Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
International Kolkata Book Fair 2024

বইমেলার মঞ্চে আসর মাতালেন বন্দিরা

রাজ্য মহিলা কমিশনের উদ্যোগে রবিবার বইমেলায় তাদের স্টলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি রিনা, রোমা, স্বপন, কুসুম, তনিমারা।

An image of Dance

বইমেলায় নৃত্য পরিবেশন বন্দিদের। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:২০
Share: Save:

‘কত দিন দেখা হয়নি।’

শীতের বিকেলে কবীর সুমনের গানের একটি লাইন একটু অন্য ভাবে সত্যি হয়ে গেল বইমেলায়। প্রায় তিন বছর পরে হারিয়ে যাওয়া মুখগুলিকে বইমেলায় দেখে চমকে উঠলেন রিনা। পরিবারের একটি বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে চোখ চিকচিক করে ওঠে তাঁর। আত্মীয়দের বললেন, ‘‘কত দিন পরে তোমাদের দেখলাম! আমায় তো ১০ বছর থাকতে হবে। ৩ বছর হয়েছে।’’

রাজ্য মহিলা কমিশনের উদ্যোগে রবিবার বইমেলায় তাদের স্টলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি রিনা, রোমা, স্বপন, কুসুম, তনিমারা। তাঁদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কথা বলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই যখন অনুষ্ঠানের তোড়জোড় চলছে, তখন দেখা গেল কমিশনের স্টলের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছলছলে চোখে কথা বলছেন রিনা। পাশে হাত ধরে দাঁড়িয়ে স্বামী মেঘল দাস। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে থাকেন রিনার আত্মীয়েরা। মেঘল জানান, একটি খুনের মামলায় রিনার ১০ বছরের জেল হয়েছে। পেশায় ঠিকাশ্রমিক মেঘল বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে বর্ধমানে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসি। গরিব মানুষ, বউয়ের জন্য ভাল করে মামলা লড়তে পারিনি। আমার বউকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ তিন বছর সংশোধনাগারে থেকে নাচ শিখে রিনার অনুষ্ঠান করতে যাওয়া দেখে খুশি মেঘলও। বইমেলায় নাচের দলের সদস্য হয়ে রিনার আসার খবর পেয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চলে এসেছিলেন তাঁর মাসি ও আত্মীয়েরা। নিয়ম মেনেই রিনা ও অন্যান্য সাত বন্দিকে চোখে চোখে রাখছিলেন কারা দফতর ও পুলিশ আধিকারিকেরা। তার মধ্যেই রিনা বলেন, ‘‘তোমাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে ভাবতেই পারিনি।’’

এক কারা আধিকারিক জানান, ওই দলটি গত দু’মাসে চারটি অনুষ্ঠান করেছে। রিনা ছাড়া দলের বাকি সদস্যেরা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘বন্দিরা সংশোধনাগারের ভিতর থেকে ভিডিয়ো কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। আবার এই ধরনের অনুষ্ঠানে তাঁরা যখন প্যারোলে সংশোধনাগারের বাইরে যান, তখন পরিবারের লোকজন এসে কথা বলেন। ওঁরা খুব খুশি হন বাড়ির লোকজনকে দেখে। তবে আমরাও সতর্ক থাকি।’’

মহিলা কমিশনের তরফে এ দিনের অনুষ্ঠান নিয়ে আগাম প্রচার হওয়ায় এ দিন বিকেলে তাদের স্টলের সামনে ভিড় জমে যায়। এক দর্শকের কথায়, ‘‘বন্দিদের অনুষ্ঠানের কথা শুনেছি। একটা সিনেমাও হয়েছিল। কিন্তু কখনও সামনে থেকে এ ভাবে ওঁদের অনুষ্ঠান দেখিনি। আমরা তো বন্দিদের সম্বন্ধে ধারণা করি সিনেমা দেখে বা বই পড়ে। তাতে তাঁদের বিশেষ ধরনের পোশাক থাকে। এখানে কত সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে ওঁরা নাচ-গান করছেন, দেখে ভাল লাগল।’’

অনুষ্ঠানে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অন্যদের সামনে মঞ্চে আসর মাতিয়ে দিলেন বন্দিরা। কখনও লোকগানের তালে পা মেলালেন, কখনও মাইক হাতে পড়লেন স্বরচিত কবিতা। বিশেষত স্বপন শিকদার নামে এক বন্দি তাঁর লেখা ‘মন্দির-মসজিদ’ নামে একটি কবিতা পড়ে দর্শক-শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়িয়ে নিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE