সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বাঙালির সেরা পার্বণ শারোদৎসব। কোন পুজো কী রকম ভিড় টানতে পারে, তা আঁচ করার জন্য পুজোগুলির থিমের বিষয়ে জানতে থানাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা। শনিবার পুলিশ কমিশনারের দেওয়া সেই নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে কলকাতার পুজো কমিটিগুলির কাছে। তারপর থেকেই প্রশাসনের কাছে যাবতীয় তথ্য কী ভাবে পাঠানো যায় সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যে হেতু এ বছর পুজো অনেকটাই এগিয়ে এসেছে, তাই পুজো কমিটিগুলির মতোই পুলিশ প্রশাসনও পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা করছে বলেই লালবাজার সূত্রে খবর। আর বৃষ্টি নামলে শহর কলকাতার গতি অনেকটাই মন্থর হয়ে যায়। যদি পুজোর দিনগুলিতে বৃষ্টিপাত হয়, তা হলে কলকাতা শহরের জনস্রোত নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে কলকাতা পুলিশ। তাই আগে থাকতেই এ বিষয়ে উদ্যোগ শুরু হয়েছে পুলিশ প্রশাসনে।
এ বছর উত্তর কলকাতার টালা প্রত্যায়ের পুজোর শতবর্ষ। স্বনামধন্য শিল্পী ভবতোষ সুতার তাদের শারদোৎসব সাজিয়ে তোলার দায়িত্বে। এই পুজো নিয়ে প্রতি বছর কলকাতা পুলিশকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। এ বার যেহেতু তাদের পুজোর শতবর্ষ তাই কলকাতা পুলিশকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে টালা প্রত্যয়ের পুজো নিয়ে। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ প্রসঙ্গে টালা প্রত্যয়ের অন্যতম কর্তা শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এ বার যে হেতু পুজো এগিয়ে এসেছে, তাতে সবকিছুই দ্রুত করতে হবে। তাই পুলিশ প্রশাসন যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের সহযোগিতা চায় তা হলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কারণ পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় পুজোর আসরকে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’’ প্রসঙ্গত, এ বছর ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া। সেই দিন থেকেই কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে যাবে। এ ছাড়াও চতুর্থী তিথি দু’দিন ধরে থাকায় উৎসবের মেয়াদ হতে পারে প্রায় একপক্ষকাল। সে কথা মাথা রেখে পুলিশের মতো পুজো কমিটিগুলিও নিজ নিজ পরিসরে কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:
লালবাজার সূত্রে খবর, পুজোর দিনগুলিতে ভিড় কী ভাবে সামলানো হবে, আগে থেকেই সেই পরিকল্পনা ছকে রাখতে থানাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা জানিয়ে পুলিশ চিঠি দিয়েছে ওই পুজোর উদ্যোক্তা তথা বিজেপি নেতা সজল ঘোষকে। গত বছর সন্তোষ মিত্র পুজো কমিটির তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, ওই পুজোয় ভিড়ের কারণে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল পুলিশের তরফে। আর এ বছর ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে নিজেদের পুজোর থিম ঘোষণা করার পরেই তাদের পুলিশ চিঠি পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল। সজলের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কলকাতা পুলিশ যদি সব পুজো কমিটির জন্য একই নিয়ম বলবৎ করে তা হলে সকলের মঙ্গল। যে ভাবে আমার পুজোকে কেন্দ্র করে সন্তোষ মিত্র পুজো কমিটিকে প্রেমপত্র পাঠানো হয়েছে, তাতে আমাদের সন্দেহ জাগছে। সেই প্রেমপত্রের কারণ কি আমি সৎ ছেলে বলে?’’
কলকাতার পুজো কমিটিগুলি ইতিমধ্যেই থিম ঠিক করে ফেলেছে। কোন পুজোয় কেমন ভিড় হবে, থিম দেখে তা কিছুটা বোঝা যায়। তাই আগে থেকেই থানাগুলিকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার খিদিরপুর ২৫ পল্লির প্রচার সচিব কালী সাহা বলেন, ‘‘যে কোনও একটি বড় ধরনের আয়োজন করতে গেলে আগে থাকতেই প্রস্তুতি নেওয়াটা স্বাভাবিক নিয়ম। এ বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ধর্মস্থলগুলিতে যে ভাবে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমাদের শিক্ষা নিতেই হবে। পুজোর সময় যাতে সে রকম পরিস্থিতি না হয়, সে বিষয়ে আমরা এবং কলকাতা পুলিশ পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করেই চলব। সত্যি বলতে কী খিদিরপুর ২৫ পল্লিতে যত মানুষের ভিড় হয়, তাতে পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া তা আমাদের একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’’
দক্ষিণ কলকাতার বেহালার পুজো বরাবরই শারদোৎসবের বড় আকর্ষণ হয়ে থাকে। আর এ বছর বেহালা নূতন দলের পুজোর হীরক জয়ন্তী বর্ষ। তাই তাদের আয়োজনও এ বার আগের থেকে অনেকটাই বেশি। প্রবীণ শিল্পী রণো বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর সরকার, সঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং নতুন প্রজন্মের অরিঘ্ন সাহা নতুন দলের পুজোকে প্রাণবন্ত করার দায়িত্বে। কলকাতা পুলিশ এবং নিজেদের হীরক জয়ন্তী বর্ষের পুজো প্রসঙ্গে পুজো কমিটির বর্ষীয়ান কর্তা দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বড় পুজো করার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তবে পুলিশ তরফে যে ধরনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে, তা আমরা প্রতি বছর নিয়মমাফিক বেহালা থানাকে জানিয়ে দিই। আর হীরক জয়ন্তী বর্ষের পুজো বলে আমজনতা আমাদের ঠাকুর দেখতে আসবেন, সেটাও আমাদের অজানা নয়। তবে পুলিশের তরফে যে ধরনের তথ্য বা সাহায্য চাওয়া হবে, তা আমরা দিতে প্রস্তুত।’’
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শ্বাশত বসু নিজেও কলকাতা একটি বড় পুজোর কর্তা। হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো ঘিরে তিনিও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শাশ্বতের কথায়, ‘‘পুলিশ প্রশাসন গত বছর থেকেই আমাদের কাছে পুজো সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করেছে। আমরাও আমাদের সাধ্যমতো পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করেছি। এ ক্ষেত্রে ফোরামের তেমন ভুমিকা থাকে না। এ ক্ষেত্রে পুজো কমিটিগুলি সরাসরি স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করবে।’’