয়েছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, প্রদীপ ও অলোক ঘটনার পর থেকেই এলাকাতেই রয়েছেন। তবুও তাঁদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পুলিশকর্তাদের যুক্তি, ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তবে গ্রেফতারের পরে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয় তাও দেখা হচ্ছে।

এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘ট্যাংরার গোলমালের পরেই কয়েক জন নেতার ফোন এসেছিল। কিন্তু ধরপাকড়ে প্রশাসনের শীর্ষস্তরের সবুজ সঙ্কেত থাকায় তাঁরা আর বেশি দূর এগোননি।’’

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, ওই দিন মিন্টু হাজরা, সুভাষ নামে দুই দুষ্কৃতী গুলি চালায় পুলিশকে লক্ষ্য করে। সেভেন এমএম পিস্তল থেকে গুলি চালানো হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police investigation Tangra shot lalbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE