Advertisement
E-Paper

মায়ের দেহ উদ্ধারে পুলিশ, ‘বন্দি’ মনোরোগী ছেলে

স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী থেকে পুলিশ কমিশনার— সকলেই প্রশাসনের মানবিকতার কথা বলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫১
বন্দি: অনির্বাণ বসুকে বাইরে থেকে খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন প্রতিবেশী। বুধবার পাইকপাড়ায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

বন্দি: অনির্বাণ বসুকে বাইরে থেকে খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন প্রতিবেশী। বুধবার পাইকপাড়ায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

অপরাধী ধরা প়ড়লে মানবাধিকারের কথা ভাবতে হয় পুলিশকে। কিন্তু মানসিক রোগীকে সেই মর্যাদা উর্দিধারীরা দেন কি না, সে প্রশ্ন তুলে দিল পাইকপা়ড়ার সরকারি আবাসন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে এক বৃদ্ধার দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর মানসিক রোগী ছেলেকে সেই ঘরেই তালাবন্ধ করে রেখেছিল টালা থানা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নাড়াচাড়া হতেই তড়িঘড়ি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে তাঁকে।

স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী থেকে পুলিশ কমিশনার— সকলেই প্রশাসনের মানবিকতার কথা বলেন। কিন্তু প্রশাসনের সর্বস্তরে সে বার্তা পৌঁছচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যদিও লালবাজারের গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গের দাবি, পুলিশ নয়, অনির্বাণ বসু নামে ওই ব্যক্তির মাসতুতো ভাই পার্থ শূর তালা লাগিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, ময়না-তদন্তে জানা গিয়েছে, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার বেলা ১১টা। পাইকপাড়ার সরকারি আবাসনের একটি বহুতলের একতলার ফ্ল্যাটের সদর দরজায় তালা বন্ধ। জানলার কাছে নজরে এল, খাটের উপরে হাঁটু মুড়ে শুয়ে মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। বাইরের কাউকে দেখলেই খাবার, জল চাইছেন। আবাসনের বাসিন্দারা জানান, অনির্বাণবাবুর বাবা শ্যামল বসু পেশায় চিত্র সাংবাদিক ছিলেন। বছর পনেরো আগে বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারান ছেলে। মঙ্গলবার ওই ফ্ল্যাট থেকে বৃদ্ধা মা মীরা বসুর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। দিন কয়েক আগে মায়ের মৃত্যু হলেও অনির্বাণবাবু তা কাউকে জানাননি। দুর্গন্ধ বেরোনোর পরে বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেন। দেহ উদ্ধারের পরে মানসিক রোগী ওই ব্যক্তিকে ঘরে তালা বন্ধ করে রেখে যাওয়া হয়েছিল। বাসিন্দাদের একাংশ আপত্তি করলেও টালা থানার পুলিশ তাতে কান দেয়নি বলে অভিযোগ।

তবে অনির্বাণবাবুকে আগলে রাখেন ওই আবাসনেরই কয়েক জন বাসিন্দা। দুপুরে ইন্দ্রনীল দত্তগুপ্ত নামে এক বাসিন্দা জানলার গরাদের ফাঁক দিয়ে পাউরুটি, কলা, জলের বোতল এগিয়ে দেন। সেই খাবার নিমেষে শেষ করে ফেলেন অনির্বাণবাবু। পরে আবাসনের এক রক্ষী ফের ডিম-পাউরুটি এবং জলের বোতল দিয়ে আসেন। এ সব দেখে মঞ্জুষা এষ নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এ ভাবে কি কোনও মানুষ থাকতে পারেন?’’

এই ঘটনা অনেকের মনেই রবিনসন স্ট্রিটের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। সেখানে পার্থ দে নামে এক যুবক দিদির মৃত্যুর পরে সৎকার না করে দেহ আগলে ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, দেবযানীর কঙ্কাল উদ্ধারের পরেই পার্থকে মানসিক চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পাইকপাড়ার অনির্বাণবাবুকে কেন এমন অমানবিক ভাবে আটকে রাখা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশেরই একাংশ বলছে, অসুস্থ মানুষকে এ ভাবে আটকে রাখা অমানবিকই শুধু নয়, বেআইনিও।

প্রথমে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, অনির্বাণবাবুর আত্মীয়েরা এসে যা করার করবেন। বিষয়টি নিয়ে খবর প্রচার হওয়ার পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়, কিছু নথিপত্র তৈরির জন্য দেরি হয়েছিল। এর পরেই তড়িঘড়ি টালা থানা থেকে দু’টি গাড়িতে চেপে পুলিশ অনির্বাণবাবুকে পাভলভ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

Deadbody Mental patient Paik Para পাইকপাড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy