২০ এপ্রিল ২০২৪
কোনও সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকার এবং জনতা, উভয়পক্ষেরই সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
economy

ভার্চুয়াল আলোচনা চক্রে প্রশ্নোত্তরের ভিড়ে উঠে এল বাংলার হালফিলের পরিস্থিতির কথা

কোনও সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকার এবং জনতা, উভয়পক্ষেরই সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ১৬:১৩
Share: Save:

সম্প্রতি এহসাস উইমেন কলকাতা, শ্রী সিমেন্ট এবং আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি ভার্চুয়াল আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছিল প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন। সেশনটির নাম ছিল 'টেট-এ-টি'। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন মাননীয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কোভিড পরিস্থিতির কারণে অনলাইনেই আয়োজন করা হয় সেশনটি। আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিআর-এর সভাপতি তথা রাজ্যসভার এমপি বিনয় প্রভাকর সহস্রবুদ্ধ, এবং প্রবাদপ্রতিম লেখক ও অর্থনিতীবিদ সঞ্জীব সান্যাল। সেশনটিতে মূল আলোচনার বিষয় ছিল - এই কোভিড পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কেমন কাটছে শিল্পীদের জীবন? কেমন আছেন তাঁদের পরিবার। এঁনাদের পাশাপাশি আলোচনা চক্র জুড়ে উপস্থিত ছিলেন শহরের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও।

সঞ্জীব সান্যাল তাঁর বক্তব্যে প্রথমেই বাংলার টেরেকোটা মন্দিরগুলির জীর্ণ দশা সকলের সামনে তুলে ধরেন। সীতারামন বলেন, এই ধরনের শিল্পকে বাঁচাতে প্রথমেই এগুলির ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজন। এর পাশাপাশি প্রয়োজন সরকারি অর্থসাহায্যের। মাননীয় মন্ত্রীর মতে, শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার কারণে বাংলার এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ভুগছে। বাংলায় সঠিক মানুষের প্রয়োজন যাঁরা এগুলিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে পারবে। অবশ্যই এর মৌলিকতা বজায় রেখে। অন্যদিকে সঞ্জীব সান্যালের বক্তব্যে উঠে আসে ভারতীয় ভাষাগুলির ক্রমহ্রাসমান সাহিত্যকর্মের দিকটি। তিনি বলেন, বাংলার সমৃদ্ধ সাহিত্যের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও,বর্তমানে স্থানীয় ভাষায় সাহিত্য নেই বললেই চলে। অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা সাহিত্যেও প্রকাশক সংস্থাগুলির সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। গোটা বিষয়টিকে আরও উন্নত করতে আধুনিক যুগের অডিও সংস্করণ কিংবা কিনডেল-এর মতো প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন। এছাড়াও এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদও মানুষের আগ্রহ বাড়াতে পারে।

এছাড়াও বাংলার শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, এবং চিকিৎসার বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন সীতারামন। তামিলনাড়ুর সীতারামন বরাবরই বাংলাকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে স্বীকার করেছেন। চলতি সেশনেই তিনি মনে করছিলেন কী ভাবে ছোটবেলায় মা তাঁকে তামিল ভাষায় অনুবাদ করা বাংলার গল্পগুলি পড়ে শোনাতেন। অন্যদিকে শিল্পী বিক্রম ঘোষ এবং উষা উত্থুপের গলায় উঠে এসেছিল বর্তমান সময়কার শিল্পীদের কথা। বয়সের ভারে বা অতিমারি পরিস্থিতিতে যাদের পারফর্ম করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের কথা। এই শিল্পীদের মধ্যে মূলত রয়েছেন টেকনিশিয়ানরা, যাঁদের জীবন দৈনিক মজুরির উপরেই নির্ভরশীল। প্রায় বিগত এক বছর ধরে কোভিডের কারণে এঁনাদের কোনও কাজ নেই। উপার্জন বন্ধ। সীতারামন এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জানান, এই সেক্টরটি সম্পূর্ণভাবে অসংগঠিত। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এই বিষয়টি সাংস্কৃতিক মন্ত্রালয়ের কাছে নিজে দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছে দেবেন। এছাড়াও তিনি শিল্পীদেরকে সংঘবদ্ধ ভাবে এমন কোনও পরিকল্পণা পেশ করার পরামর্শ দেন যা শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বদের পক্ষে লাভজনক হবে।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ডঃ প্রণব দাশগুপ্ত আলেচনা চক্রে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তোলেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল,"অর্থ এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল খেলাধুলা। এই কোভিড পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সরকার কী ভাবে খেলাধুলার বিষয়টি নিয়ে উৎসাহ বাড়াতে পারে?" উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, ক্রীড়া মন্ত্রী কিরণ রিজ্জু ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে। প্রখ্যাত আর্ট কিউরেটর নন্দিতা পাল চৌধুরির প্রশ্ন ছিল, "সরকারে অর্থনিতীর নকশা কী কোনও ভাবে সাংস্কৃতিক নকশার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে?" উত্তরে বেশ ইতিবাচক মনোভাবই ছিল মাননীয়া অর্থমন্ত্রীর।

শিক্ষাবিদ তথা সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল জন বাগুল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেন - এই সময়ে পড়াশুনার একমাত্র উপায় অনলাইন এডুকেশন। সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য লার্নিং ডিভাইস বা ইন্টারনেটকে আরও সস্তা করতে, মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে কি কোনও পদক্ষেপ করছে সরকার? উত্তরে সীতারামন জানান, সরকার অনলাইন এডুকেশনের গুরুত্ব বেশ ভালভাবেই বোঝে। আর সেই কারণেই সর্বোপরি শিক্ষাকে সাশ্রয়ী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

চলচ্চিত্র ও নাট্যজগতের ব্যক্তিত্বরাও এই আলোচনা চক্রে অংশ নিয়ে ছিলেন। থিয়েটার ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র মিত্র বিভিন্ন সাংস্কৃ্তিক সংগঠনকে সাহায্যের জন্য সরকারের কাছে অনুদান বাড়ানোর অবেদন জানান। চিত্র পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরি সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থা এনএফডিসির বর্তমান অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এক সময় বহু উচ্চমানের সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছিল এই সংস্থা। সীতারামন জানান, গোটা বিনোদন জগত একটি উত্তরণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে মানুষ বিভিন্ন উপায় বেছে নিয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ডিটিএইচ ইত্যাদির ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে।

সহস্রবুদ্ধ সেশনের সমাপ্তি ভাষণে বলেন, কোনও সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকার এবং জনতা, উভয়পক্ষেরই সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আইসিসিআর তার বিদেশের কেন্দ্রগুলিতে বাংলার ক্লাস শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আসতে চলেছে যেখানে সমস্ত ধরণের সাংস্কৃতিক পারফরমেন্স দেখানো হবে।

প্যানেলিস্ট, বিশিষ্ট অতিথি এবং দর্শক-শ্রোতাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এই সুন্দর আলোচনাচক্রের সমাপ্তি করেন এহসাস উইমেন অব কলকাতা, মলিকা বর্মা। এই সেশনের এক্সক্লুসিভ মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

টেট-এ-টি সেশন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

economy Bengali Culture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE