Advertisement
১০ ডিসেম্বর ২০২৪

টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে গ্রেফতার প্রযোজক শ্রীকান্ত

রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেফতার করল সিবিআই।

গ্রেফতারের পরে। নিজস্ব চিত্র

গ্রেফতারের পরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেফতার করল সিবিআই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে শ্রীকান্তের দফতরে হানা দেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সেখানে শ্রীকান্তকে আটক করে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই গ্রেফতার করা হয়ে তাঁকে। এই সংক্রান্ত মূল মামলাটি যে হেতু ভুবনেশ্বরে দায়ের করা হয়েছে, তাই আজ, শুক্রবার শ্রীকান্তকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাবে সিবিআই। সেখানে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হবে তাঁকে।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় এ পর্যন্ত কলকাতা থেকে যত জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই, তাঁদের সকলকেই নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে ‘সন্তুষ্ট’ না হয়ে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এই প্রথম, কারও অফিসে হানা দিয়ে তাঁকে সেখান থেকে তুলে এনে গ্রেফতার করা হল।

আরও পড়ুন: মারধরে অভিযুক্তদের ধরতে ‘ঢিলেমি’ কেন

শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, ৭০টি সিনেমা বানিয়ে দেবেন বলে তিনি গৌতমের কাছ থেকে ২৪ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। সিনেমা বানাননি। টাকাও ফেরত দেননি। সিবিআইয়ের দাবি, এই টাকা রোজ ভ্যালির আমানতকারীদের। পরে সেই টাকা দিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি কিনেছিলেন। গৌতম জেলে থাকাকালীন তাঁকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ কী? • রোজ ভ্যালির থেকে ২৪ কোটি টাকা নেন ৭০টি ছবি তৈরির জন্য। ছবি না হলেও টাকা ফেরত দেননি • রোজ ভ্যালির থেকে পাওয়া টাকায় মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কিনেছিলেন • বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থাকে বাধ্য করেন মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কিনতে

বছর কয়েক আগে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট শ্রীকান্তকে ডেকে জেরা করেছিল। সিবিআই সূত্রের খবর, গত দু’মাস ধরে নোটিস দিয়ে বারবার ডাকা হচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু তিনি আসেননি। তাই এ দিন সকালে দক্ষিণ কলকাতার কসবার কাছে একটি শপিং মলের সামনে চলে যান সিবিআই গোয়েন্দারা। ওই মলের ১৯তলায় শ্রীকান্তের অফিস। সকাল দশটা নাগাদ শ্রীকান্ত গাড়ি থেকে নামামাত্র তাঁকে ঘিরে ধরেন সিবিআই অফিসারেরা। তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে যেতে বলা হয়। জানানো হয়, অন্যথায় গ্রেফতার করা হবে তাঁকে। সময় চান শ্রীকান্ত। তাঁর সঙ্গেই তাঁর অফিসে যান গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: সকালের বিমানেই ভুবনেশ্বর নিয়ে যাওয়া হবে শ্রীকান্ত মোহতাকে

সিবিআই সূত্রের দাবি, এর পরে শ্রীকান্তের অফিস থেকে কেউ পুলিশের কোনও এক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চলে আসে কলকাতা পুলিশের একটি দল। তারা বলে, শ্রীকান্তকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে। এই সময় কিছু বহিরাগত যুবকও জড়ো হন শপিং মলের সামনে। তাঁদের কেউ কেউ শ্রীকান্তের অফিসের সামনেও চলে আসেন।

এই পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা সরাসরি রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে ফোন করেন। বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই এই তদন্ত চলছে এবং সিবিআইয়ের কাজে এ ভাবে পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে তা তাঁরা সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে বাধ্য হবেন। এর পরেই বেলা দেড়টা নাগাদ ফিরে যায় পুলিশের দলটি। সওয়া তিনটে নাগাদ শ্রীকান্তকে নিয়ে যাওয়া হয় সিজিও কমপ্লেক্সে।

সিবিআই সূত্রের দাবি, সেখানেও তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন শ্রীকান্ত। গৌতমের কাছ থেকে ২৪ কোটি টাকা নিয়ে তিনি কোথায় রেখেছেন বা কী ভাবে খরচ করেছেন, সে বিষয়ে কোনও পরিষ্কার তথ্য তিনি দিতে পারেননি। সেই কারণেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাতে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে অবশ্য সিবিআইয়ের তোলা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, এই সংক্রান্ত মামলা কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট— দু’জায়গাতেই খারিজ হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, সিবিআইয়ের সঙ্গে শ্রীকান্ত কোনও রকম অসহযোগিতা করেননি। ব্যক্তিগত কারণে সিবিআইয়ের ডাকে চলতি মাসে হাজিরা দিতে না পারায় ১৫ দিন সময় চেয়েছিলেন তিনি।

এ দিকে, রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে শ্রীকান্তের ‘ঘনিষ্ঠতার’ সূত্রে তৃণমূলকে বিঁধেছে বিরোধীরা। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রার্থী জোগাড় করে দিতে উনিই তো অন্যতম ডিরেক্টর।’’ আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক জনকে সিবিআই চোর-জোচ্চোর বলে গ্রেফতার করল। মুখ্যমন্ত্রীই বলুন, এমন এক জন তাঁর ঘনিষ্ঠ হলেন
কী করে?’’

তৃণমূল অবশ্য কার্যত পাশে দাঁড়িয়েছে শ্রীকান্তের। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘এ আঘাত সর্বত্র আসছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক থেকে শুরু করে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলা হচ্ছে। সিবিআই-কে দলদাসে পরিণত করেছে বিজেপি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Shrikant Mohta CBI Chit fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy