Advertisement
E-Paper

ফেসবুক-অ্যাপে সরগরম পুজো

পুজোর চিরাচরিত সাবেকিয়ানায় বদল এসেছিল বেশ কয়েক বছর আগেই। এ বার বদলে যাচ্ছে পুজো প্রচারের ভাবনাও। যার হাত ধরে পুজোর লড়াইয়ে হোক না-হোক প্রচারের লড়াইয়ে সমানে সমানে ‘দাদার’ পুজোর সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে ‘পাড়ার’ পুজো।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:২৭

পুজোর চিরাচরিত সাবেকিয়ানায় বদল এসেছিল বেশ কয়েক বছর আগেই। এ বার বদলে যাচ্ছে পুজো প্রচারের ভাবনাও। যার হাত ধরে পুজোর লড়াইয়ে হোক না-হোক প্রচারের লড়াইয়ে সমানে সমানে ‘দাদার’ পুজোর সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে ‘পাড়ার’ পুজো।

বছর দশেক আগের কথা। উত্তর শহরতলির এক পাড়ার পুজোয় চাঁদা কাটতে বেরনোর সময় সদ্য তারুণ্যে পা দেওয়া ছেলেটার হাতে থাকত হ্যান্ডবিলের তাড়া। পুজোর প্রচারে ব্যানারের পাশাপাশি পাড়ায়-বেপাড়ায় পড়ত চমক লাগানো পোস্টার। নিজের পুজোর প্রচারে বড় রাস্তার মোড়ে রঙ-বেরঙের বিরাট মাপের ব্যানার লাগানোটাই ছিল প্রচারের মূল মাধ্যম।

বছর দুয়েক আগে থেকেই ই-জগতের হাত ধরে বদলে যাচ্ছিল পুজোর প্রচার। ব্যানারের পাশাপাশি ওয়েবসাইট তৈরি করে কিংবা ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের প্রচার শুরু করছিল ক্লাবগুলি। গত বছর থেকে কর্পোরেট সংস্কৃতির ধাঁচে শহরের অনেক কম বাজেটের পুজোও নিজেদের প্রচারে রেখেছিল পেশাদার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কিংবা জনসংযোগ-কর্মীদের। কী ভাবে বিজ্ঞাপন হবে, কী ভাবে সাজাতে হবে প্রচারের মাধ্যম, সে সবের নীল নকশা করে দেন তাঁরাই। এমনকী পুজো প্রচারে এ বার ঢুকে পড়েছে অ্যাপও।

সাবেকি পুজোর ধরন ছেড়ে এ বারই থিম পুজো শুরু করছে পার্ক সার্কাস ময়দানের পুজো। নজর কাড়তে ফেসবুকের পাশাপাশি অ্যাপও এনেছে তাঁরা। থিম পুজোয় সড়গড় হয়ে যাওয়া উত্তরের কাশী বোস লেনও এ বার অ্যাপ ছেড়েছে বাজারে। অ্যাপের মাধ্যমে কী ভাবে লোক টানা যায়, চলছে তারও টক্কর। মোবাইলের অ্যাপ ছেড়ে কেউ দিচ্ছেন পুজোর ম্যাপ, তো কেউ দিচ্ছেন ভিআইপি পাসের টোপ।

লড়াই চলছে ফেসবুকেও। বৈশাখ থেকেই টালা বারোয়ারি লোকজনকে ‘কলা’ দেখাতে শুরু করেছিল। সময় যত গড়িয়েছে, তাদের ফেসবুকের দেওয়ালে হাজির হয়েছে বিজ্ঞান রাক্ষস কিংবা হাইব্রিডাসুর। নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ আবার ফেসবুকে শুরু করেছে ক্যুইজ প্রতিযোগিতা। ফেসবুকে একের পর এক প্রশ্ন দেওয়া হচ্ছে এবং সেই প্রশ্নের ঠিক উত্তর দেওয়ার পর ‘লাকি ড্র’-তে বেছে নেওয়া হচ্ছে সেরা উত্তরদাতাদের। এই উত্তরদাতাদের দেওয়া হচ্ছে নাকতলার পুজোর পাস। পুজো কমিটিগুলির পাশাপাশি ফেসবুকে প্রচারের ঝড় তুলছেন শিল্পীরাও। শিল্পী দীপক ঘোষ যেমন নিজের দু’টি পুজোর কাজ কেমন এগোচ্ছে নিয়মিত তা জানাচ্ছেন ফেসবুকে। নিজের কাজের নানা দিক ফেসবুকে দেওয়ালে সেঁটে দিচ্ছেন সনাতন দিন্দা, অমর সরকারের মতো শিল্পীরাও।

পুজোর স্বাদে বদল দিতে শহরে এসেছিল থিম পুজো। কিন্তু প্রচারে বদল আনার কারণ কী?

পুজো ময়দানে ঘুরে শোনা গেল নানা মুনির নানা মত। পুজোকর্তাদের কেউ বললেন, নবীন প্রজন্ম এখন অ্যাপ, ফেসবুক নিয়ে অনেক বেশি মগ্ন। তাই তাঁদের কাছে পৌঁছতে এই ই-দুনিয়াকে হাতিয়ার করছেন তাঁরা। কেউ কেউ আবার বললেন, ‘‘ব্যানারে দৃশ্যদূষণ হয়। তার চেয়ে ফেসবুক-ট্যুইটার অনেক বেশি আধুনিক।’’ কিন্তু এ সবকে ছাপিয়েও যে কথাটা আরও উঠে এল, তা হল এই প্রচারের অর্থনৈতিক দিক। কারণ ব্যানার তৈরি করার একটা নির্দিষ্ট খরচ রয়েছে। তার ফলে ব্যানারের সংখ্যাটাও মেপে করতে হয়। কী ভাবে প্রচার করলে কতটা লাভ হবে, সে সব হিসেব করেই ব্যানার তৈরি করে। কিন্তু ই-জগতে সে সব ভাবনা নেই। ফেসবুকে নিত্যদিন তিনটে করে বিজ্ঞাপন করলেও তার খরচ লাগে না। দক্ষিণ কলকাতার এক পুজোকর্তা বললেন, বিজ্ঞাপনের টিজারের ক্ষেত্রে কোনটা কতটা সফল হবে, তার আঁচ করতে আগে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়াটাই ভাল। যদি দেখা যায়, ‘লাইক’-এর সংখ্যাটা বেশি তা হলে সেটা ব্যানার হিসেবে ছাপতে যাবে।

এবং এই সূত্রেই উঠে এসেছে এক ‘সাম্যবাদের’ কথা। উত্তরের এক ছোটপুজোর কর্তা বলছেন, বড় পুজোর বাজেট বেশি। তাই ব্যানার-হোর্ডিংয়ে ওরা ছোটদের টক্কর দিয়ে যায়। কিন্ত ফেসবুকে খরচের বালাই নেই। তাই এখানে ছোট-বড়-মেজ—সব পুজোই সমান। কথাটা যে অসত্য নয়, তার নজির মিলবে ফেসবুকে ঘাঁটলেই। অনেক ছোট পুজোও বিজ্ঞাপনের স্বকীয়তায় বড় পুজোকে টক্কর দিয়ে যাবে। শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীন, লেক গার্ডেন্স পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের মতো অনেক পুজোই নিজেদের নানা তথ্য দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে ফেসবুকের দেওয়াল।

তবে এ সবের মাঝেও ব্যানার-হোর্ডিং কিন্তু রয়েছে নিজেদের মেজাজেই। এবং তাতেও রয়েছে বৈচিত্র। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার যেমন নাম না করেই দক্ষিণ শহরতলির পুজোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে, কোনও পুজো আবার এক তিরে বিঁধছে পুজোর ‘নাক-রুচি-ধারা’-কে। আবার একই মেয়র পারিষদের তিনটি পুজো হাতিবাগান সর্বজনীন, নবীন পল্লি, নলিন সরকার স্ট্রিট ব্যানার দিয়ে নিজেদের ‘ভ্রাতৃত্ববোধ’ প্রচারে নেমেছে। এ বছর তো আবার পুজোর ব্যানারের ‘সত্যি’ নিয়ে রীতিমতো সরগরম উৎসবের ময়দান।

তা হলে দিনের শেষে এগিয়ে রইল কে? সাবেকি ব্যানার নাকি ই-দুনিয়া?

শহরের প্রবীণ এক পুজোকর্তার উত্তর, ‘‘থিমের বাড়বাড়ন্তে কি বাগবাজার সর্বজনীনের মতো সাবেক পুজোর ভিড় কমেছে?’’

kuntak chattopadhyay puja committee facebook account website puja website puja campaign puja committee campaign tool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy