Advertisement
E-Paper

পথভোলা কিশোরকে ফেরাল পুলিশ

শুক্রবার বিকেলে বেলেঘাটা ট্র্যাফিক গার্ডের হোমগার্ড সুরজিৎ রায় চিংড়িঘাটা মোড়ে ওই কিশোরকে উদ্ধারের পরে শুধু কথা বলেই দায় এ়ড়িয়ে যাননি। সুভাষ সিংহরায় নামে ওই কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পৌঁছন বেলেঘাটা ট্র্যাফিক গার্ডে।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:১৭
সুভাষ সিংহরায়

সুভাষ সিংহরায়

ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে বার বার বিপজ্জনক ভাবে সাইকেল নিয়ে পারাপার করছে এক কিশোর। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর চোখে পড়ে যায় দৃশ্যটি। বছর বারোর ওই কিশোরকে ডেকে রাস্তার এক পাশে নিয়ে আসেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পারেন, সাইকেল চালাতে চালাতে পথ হারিয়ে ফেলেছে সে। আর বাড়ির রাস্তা চিনতে পারছে না, এমনকী কোথায় বাড়ি তা-ও বলতে পারছে না।

শুক্রবার বিকেলে বেলেঘাটা ট্র্যাফিক গার্ডের হোমগার্ড সুরজিৎ রায় চিংড়িঘাটা মোড়ে ওই কিশোরকে উদ্ধারের পরে শুধু কথা বলেই দায় এ়ড়িয়ে যাননি। সুভাষ সিংহরায় নামে ওই কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পৌঁছন বেলেঘাটা ট্র্যাফিক গার্ডে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি এবং অফিসারদের পাশাপাশি বেলেঘাটা থানার তৎপরতায় নিখোঁজ হওয়ার এক দিনের মধ্যেই শনিবার নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছে সুভাষ।

পুলিশ জানিয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সুভাষ টিটাগড় থানা এলাকার গণেশপুরের বাসিন্দা। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এক নিকট আত্মীয়ের কাছে থাকে সে। শুক্রবার সকালে দিদির বাড়ি যাওয়ার জন্য বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ে সে। সাইকেল চালাতে চালাতে পৌঁছে যায় চিংড়িঘাটা। কিন্তু দিদির বাড়ির রাস্তা চিনতে না পারায় সেখানেই বার বার রাস্তা পারাপার করতে থাকে।

পুলিশ জানায়, ওই হোমগার্ড চিংড়িঘাটা মোড়ের অফিসে সুভাষকে নিয়ে যাওয়ার পরে গার্ডের ওসি পঙ্কজ ঘটক, সার্জেন্ট রণদীপ বন্দোপাধ্যায় এবং দীপক রায় তার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু সুভাষ নিজের বা দিদির বাড়ির ঠিকানা বলতে পারছিল না। সে একটি হনুমান মন্দির এবং বড় মাঠের কথা বলেছিল। সেই মতো সুভাষকে শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সল্টলেক, ফুলবাগান, বেলেঘাটা এবং মানিকতলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোথাও তার বাড়ি খুঁজে না পাওয়ায় রাতে নিয়ম মতো তাকে বেলেঘাটা থানার হাতে দিয়ে আসা হয়।

লালবাজার সূত্রে খবর, থানার অফিসারদের বাড়ির পাশে একটি রেল লাইনের কথাও জানায় সুভাষ। সেই রাতেই থানার ওসি চন্দন রায় মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিশ সুভাষকে নিয়ে বেলেঘাটা সংলগ্ন রেল লাইনের বিভিন্ন জায়গায় যায়। পরে কলকাতা লাগোয়া রেল লাইন সংলগ্ন সব থানায় সুভাষের সবিস্তার তথ্য জানানো হয়। শনিবার সকালে টিটাগড় থানা জানায়, তাদের এলাকায় শুক্রবার রাতে সুভাষ নামে এক কিশোরের নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের হয়েছে। খবর পৌঁছয় সুভাষের মাসতুতো দাদা বিষ্ণু সিংহরায়ের কাছে। বিষ্ণু ও আরও এক আত্মীয় শনিবার বেলেঘাটা থানায় এসে সুভাষকে ফিরিয়ে নিয়ে যান।

কী ভাবে ওই কিশোরের পরিবারের সন্ধান পেলেন তদন্তকারীরা?

পুলিশ জানায়, সুভাষ প্রথমে না বললেও পরে জানায়, বিধাননগরে দিদির বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল সে। কিন্তু রাস্তা হারিয়ে ফেলে। সুভাষের দাদা বিষ্ণু বলেন, ‘‘ভাই খুব দুষ্টু। তাই মাসি (সুভাষের মা) আমার কাছে রাখতে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়েই বেরিয়ে যায়। পুলিশ কর্মীরা মানবিকতা না দেখালে ভাইকে হয়তো পেতাম না।’’

প্রায় এক দিন যে ‘পুলিশকাকুদের’ সঙ্গে সুভাষ ছিল যাওয়ার আগে তাঁদের সে বলে গিয়েছে, আর দুষ্টুমি করবে না। দাদার হাত ধরে সুভাষ যখন বাড়ির পথে পা বাড়াল, এক পুলিশ অফিসার বলে উঠলেন, ‘‘ছোট্ট ছেলেটা বাড়ি ফিরে গেল এটাই আমাদের পরম পাওয়া।’’

Missing Boy Police Traffic Guard Home Guard
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy