Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পুরভোট ২০১৫

স্ত্রীর মঞ্চে নেই স্বামী, বড় নেতা ছোট ভাইকে ডাকেননি দাদা

তৃণমূলের ঘর ভেঙেছে বিজেপি, নাকি বিজেপির ঘর ভাঙছে তৃণমূল? জল্পনার শুরু সেই লোকসভা ভোট থেকে। একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে গত লোকসভায় বীরভূম কেন্দ্রে দলের প্রার্থী করে মুখ্যমন্ত্রীকে টেক্কা দিয়েছিল বিজেপি। তাতে অবশ্য তৃণমূলকে জব্দ করা যায়নি। ভোটে পরাজিত হয় বিজেপি।

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শান্তনু সিংহ।

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শান্তনু সিংহ।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২৪
Share: Save:

তৃণমূলের ঘর ভেঙেছে বিজেপি, নাকি বিজেপির ঘর ভাঙছে তৃণমূল? জল্পনার শুরু সেই লোকসভা ভোট থেকে। একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে গত লোকসভায় বীরভূম কেন্দ্রে দলের প্রার্থী করে মুখ্যমন্ত্রীকে টেক্কা দিয়েছিল বিজেপি। তাতে অবশ্য তৃণমূলকে জব্দ করা যায়নি। ভোটে পরাজিত হয় বিজেপি।

এ বার পাল্টা চাল তৃণমূলেরও। বিজেপির ‘ঘরের বৌ’ জয়-জায়া অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। অনন্যা দাঁড়িয়েছেন যাদবপুর বিধানসভা এলাকায় ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে। বহুদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই রয়েছেন অনন্যা। তবু বিজেপি পরিবারের হেঁশেলে তৃণমূল ঢুকে যাওয়ায় অস্বস্তিতে বিজেপিও। এমনকী ওই ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী দেবিকা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, তাঁর হয়ে এক বারও প্রচারে আসেননি জয়। এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা জানান, জয়কে এখানে প্রচারে আসতে অনুরোধ করা হলেও তিনি রাজি হননি। স্বভাবতই বামেদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ওই ওয়ার্ডে এই ‘ত্রিমুখী’ লড়াইয়ের দিকে নজর পড়েছে শহরবাসীর।

দৃষ্টি রয়েছে টালিগঞ্জের লায়েলকা, শ্রীকলোনী এলাকা জুড়ে থাকা পুরসভার ৯৯ ওয়ার্ডের দিকেও। সেখানে বিজেপি-র প্রার্থী শান্তনু সিংহ। পারিবারিক পরিচয়— বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহের দাদা। আরএসএসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত শান্তনু পেশায় আইনজীবী, সুবক্তাও। ১৯৯১ সালে কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী ছিলেন।

ভাই বিজেপির রাজ্য সভাপতি হলেও দাদার ওয়ার্ডে এক বারও প্রচারে যাননি। শান্তনুর কথায়, ‘‘ও তো অনেক কাজে ব্যস্ত। এখানে দরকার হয়নি বলেই ডাকা হয়নি।’’ এক সময়ে এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা ছিলেন রাহুল, জানান শান্তনুবাবু।

ভোটের লড়াইয়ে কতটা প্রস্তুত বিজেপি? লড়াইয়ের ময়দানে কিছুটা পিছিয়ে ঠিকই, তবে ত্রিফলা কেলেঙ্কারি এবং লেক মল ইস্যুতে সরব শান্তনুবাবুরা। জনসভা, পথসভায় তা ফলাও করে বলেও বেড়াচ্ছেন বিজেপির বক্তারা। বেলতলা ক্লাবের কাছে একটি নিমীর্য়মাণ বাড়ি দেখিয়ে শান্তনুর অভিযোগ, ‘‘এর মতোই আরও কিছু বেআইনি বাড়ি হয়েছে, হচ্ছে ওয়ার্ড জুড়ে।’’ সেই অভিযোগে ইন্ধন জুগিয়েছেন নির্দল প্রার্থী নির্মলকান্তি দাস। স্থানীয় ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা নির্মলবাবুকে দল এ বার প্রার্থী করেনি। সেই ক্ষোভে তাই তিনি তৃণমূলের প্রার্থীকে হারাতে মরিয়া।

ভোটের দিন সন্ত্রাসের আশঙ্কায় ভুগছেন শান্তনু। ‘‘আমাদের হোর্ডিং, ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলছে তৃণমূলের লোকেরা। তবে প্রতিবাদ করছি না। তা হলে ঝামেলা বাড়বে। মানুষের বিবেক জাগ্রত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি,’’ বলছেন তিনি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘মন্ত্রী-সান্ত্রী নিয়ে ওঁরা এলাকা ঘুরছেন। কিন্তু এখনও পানীয় দলের সমস্যা মেটাতে পারেননি।’’

পানীয় জলের অভাব অস্বস্তিতে ফেলছে ১০৯ ওয়ার্ডের প্রার্থী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবিকা মুখোপাধ্যায়দেরও। দীর্ঘকাল ধরে সিপিএমের দখলে থাকা ওই ওয়ার্ড প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘হোম ওয়ার্ড’। পুরভোটের প্রচারের শুরু থেকেই অশান্ত হয়ে উঠেছে এলাকা। প্রায় প্রতিদিনই সন্ত্রাসের অভিযোগ জমা পড়ছে থানায়।

দিন কয়েক আগে ওই ওয়ার্ডে প্রচারে গিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং মণীশ গুপ্তকে। কেন তাঁরা জল পাচ্ছেন না, জানতে চান বাসিন্দারা। আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অবশ্য তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আমরা তো এখানে ছিলাম না। এক বার সুযোগ দিন। সমস্যা মেটাব।’’ আর দেবিকা বলেন, ‘‘বিজেপির সংগঠনের অভাব রয়েছে ঠিকই। জিতব কি না জানি না। খাস কলকাতার একটা এলাকার বাসিন্দারা জলের অভাবে দিন কাটাচ্ছে। ওঁদের জন্য কিছু করা দরকার পুর-বোর্ডের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE