Advertisement
E-Paper

পরিত্যক্ত শিশুকে ফেরাল রাতের থানা

রাতের অন্ধকারে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ট্যাক্সিচালক সুনীল রায়। প্রায়ই ট্যাক্সির পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার আওয়াজ আসছিল। তারই মাঝে হঠাৎ বাচ্চার কান্না। খালি ট্যাক্সিতে বাচ্চা কোথা থেকে এল?

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৬
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

রাতের অন্ধকারে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ট্যাক্সিচালক সুনীল রায়। প্রায়ই ট্যাক্সির পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার আওয়াজ আসছিল। তারই মাঝে হঠাৎ বাচ্চার কান্না। খালি ট্যাক্সিতে বাচ্চা কোথা থেকে এল? কেউ তো গাড়ির ভিতরে নেই। পিছনের সিটও খালি। ভয় পেয়ে গাড়ি থামিয়ে পিছনের সিট খুঁটিয়ে দেখতে যেতেই চক্ষু-চড়কগাছ। সেখানে শুয়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা!

খালি ট্যাক্সিতে বাচ্চা দেখে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল সুনীলবাবুর। কী করবেন বাচ্চাটিকে নিয়ে? সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন স্ত্রী বেলিকে। বেলি জানতে চান শেষ যাত্রী কারা ছিল। তখনই সুনীলবাবুর মনে পড়ে পাঁচ জনের কথা। তারকেশ্বর থেকে ফেরার পথে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আসার সময়ে শেওড়াফুলির কাছে কয়েক জন হাত দেখিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলেন। তিন জন বোরখা পড়া মহিলা আর দুই যুবক। ডানকুনি টোল প্লাজায় নামবেন শুনে সুনীলবাবু তাঁদের গাড়িতে উঠিয়েও নেন। কিন্তু ওই তিন মহিলার কারও কোলে বাচ্চা ছিল বলে মনে করতে পারেননি তিনি। স্বামীর কাছে সব শুনে বেলিদেবী বাচ্চাটিকে বালি থানায় জমা দিয়ে আসার পরামর্শ দেন।

সুনীলবাবু জানান, স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরে আর দেরি করেননি। শিশুটিকে পিছনের সিটের নীচ থেকে তুলে এনে নিজের পাশে শুইয়ে ট্যাক্সি ঘুরিয়ে রওনা হন বালি থানার দিকে। সেখানে গিয়ে সব কিছু জানান। কিন্তু রাতে অতটুকু শিশুকে থানায় দেখবে কে? তাই থানা শিশুটিকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়নি। সুনীলবাবুর মোবাইল নম্বর নিয়ে কর্তব্যরত অফিসার জানিয়ে দেন, কেউ বাচ্চার খোঁজ করলে সুনীলবাবুকে ডেকে পাঠাবেন। ততক্ষণ যেন সুনীলবাবুই বাচ্চাটিকে রাখেন। কারণ, রাতে থানায় ওইটুকু বাচ্চাকে রাখার কোনও ব্যবস্থা থাকে না।

কী করবেন ভেবে না পেয়ে ফের বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোরান সুনীলবাবু। বরাহনগরের কাছে এসে ঠিক করেন, বরাহনগর থানায় বাচ্চাটিকে জমা দিয়ে যাবেন। কিন্তু তারাও রাতে বাচ্চা জমা নিতে রাজি হয়নি। কিন্তু ফুটফুটে ওইটুকু বাচ্চাকে তো আর রাস্তায় ফেলে আসতে পারেন না! ফের স্ত্রীকে ফোন করে সব জানিয়ে শিশুটিকে নিয়ে রাত দু’টো নাগাদ ডানলপের নিরঞ্জন সেন লেনের টালির বাড়িতেই ফেরেন সুনীলবাবু।

দু’-আড়াই বছরের শিশুটি তখন খিদের জ্বালায় কাঁদছে। বেলিদেবী দুধ-বিস্কুট খাইয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কান্না থামে না। বেলিদেবী বলেন, ‘‘আমার সাত বছরের একটি ছেলে আছে। তাকে তো বড় করেছি। ওইটুকু বাচ্চাকে কাঁদতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। মায়ের কোল ওরা বোঝে। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। তাই কান্না থামাতে সারা রাত বাচ্চাটিকে কখনও কোলে নিয়ে ঘুরেছি, কখনও ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেছি।’’ এ ভাবেই সারা রাত কাটে। সকাল হতেই প্রতিবেশীদের সব বলেন রায় দম্পতি। তাঁরাও বরাহনগর থানাকে ফোনে বাচ্চাটিকে জমা নিতে অনুরোধ করেন।

সকালে বরাহনগর থানা বাচ্চাটিকে জমা নিয়েই পাঠিয়ে দেয় উত্তর ২৪ পরগনা শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে। পুলিশ জানায়, বছর দুই-আড়াইয়ের ছেলেটির আপাত দৃষ্টিতে কোনও রকম অসুস্থতা ছিল না। তবে ওই পাঁচ যাত্রীর বিবরণ সুনীলবাবুর থেকে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশকে সুনীলবাবু জানিয়েছেন, তিনি এক ব্যক্তিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। খালি গাড়ি নিয়ে ফেরার পথে ওই পাঁচ জন ছাড়া আর কাউকে তোলেননি ট্যাক্সিতে। ফলে ওঁদের কাছেই বাচ্চাটি ছিল বলে সুনীলবাবুর প্রাথমিক ধারণা। তিনি বলেন, ‘‘তিন মহিলা বোরখা পরেছিলেন। বোরখার আড়ালে বাচ্চা থাকলে দেখা সম্ভব নয়। হয়তো বাচ্চাটি তখন ঘুমোচ্ছিল বলেই টের পাওয়া যায়নি।’’ কিন্তু প্রশ্ন, থানা কেন বাচ্চাটির হেফাজত নিল না?

ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রে খবর, ওইটুকু বাচ্চাকে রাতে সামলানোর জন্য কোনও মহিলা কর্মী থানায় ছিলেন না। ফলে চালককেই বলা হয়েছিল, রাতে বাড়িতে নিয়ে যেতে। কারণ ওঁর বাড়িতে স্ত্রী ও ছোট ছেলে রয়েছে। ফলে রাতে বাচ্চাটি যত্ন পাবে ভেবেই সুনীলবাবুর হাতে রাতের জন্য বাচ্চাটিকে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু চালক তো বাড়িতে নিয়ে যেতে না-ও রাজি হতে পারতেন।

এ বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকে কোনও সদুত্তর না মিললেও এক শিশু সুরক্ষা আধিকারিক জানিয়েছেন, কেউ কোনও পরিত্যক্ত বাচ্চা পেলে তাকে পুলিশ নিজের হেফাজতে নিতে বাধ্য। পুলিশ বাচ্চাকে নিয়ে রাতেই সংশ্লিষ্ট জেলার শিশু কল্যাণ সমিতিকে ফোন করে বাচ্চাকে কোথায় রাখা হবে, তার নির্দেশ দেয়। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘সাধারণত হাসপাতালেই পাঠানো হয়। নিয়মানুযায়ী আগে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করার প্রয়োজন। পরের দিন সমিতি নিজের হাতে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়।

police abandoned child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy