Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Power Outrage

বাড়তি চাপেই কি বিদ্যুতের এতটা বিভ্রাট, সতর্ক হতে আবেদন

হরিদেবপুরে মঙ্গলবার সকালেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় মহাত্মা গান্ধী রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে আসেন তৃণমূল সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী।

power plant.

গত শুক্রবার থেকেই শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-বিপর্যয় শুরু হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৭
Share: Save:

ঠিক গরমের মতোই যেন মাটি কামড়ে পড়ে আছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। দহনজ্বালা থেকে রেহাই পেতে বিদ্যুতের ব্যবহার যত বাড়ছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। যার ফলে গত কয়েক দিন ধরে অসহনীয় এক অবস্থায় রয়েছেন শহর ও শহরতলির বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলবে। যা শুনে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তা হলে কি তাপপ্রবাহ না কমলে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটও কমবে না?

গত শুক্রবার থেকেই শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-বিপর্যয় শুরু হয়েছে। সোমবার রাত থেকে হরিদেবপুরের ডাকঘর লাগোয়া এলাকায় দফায় দফায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের জেরে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রবল দুর্ভোগে পড়েন। রবিবার একই অবস্থা হয়েছিল বেলেঘাটার বারোয়ারিতলা, রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র রোড এলাকায়।

হরিদেবপুরে মঙ্গলবার সকালেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় মহাত্মা গান্ধী রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে আসেন তৃণমূল সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী। তাঁর আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। রবিবার বেলেঘাটার বারোয়ারিতলায় অবরোধ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের প্রশ্ন, গরমে তাপমাত্রা বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদা যে বেড়ে যাবে, তা কি সিইএসসি-র অজানা? তা হলে পরিস্থিতি সামলানোর প্রস্তুতি কেন থাকবে না তাদের? যদিও সিইএসসি-র বক্তব্য, অতিরিক্ত গরমে একসঙ্গে একাধিক পাখা, এসি চালানোর ফলেই এই বিপত্তি ঘটছে। এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘মঙ্গলবার সিইএসসি এলাকায় ২৫০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। যা সর্বকালীন রেকর্ড। সোমবার তা ছিল ২৩৬৬ মেগাওয়াট। আমাদের ভান্ডারে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও কোনও ত্রুটি বা বিদ্যুতের ঘাটতি নেই।’’

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এখনও পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানে কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু, কোথাও কোথাও নথিভুক্ত চাহিদার চেয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ টানা হচ্ছে বেআইনি ভাবে। যেমন, কোনও বাড়িতে এসি-র জন্য যতটা বিদ্যুতের চাহিদা নথিভুক্ত রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি এসি চলে। অথবা, ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলেও সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে বাড়তি চাহিদার কথা জানানো হয়নি। সেই তথ্য বণ্টন সংস্থার কাছে না থাকায় সংশ্লিষ্ট ট্রান্সফর্মার বা সাব-স্টেশন থেকে সেখানে আসা ফিডার লাইনের উপরে বাড়তি চাপ পড়ে। কোনও ট্রান্সফর্মারের যা ক্ষমতা, তার ১২ শতাংশের বেশি চাহিদা তৈরি হলেই ট্রান্সফর্মার বা ফিডার লাইন ‘ট্রিপ’ করতে পারে। বাড়তি চাহিদার তথ্য আগাম থাকলে সেই অনুযায়ী পরিকাঠামো উন্নত করা যায়। সেই জন্য সিইএসসি-র আবেদন, বিপর্যয় এড়াতে নাগরিকেরা যেন বুঝেশুনে বিদ্যুৎ খরচ করেন।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, সাধারণ ভাবে বিদ্যুতের সর্বাধিক চাহিদা ওঠে রাত ১১টা নাগাদ। সোমবার রাতে ওই সময়ে বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ৮৮৭০ মেগাওয়াট, যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। তাদের এলাকায় মার্চ থেকেই বোরো চাষের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকে। গরমে চাহিদা আরও বেড়েছে। গত এপ্রিলের এই সময়ের চেয়ে এ বার নথিভুক্ত চাহিদাই বেড়েছে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তবে, জোগানে কোনও ঘাটতি নেই। তবু, অভিযোগ এলেই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে ২৬০০টি ভ্রাম্যমাণ দল টহল দিচ্ছে।

এ দিন রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে, সোমবার যোধপুর পার্ক, হরিদেবপুর, বেলঘরিয়া ও দক্ষিণেশ্বরে ওভারলোডিংয়ের ফলে ট্রান্সফর্মার পুড়ে গিয়ে ও যান্ত্রিক গোলমালে সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। এ দিন সিইএসসি-র শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও দফতরের সচিব শান্তনু বসু। বৈঠকে মন্ত্রী সিইএসসি-কে বেশ কিছু নির্দেশ দেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে সোমবার থেকে বিদ্যুৎ ভবনে চালু হয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। নম্বরগুলি হল: ৮৯০০৭৯৩৫০৩ ও ৮৯০০৭৯৩৫০৪।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার প্রাক্তন কর্তা অনির্বাণ গুহ বলেন, ‘‘বিদ্যুতের চাহিদা বণ্টন সংস্থাকে জানানোর ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব দেখা যায়। সংস্থার সঙ্গে যতটা বিদ্যুৎ নেওয়ার চুক্তি রয়েছে, তার চেয়ে বেশি নিলে ট্রান্সফর্মার বসে যায় বা পুড়ে যায়। তারও গলে যায়। ওভারলোডিং হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখা দরকার বণ্টন সংস্থাগুলিরও। এর জন্য ট্রান্সফর্মারে মিটার বসানোর কথা। সাধারণ ভাবে কোনও ট্রান্সফর্মারের ক্ষমতার ৭০ শতাংশ ‘লোড’ হয়ে গেলে বাড়তি চাপ এড়ানোর জন্য সেটির ক্ষমতাও বাড়ানোর কথা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Power Outrage Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE