Advertisement
E-Paper

সিন্ডিকেট এড়িয়ে ফের শুরু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রকল্প

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নির্মীয়মাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ঘিরে শুরু হয়েছিল পাথর-বালির সিন্ডিকেটের গোলমাল। তাতেই থমকে গিয়েছিল ওই প্রকল্পের কাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০২:৪১

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নির্মীয়মাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ঘিরে শুরু হয়েছিল পাথর-বালির সিন্ডিকেটের গোলমাল। তাতেই থমকে গিয়েছিল ওই প্রকল্পের কাজ। নিউ টাউনের সিন্ডিকেট-চাঁই ভজাই সর্দার, রুইস মণ্ডলের গ্রেফতারের পিছনে ওই প্রকল্পের কাজ থমকানোকেই কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ওই প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় গ্রেফতারের নির্দেশ এসেছিল খাস নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে। সোমবার নিউ টাউনের ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ফের শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ। তবে সিন্ডিকেট থেকে ইমারতি মালপত্র নিয়ে নয়, বরং বাইরে থেকেই পাথর-বালি-সিমেন্টের মিশ্রণ (রেডিমিক্স) নিয়ে আসা হচ্ছে বলে খবর।

পুলিশ ও শাসক দলের একাংশ বলছেন, ওই ব্যাঙ্কটি দেশের প্রথম সারির ব্যবসায়িক সংস্থা। তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির দায়িত্বে থাকা নির্মাণসংস্থাটিও প্রথম সারির এবং ব্যবসায়িক মহলে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটালে কী পরিণাম হতে পারে, তা আঁচ করতে পারেননি সিন্ডিকেট চক্রের চাঁইরা। কারণ, এ ধরনের প্রকল্পে সিন্ডিকেট বাধা হলে তাতে বাইরে রাজ্যের প্রশাসনিক ভাবমূর্তি ধাক্কা খেতে বাধ্য।

কেন থমকে যায় প্রকল্পের কাজ?

নিউ টাউনের সিন্ডিকেট ব্যবসার রীতি হচ্ছে, কোনও প্রকল্পে বরাত দেওয়ার সময়ে চিরকুট বা ‘স্লিপ’ বরাদ্দ করা হয়। কোন সদস্য কত লরি পাথর-বালি বরাদ্দ করবেন, তা নির্দিষ্ট করে চিরকুট বন্টন করেন সিন্ডিকেটের ‘মাথা’রা। ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির সময়েও চিরকুট বিলি করা হয়। তা দেওয়া হয় এলাকায় শাসক দলের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। সেখানেই প্রথম দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এলাকার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হিসেবে, ব্যাঙ্কের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্পে শুধু পাথর-বালি সরবরাহ করতে পারলেই কয়েক কোটি টাকার মুনাফা ছিল। তাই কে কতটা চিরকুট পাবে, তা নিয়ে গোলমাল তো ছিলই। তার উপরে ঝামেলা বাধে চিরকুট বিক্রি করা নিয়েও। নিউ টাউনের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, বড় প্রকল্পে লরি-লরি পাথর ও বালি সরবরাহের মতো পুঁজি অনেক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরই নেই। তাই বড় প্রকল্পের বরাত পেলে অনেক সময়েই ছোট সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বড় ব্যবসায়ীদের চিরকুট বিক্রি করে দেন। এই ব্যাঙ্ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও অনেকে চিরকুট বিক্রি করছিলেন। কিন্তু নিউ টাউনের তৃণমূলের প্রভাবশালী এক নেতা দাবি করছেন, চিরকুট বিক্রি করা হচ্ছিল বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে। তা বিলির পদ্ধতিতেও সিন্ডিকেট চাঁইরা অনিয়ম করছিলেন। তাতে সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর একাংশই ক্রমাগত বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। এই দলাদলির কারণেই ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করে ব্যাঙ্কের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির কাজে।

স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, পাথর-বালি নিয়ে ঝামেলা শুরু হতেই ওই নির্মাণসংস্থার কর্তারা সিন্ডিকেটের দু’পক্ষকেই ডেকে পাঠান। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মালপত্র সরবরাহের কাজ শুরুর কথাও জানান। কিন্তু তাতে সুরাহা হয়নি। সমস্যা মেটাতে পুলিশ ও তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গেও কথা বলেন নির্মাণসংস্থার কর্তারা। কাজ হয়নি তাতেও। উল্টে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। কেন এই ঝামেলা শাসক দল মেটাতে পারল না, সে ব্যাপারে নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘পুলিশ, গ্রামবাসী, ওই নির্মাণসংস্থা—সকলকে এক সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছিলাম। স্লিপ বিলি করা নিয়ে এলাকায় গোলমাল বা়ড়ছে বলেও জানিয়েছিলাম। ওই সংস্থা বাইরে থেকে মশলা আনলেও যে বাধা দেওয়া হবে না, সে কথাও তাদের জানিয়েছিলাম।’’ কিন্তু আলোচনায় বসে গোলমাল মেটানো হয়নি বলেই জানান বিধায়ক। এ প্রসঙ্গে নির্মাণসংস্থার তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। মন্তব্য করেননি ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তারাও।

nationalised bank newtown syndicate raj syndicate nexus nationalised bank building
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy