Advertisement
E-Paper

বাণিজ্যিক বরফের ব্যাক্টিরিয়া ডাকতে পারে ক্যানসার

ছোট বয়সে টাইফয়েড হয়েছিল। ডাক্তার জানিয়েছিলেন, রাস্তার আইসক্রিম খাওয়ার জন্যই সম্ভবত এমন হয়েছে। কারণ ওই আইসক্রিমের বরফের মান ভাল নয়। 

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
বরফ-বিপদ: রাস্তার পাশে ‘আইস গোলা’ খাওয়ার ভিড় স্কুলপড়ুয়াদের। সঙ্গে রয়েছেন তাদের অভিভাবকেরাও। ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বরফ-বিপদ: রাস্তার পাশে ‘আইস গোলা’ খাওয়ার ভিড় স্কুলপড়ুয়াদের। সঙ্গে রয়েছেন তাদের অভিভাবকেরাও। ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ছোট বয়সে টাইফয়েড হয়েছিল। ডাক্তার জানিয়েছিলেন, রাস্তার আইসক্রিম খাওয়ার জন্যই সম্ভবত এমন হয়েছে। কারণ ওই আইসক্রিমের বরফের মান ভাল নয়।

এমনই ঘটনার কথা বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড বায়ো-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক উৎপল রায়চৌধুরী।

সময় পাল্টেছে। কিন্তু সেই বরফের ‘বিপদ’ থেকে এখনও বেরোনো যায়নি। কারণ রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া শরবত, ঠান্ডা পানীয়ে যে বরফ অহরহ মেশানো হয়, তার উৎসেই বিপদ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বরফ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস) যে জলে তৈরি হয়, সেই জলই পানযোগ্য নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সেখানেই লুকিয়ে হাজারো রোগের উৎস। সেই বরফ যদি পরীক্ষা করা যায়, তা হলে তার মধ্যে বহু ব্যাক্টিরিয়ার উপস্থিতি ধরা পড়বে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

বাণিজ্যিক বরফের ব্যবহার রুখতে কলকাতা পুরসভা অভিযান চালাচ্ছে বটে। যেখানে যেখানে অভিযান চলছে, শহরের সেই সব জায়গায় এই বরফের বদলে খাওয়ার বরফের দেখা মিলছে। কিন্তু, নজরদারির আড়ালে বাণিজ্যিক বরফেরই রমরমা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এই প্রশ্নও তুলেছেন, কেন সব সময়ে নজরদারির প্রয়োজন হবে? ক্রেতারাও কেন সচেতন হবেন না যে তাঁরা কী বরফ খাচ্ছেন বা বাচ্চাদের হাতে কী বরফমিশ্রিত পানীয় তুলে দিচ্ছেন? ফলে গরম পড়তে না পড়তেই ফের চর্চার কেন্দ্রে বাণিজ্যিক বরফের ব্যবহার।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাণিজ্যিক বরফ যে জল দিয়ে তৈরি, তা পানযোগ্য নয়। তাই সেই বরফ পানীয়ের সঙ্গে খেলে সাময়িক ও দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। জন্ডিস, টাইফয়েড, পেটের রোগ তো আছেই। আশঙ্কা রয়েছে নার্ভের অসুখ, কোলন ক্যানসারেরও। আরও একটি গুরুতর বিষয় রয়েছে। মাছ, মাংস বা শবদেহ সংরক্ষণে যে বরফ ব্যবহার করা হয়, সেগুলি অনেক সময়ে বাড়তি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী তা ফেলে দেন। ওই বরফের একটা অংশ বাজারে চলে আসে। উৎপলবাবুর কথায়, ‘‘যে পদ্ধতিতে এই বরফ বাজারে আসে, তা নিয়েও সংশয় আছে। যে জলে তৈরি হয় এই বরফ, সেটাই তো পানযোগ্য নয়। ব্যাক্টিরিয়ার উপস্থিতি মারাত্মক। যদি ব্যাক্টিরিয়া গোনা যায়, তা হলে বোঝা যাবে কী বরফ খাই আমরা!’’

মাছ, মাংস সংরক্ষণের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার জন্য বরফে ফর্মালিনও মেশানো হয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তা ছাড়া জল পরিশোধন করা হয় না বলে তাতে ভারী ধাতু, আর্সেনিকের উপস্থিতিও থাকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড বায়ো-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রশান্তকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই বরফ যে ভাবে সরাসরি শরীরে যায়, তাতে সমূহ বিপদ। যে সব উৎসেচক হজমে সাহায্য করে, তাতে গোলমাল দেখা দেয়। শুধু বদহজম বা পেট খারাপই নয়, লিভার নষ্ট হওয়া থেকে কোলন ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে আমাদেরই সচেতন

হওয়া প্রয়োজন।’’

কলকাতা পুরসভার কর্তারাও জানাচ্ছেন, মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে শুধু অভিযান চালিয়ে বাণিজ্যিক বরফের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘কয়েক লক্ষ লিফলেট ছাপানো হয়েছে। হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। সবই মানুষকে সচেতন করার জন্য। কিন্তু তার পরেও যদি জেনেশুনে কেউ এই বরফ খান, কী করতে পারি আমরা? এটা তো ঠিক যে, সব জায়গায় আমাদের পক্ষে নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না।’’

খড়্গপুর আইআইটি-র এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুশান্ত দাস বলছেন, ‘‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাঁদের কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বরফের ব্যবহার ভীষণ ক্ষতিকর।

এখনই সচেতন না হলে বিপদ এড়ানো যাবে না।’’

বিপদ এড়ানো যাচ্ছেও না। কারণ, উৎসেই যে বিপদ!

Disease Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy