Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবাধে সরোবরের ভিতরে ঢুকল জনতা, আটকাল না পুলিশ, মুখে কুলুপ প্রশাসনের

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে শনি ও রবিবার মিলিয়ে সরোবরে আগত পুণ্যার্থীদের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার বলে মনে করা হচ্ছে।

অবাধ: পুলিশের সামনেই রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকছেন ছট-পুণ্যার্থীরা। রবিবার ভোরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অবাধ: পুলিশের সামনেই রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকছেন ছট-পুণ্যার্থীরা। রবিবার ভোরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ভাঙা নিয়ে যত শোরগোলই হোক, রবিবারও রবীন্দ্র সরোবরের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। পুলিশের সামনে দিয়েই এ দিন ছটপুজোর জনতা অবাধে সরোবরের ভিতরে ঢুকেছে। বাজিও পোড়ানো হয়েছে। কেন কোনও কড়াকড়ি করা হল না, তা নিয়ে শনিবারের মতোই মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ-প্রশাসন।

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে শনি ও রবিবার মিলিয়ে সরোবরে আগত পুণ্যার্থীদের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার বলে মনে করা হচ্ছে। আগের দিন গেটের তালা ভেঙে সরোবরে ঢুকেছিল জনতা। এ দিন খাতায়-কলমে রবীন্দ্র সরোবরের সমস্ত গেট বেলা ১২টার পরে খোলার কথা থাকলেও সাত সকালেই সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল। আলো ফোটার আগে থেকেই পিলপিল করে প্রবেশ করেন পুণ্যার্থীরা। অনেকেই ম্যাটাডরে রংবেরঙের বাতিস্তম্ভ লাগিয়ে মাইকে তারস্বরে গান চালিয়ে গেটের সামনে নামেন। জলাশয়ের ধারে ছিল থিকথিকে ভিড়। একাধিক জায়গায় যজ্ঞ হয়েছে। তার ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে গিয়েছে। সবই হয়েছে পুলিশের চোখের সামনে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায় জলের মধ্যে ভাসমান ফুল, মালা, প্লাস্টিকের প্যাকেট। কোথাও কোথাও জলের মধ্যে ঢালা হয়েছে দুধ এবং ঘি। অন্য বার সরোবরের জলে ৫০ মিটারের মধ্যে ঘাট তৈরি করে সেখানে বেড়া দেওয়া থাকে। ওই বেড়ার মধ্যে নেমে স্নান করা ছাড়া ফুল রাখার জন্যও আলাদা ঘেরাটোপ করা থাকে। এ বারে কিছু না থাকায় পুণ্যার্থীদের অনেকেই জলাশয়ের মধ্যে অনেকটা ভিতর অবধি গিয়ে স্নান সেরেছেন। কেএমডিএ-র এক কর্মী জানান, এ বারে ছট না হওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকায় আলাদা করে আর কোনও ব্যবস্থা হয়নি।

আরও পড়ুন: খাবারে ছত্রাক, ছ’লক্ষ টাকা দিতে নির্দেশ

এক প্রাতর্ভ্রমণকারী সমরেশ ঘোষ বলেন, ‘‘শনিবার না হয় ঘটনাস্থলে কোনও পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। এ দিন সকালে তো পুলিশের সামনে দিয়েই সকলে ভিতরে ঢুকেছেন। অথচ পুণ্যার্থীরা যাতে ঢুকতে না পারেন, সেটা দেখাই পুলিশের দায়িত্ব ছিল!’’ কেন কাউকে আটকানো হল না? প্রশ্ন করা হলে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ কেউ মন্তব্য করতে চাননি। ধর্মেন্দ্র সিংহ নামে বেহালার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবারই এখানে আসি। এ বারে প্রথমে ঠিক করেছিলাম, অন্য ঘাটে যাব। কিন্তু শনিবার দুপুরে শুনলাম সরোবরেই সবাই পুজো করছে। তাই আমিও আমার পরিবার নিয়ে এসেছি।’’ রাষ্ট্রীয় বিহারি সমাজের সভাপতি মণিপ্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে সংগঠনের তরফে থেকে সরোবরে পুজো না করতে অনুরোধ করেছিলাম। কেউ যদি তার পরেও যায়, কী করতে পারি?’’

আরও পড়ুন: অরক্ষিতই রইল রবীন্দ্র সরোবর

সরোবর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ বারে ভিড় বেশি ছিল টালিগঞ্জ সংলগ্ন সরোবর অঞ্চলে। ঢাকুরিয়া অঞ্চলে ভিড় তুলনায় অনেকটাই কম। সরোবরের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, যে গেটগুলিতে তালা ভাঙা হয়েছিল, সেগুলি দিয়েই এ দিন মূলত পুণ্যার্থীরা ঢুকেছেন। ফলে গেট বন্ধ রাখার অর্থ ছিল না। তাঁর আরও দাবি, পুণ্যার্থীদের ঢুকতে দেখে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশও এ দিন সকাল থেকেই বাকি গেট খুলে দেবার ব্যাপারে সরোবর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

তবে পুজোর পরেই বিজেপি কর্মীরা সরোবর চত্বর পরিষ্কার করা শুরু করেন। বাইরে থেকে আনা প্লাস্টিক প্যাকেট এবং আতসবাজিও বাজেয়াপ্ত করেন। বেলা ন’টা নাগাদ কেএমডিএ এবং কলকাতা পুরসভার কর্মীরা মাঠে নামেন। বেলা বারোটার মধ্যে চত্বর পুরো পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের বক্তব্য। তবে পরিবেশ কর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘যত রকম ভাবে দূষণ হতে পারে, হয়েছে। এর প্রতিবাদে ফের পরিবেশ আদালতে মামলা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chhath Puja Environment Rabindra Sarobar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE