Advertisement
E-Paper

ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসছে ‘শারদীয়’ কেপমার

‘পকেটমার’ বলতেই ছেঁড়া ময়লা পোশাক, ক্ষয়াটে চেহারার ছবিটা ইদানীং আর খাটছে না। বরং কারও কারও গায়ে চাপানো ঝকঝকে জিন্‌স, টি শার্ট। টেরিকাটা চুলের বাহার! এমনকী খোঁজ মিলছে কয়েকজন সুবেশা তন্বীরও।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০১
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

‘পকেটমার’ বলতেই ছেঁড়া ময়লা পোশাক, ক্ষয়াটে চেহারার ছবিটা ইদানীং আর খাটছে না। বরং কারও কারও গায়ে চাপানো ঝকঝকে জিন্‌স, টি শার্ট। টেরিকাটা চুলের বাহার! এমনকী খোঁজ মিলছে কয়েকজন সুবেশা তন্বীরও।

ভিড়ে ঠাসা বাসে-ট্রেনে শিকার ধরতে জুড়ি নেই তাদের। কখন কার গা ঘেঁষে দাঁড়াতে হবে, মোক্ষম সময়ে কখন চোখের পলকে পকেট বা ব্যাগ কেটে লুঠের মাল সরাতে হবে, সমস্তই নখদর্পণে! এমনকী তারা সরিয়ে ফেলতে পারে আস্ত একটি ব্যাগও। ‘শিকার’ ঘুণাক্ষরে টের পাবেন না কখন পকেটের সর্বস্ব, সাধের স্মার্টফোন বা সদ্য কেনা পুজোর শার্ট-শাড়ি খুইয়ে বসেছেন। পুজোর জ্বরে বুঁদ হওয়া শহর আপাতত ছয়লাপ এই মরসুমি অতিথির ভিড়ে।

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা-রাজমহল, অন্ধ্রের শ্রীকাকুলাম বা তামিলনাডুর তিরুচিরাপল্লি, কোয়মবত্তূর— দেশ জুড়ে ছড়িয়ে এই হাতসাফাই গ্যাং-এর ঠিকানা। কেউ কেউ আবার রীতিমতো সচ্ছল। রীতিমতো বিমানে উড়ে আসে কলকাতায়। পুজো এগিয়ে এলেই অবধারিত এ শহরে হানা দেবে তারা। দিন কয়েক আগে এমনই একটি গ্যাং-এর হদিস পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। মহারাষ্ট্রের তিনপাহাড়ের দলটি মুম্বই থেকে উড়ানে এসে এ শহরে ঘাঁটি গেড়েছিল বলে জেনেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, এই চোর-চক্রের শহরে আবির্ভাব হয় উৎসবের মেজাজ একটু ঘন হতেই। শপিং মল, ফুটপাথে কেনাকাটার ধূম পড়তেই তক্কে তক্কে থাকে তারা। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের জমানায় নগদ টাকা হাতে রাখার চল কম। তবু পুজোয় কেনাকাটার তাগিদে কিছুটা অন্যথাও দেখা যায়। ফলে মফসস্‌ল থেকে আসা ট্রেন বা বাসে ঠিক তৈরি থাকে এই শিকারির দল।’’ পুলিশের পরিভাষায় এর নাম কেপমারি চক্র। ইন্টারনেটের যুগে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি বা সাইবার প্রতারণার রমরমা বাড়লেও পুজোর আবহে এখনও মালুম হয় সাবেক ‘কেপমারি শিল্পের’ কেরামতি। স্থানীয় ও ভিন্ রাজ্যের কেপমার মিলে সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায়।

পুলিশ জানিয়েছে, সাধারণত শিয়ালদহ, নিউ মার্কেটের নানা হোটেলে ডেরা বাঁধে এই কীর্তিমানেরা। ঘুরে বেড়ায় ভিড়ে ঠাসা বাজার, স্টেশন-চত্বর বা বাসস্ট্যান্ডে। কেউ কেউ ধরা পড়লেও সবটা নির্মূল করা যে মুখের কথা নয়, মানছে পুলিশই।

গত শুক্রবারই কেপমার-চক্রের নড়াচড়ার আভাস মিলেছিল ২২১ নম্বর বাস রুটে। মল্লিকবাজার থেকে শিয়ালদহ যাচ্ছিলেন এক দল কলেজছাত্রী। বাসে কয়েক পা এগোতেই দেখেন, টাকার ব্যাগ হাপিশ। ট্রেনে বর্ধমানে আত্মীয়ের বাড়ি পুজোর জামাকাপড় দিতে গিয়ে কাঁদো-কাঁদো দশা গড়িয়াহাটের সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। রেলপুলিশের কাছে জানান, ব্যাগে কয়েক হাজার টাকা ছিল। ডান হাতে জামাকাপড়ের ব্যাগ, টাকার ব্যাগটা কষে বগলদাবা করেই ট্রেনে ওঠেন তিনি। তাতে ছিল মোবাইলও। কখন সব খোয়া গিয়েছে বোঝেননি সুদেষ্ণাদেবী। এক যাত্রীর কাছে ১০ টাকা ধার নিয়ে শেষে বাড়ি ফেরেন তিনি।

এই কুকীর্তি রুখতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ? লালবাজারের এক কর্তা ও শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলপুলিশের কর্তারা একই সুরে কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, পুলিশের সোর্স সক্রিয় থাকলেও যাত্রীদের সাবধানতারও মার নেই। পুলিশি নিদান, খোয়া যাওয়া টাকা-মোবাইল পরে উদ্ধার হতে পারে। তবে অঘটন ঘটার আগে সতর্কতার বিকল্প নেই।

Passenger
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy