Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Prisoners

সীমান্ত থেকে প্রেমিকাকে ফোনই ধরিয়ে দিল বন্দিকে

গত ৩১ মে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে পালানো, প্রেসিডেন্সি জেলের বন্দি সাজিদের কাহিনিতে রয়েছে বহু চমক।

প্রতীকী চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ ও শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

বান্ধবীকে খুনের অভিযোগে জেল খাটছিল সে। একই অভিযোগে তার স্ত্রীও জেলে। তবে জেল হেফাজত থেকে পালিয়ে নিজের ‘প্রকৃত ভালবাসা’র কাছেই ছুটে গিয়েছিল বিচারাধীন বন্দি মহম্মদ সাজিদ ওরফে রোহিত। কিন্তু ফেরার সাজিদকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেন তার সেই দ্বিতীয় বান্ধবী তথা পিসতুতো বোন। তখন পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ পালানোর চেষ্টা করেছিল সে।
কিন্তু মন পড়ে ছিল কলকাতায় প্রেমিকার কাছেই। তাই বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে ফোন করেছিল প্রেমিকাকে। কিন্তু সাজিদের কপালই মন্দ! ঠিক সেই সময়েই সামনে বসিয়ে সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ। ফলে ফোনের সূত্রে পেট্রাপোল সীমান্তে পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় সাজিদ।
গত ৩১ মে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে পালানো, প্রেসিডেন্সি জেলের বন্দি সাজিদের কাহিনিতে রয়েছে বহু চমক। এসএসকেএম থেকে ফেরার হওয়ার পরে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ। আর তার সূত্র ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা সীমান্তে বসে দু’দেশের মধ্যে বেআইনি ভাবে মানুষ পাচার চক্রের দুই পান্ডাও ধরা পড়েছে পুলিশের জালে।
বান্ধবীকে খুনের অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে ধরা পড়েছিল একবালপুরের বাসিন্দা সাজিদ। অভিযোগ, সেই কাজে সাজিদের সঙ্গী ছিল তার স্ত্রী। সে-ও এখন জেলে। বান্ধবীর মৃত্যুর কিছু দিন আগে এক দুর্ঘটনায় সাজিদের ডান পা জখম হয়েছিল। পায়ে প্লেট বসাতে হয়। জেলে থাকাকালীন সেখানেই সংক্রমণ শুরু হয়। এর জন্যই মাঝেমধ্যে তাকে এসএসকেএমে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল। কিন্তু ৩১ মে সেই হাসপাতাল চত্বর থেকেই কারারক্ষীর চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিল সে।
হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে জানা যায়, সেখান থেকে পালিয়ে সাজিদ প্রথমে ভবানীপুর গাঁজা পার্কের কাছ থেকে একটি ট্যাক্সিতে ওঠে। সেই ট্যাক্সির নম্বর ধরে পুলিশ ট্যাক্সিচালকের খোঁজ শুরু করলে জানা যায়, সে দিন ট্যাক্সিতে উঠে চালকের মোবাইল থেকে দু’টি ফোন করেছিল সাজিদ। ফোনে কথা হয়ে গেলে নম্বর দু’টি কললিস্ট থেকে মুছেও দেয় সে। এর পরে ৭০০ টাকার জায়গায় এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আক্রা স্টেশনে ট্যাক্সি থেকে নেমে যায় সে। পুলিশের অনুমান, পালানোর সুযোগ থাকতে পারে বুঝে সাজিদ সঙ্গে টাকাও রেখেছিল।
ট্যাক্সিচালকের মোবাইল থেকে যে দু’টি নম্বরে সাজিদ ফোন করেছিল, তা উদ্ধার করে পুলিশ। তার মধ্যে একটি নম্বর তার প্রেমিকার, অপরটি এক বন্ধুর। সাজিদের খবর পেতে ওই দু’জনের উপরে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। এর পরে সেই প্রেমিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের দিনই বাগদা থেকে তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। বাগদা পৌঁছে পুলিশ দেখে, বাচ্চু নামে এক যুবকের মোবাইল থেকে ওই দিন ফোন করেছিল সাজিদ।
এর পরে বাচ্চু ও তার সঙ্গী উত্তমকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, বাংলাদেশিরা বেআইনি ভাবে ভারতে ঢুকলে তাঁদের ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া এবং এ পার থেকে কাউকে বেআইনি ভাবে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজ করে তারা।
প্রেমিকার থেকে সাহায্য না পেয়ে কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিটে নুরুলের সঙ্গে দেখা করেছিল সাজিদ। জেলে থাকার সময়ে নুরুলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তার। নুরুলের সূত্র ধরেই সীমান্ত পার করতে বাচ্চুর কাছে পৌঁছেছিল সাজিদ। ইতিমধ্যে সাজিদের খোঁজে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বিএসএফের সঙ্গে
যোগাযোগ শুরু করে ভবানীপুর থানা। এমন সময়েই বাংলাদেশ পালানোর পথে ধরা পড়ে যায় সাজিদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prisoners arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE