E-Paper

বকলমে স্বাস্থ্যে ‘নিয়ন্ত্রণ’, পোস্টার শ্যামাপদর নামে

বিরোধীদের মতো প্রকাশ্যে না হলেও তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদের অনেকেরই নিশানায় রয়েছে ওই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’। অভিযোগ, তার পুরো নিয়ন্ত্রণই রয়েছে শ্যামাপদর হাতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১০
An image of Health Centre

স্বাস্থ্য দফতর। —ফাইল চিত্র।

তিনিই নাকি স্বাস্থ্য দফতরের ‘শেষ’ কথা। যিনি প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের নির্দেশকেও জাদুবলে বদলে দিতে পারেন!

রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসনে এই ‘তিনি’ই এখন সব থেকে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে। তিনি হলেন, বেসরকারি প্র্যাক্টিস করা অস্থি চিকিৎসক শ্যামাপদ দাস। তাঁকে উদ্দেশ্য করেই বুধবার রীতিমতো ছবি দিয়ে পোস্টার সাঁটা হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের মূল প্রবেশদ্বারে। বদলি, পোস্টিং থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন ‘অনৈতিক’ কাজের নেপথ্যে বিশেষ ক্ষমতাসীন এক ‘লবি’ সক্রিয় বলেই অভিযোগ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের। বিরোধীদের মতো প্রকাশ্যে না হলেও তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদের অনেকেরই নিশানায় রয়েছে ওই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’। অভিযোগ, তার পুরো নিয়ন্ত্রণই রয়েছে শ্যামাপদর হাতে। কারণ, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ দিনের পারিবারিক চিকিৎসক। আর সেই ‘সুযোগ’কে কাজে লাগিয়েই ওই চিকিৎসক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বকলমে পুরো সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ।

এ দিন এই পোস্টার বিতর্কের মাঝে আরও জল্পনা বাড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে করা সাংসদ-চিকিৎসক শান্তনু সেনের একটি পোস্ট। যেখানে ‘‘জীবনে যদি বার বার চোখ নয়, শুধু কান দিয়ে দেখে, একতরফা ভাবে শুধু এক জনের কথা শুনে কেউ সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে ভুল সিদ্ধান্ত হতে বাধ্য’’— এমন বিভিন্ন কথা তিনি লিখেছেন। চিকিৎসক মহলের একাংশের মতে, শ্যামাপদর কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথাই তুলে ধরতে চেয়েছেন শান্তনু। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘আমি ধর্মপ্রাণ মানুষ। মিশনের ছাত্র। নিজের জীবনের উপলব্ধির কথা বলেছি। আমার সঙ্গে যাঁরা প্রতিনিয়ত নিঃস্বার্থে থাকেন, তাঁরা যদি আমার কারণে দুঃখ পান,তা হলে সেটি আমার পক্ষে ভাল নয়।’’

স্বাস্থ্য শিবিরের অধিকাংশের মতে, শ্যামাপদর হস্তক্ষেপেই সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে সন্দীপ ঘোষের পুনরায় ফিরে আসা এবং রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান থেকে শান্তনুকে সরিয়ে ফের বিধায়ক-চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়কে আনার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এ ছাড়াও, এক সরকারি হাসপাতালের শীর্ষ কর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার জল্পনাকে ঘিরেই এ বার প্রকাশ্যে আক্রমণ শুরু হয়েছে। আবার, রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা পদে উত্তরবঙ্গ লবির ঘনিষ্ঠ কাউকে বসানোর পরিকল্পনাতেই সেটি শ্যামাপদ আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ।

এ দিন যে পোস্টার স্বাস্থ্য ভবনে সাঁটা হয়েছে, তাতে মূলত বোঝানো হয়েছে শ্যামাপদ এমনই অসীম ক্ষমতাধারী এক জন, যাঁর ইচ্ছায় পুরো সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। তাই মনের মতো পোস্টিং, এক রাতে বদলি, বছর বছর এক জায়গায় থাকতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে বুধবার শ্যামাপদ বলেন, ‘‘আমি তো সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বড় কর্তা নই। ম্যাডাম (মুখ্যমন্ত্রী)-এর ডাক্তার আমি। তাই সকলে ভাবছেন আমি সব করছি। মাঝেমধ্যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) জিজ্ঞাসা করেন, এটা ঠিক হবে তো ডাক্তারবাবু? তাতে ঠিক হলে হ্যাঁ বলি, না হলে না। কিন্তু নিজে থেকে গাইড করি না।’’ পোস্টারের বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘লোকে খরচ করে পোস্টার ছাপিয়ে নিজের প্রচার করেন। আমারটা এমনিই হচ্ছে। লোকেরা চিনছেন।’’ তবে এমন পোস্টারে সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য প্রশাসন ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানিয়ে বদলি দুর্নীতিতে যুক্তদের শাস্তির দাবি জানান সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Swasthya Bhawan Orthopedic health centre

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy