Advertisement
E-Paper

পুজোর ইতিহাস বেঁচে থাকুক, উদ্যোগ শহরে

ভবানীপুরের বকুলবাগানের পুজোর কবেকার অ্যালবামে নীরদ মজুমদার, বিকাশ ভট্টাচার্যদের ঠাকুরের ছবি দেখতে দেখতে অনেকেরই আফশোস হয়।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৪
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

এমন প্রতিমাও প্রাণে ধরে ভাসান দেওয়া যায়!

ভবানীপুরের বকুলবাগানের পুজোর কবেকার অ্যালবামে নীরদ মজুমদার, বিকাশ ভট্টাচার্যদের ঠাকুরের ছবি দেখতে দেখতে অনেকেরই আফশোস হয়।

কলকাতার আদি বারোয়ারিদের এক জন, সিমলা ব্যায়াম সমিতির অ্যালবামে বাঙালির চিরকালীন রথী-মহারথীদের দেখেও চমকে উঠতে হয়! একটি ছবিতে, অন্নকূটের অনুষ্ঠানে পাত পেড়ে খাচ্ছেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু। ক্লাবের কোনও সংগঠক তথা বামপন্থী নেতার স্মরণসভায় যতীন চক্রবর্তীকে নিয়ে হাজির জ্যোতি বসুও।

বছর কয়েক আগে ললিতকলা অ্যাকাডেমির একটি প্রকল্পে দুর্গাপুজোর আবহমান স্মৃতি ডিজিটাইজ করতে নেমে এমন মণিমুক্তোর খোঁজ পেয়ে চমৎকৃত হয়েছিলেন পার্থ দাশগুপ্ত, দেবদত্ত গুপ্ত প্রমুখ। আবার কত কিছু অবহেলায় হারিয়ে গিয়েছে বলে আফশোসও হয়েছিল। কলকাতার থিমপুজোর সঙ্গে যুক্ত শিল্পী পার্থবাবুর মতে, ‘‘এ তো শুধু স্মৃতি নয়! চলমান ইতিহাস।’’ পুজোর প্রতিমা, মণ্ডপ, ভোগ, গান, বিজ্ঞাপন থেকে পুজো কমিটিগুলির সারা বছরের নানা অনুষ্ঠানে বাঙালির সামাজিক আলেখ্যই উঠে আসে। শারদ-উৎসবের রেশ না-ফুরোতেই এ বার এই স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে মাঠে নামছে কলকাতার পুজো কমিটিগুলি। আজ, সোমবার পুজো কমিটিগুলির যৌথ মঞ্চ ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসবে। একজোট ও সুসংহত ভাবে প্রতি বছরের পুজোর স্মৃতি ডিজিটাইজ করার কথা ভাবছেন কলকাতার মেজ-সেজ পুজোকর্তারা। ক্লাবঘরের আলমারিতে স্মারক বা অ্যালবামে ছবি রাখাটাই সব নয়। কম্পিউটার-বন্দি ডিজিটাল আর্কাইভ গড়তে চান তাঁরা।

ইতিহাস সচেতন জাতি হিসেবে বাঙালির অবশ্য তেমন সুনাম নেই। আগে রবীন্দ্র সরোবর লাগোয়া মাঠে দুর্গাপুজোর কয়েকটি বাছাই মণ্ডপ এবং প্রতিমা সংরক্ষণের চেষ্টা হলেও অনাদরেই অনেক কিছুর দফারফা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নিউ টাউনের ইকো পার্কে অবশ্য পুজোর কিছু শিল্পকাজ ঠাঁই পেয়েছে, যা সারা বছরই আগন্তুকদের দ্রষ্টব্য। ব্যস, এটুকুই! এর বাইরে বিক্ষিপ্ত ভাবে কোনও সংগ্রহশালা বা পাঁচতারা হোটেলে দু’-চারটি প্রতিমা বা মণ্ডপের কাজ শোভাবর্ধন করছে। পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে রয়েছে গত বছর পূর্ণেন্দু দে-র তৈরি আহিরীটোলার এক পুজোর প্রতিমা। কিন্তু সার্বিক ভাবে বাঙালির দুর্গোৎসবের যাত্রাটিকে ধরে রাখার কোনও চেষ্টা নেই। সম্প্রতি কসবার রাজডাঙার একটি আর্ট গ্যালারির উদ্যোগে কলকাতার পুজো-শিল্প বিষয়ক আলোচনাসভাতেও বছর-বছর কলকাতার পুজোর কাজ ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরব হয়েছেন বেহালা নূতন দলের পুজোকর্তা তথা পুজো কমিটিরগুলির ফোরামের সহ-সভাপতি সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাস্কর বিমল কুণ্ডু থেকে শুরু করে কলকাতার পুজোর সঙ্গে দীর্ঘ দিন জড়িয়ে থাকা শিল্পী ভবতোষ সুতার, সনাতন দিন্দা, সুশান্ত পাল, অনির্বাণ দাস, দেবাশিস বাড়ুইরাও মনে করেন কাজটা করা দরকার।

শিবমন্দিরের পুজো কর্তা তথা ফোরাম-সভাপতি পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘পুজোর স্মৃতি রক্ষা করতে স্পনসরশিপ ও পেশাদারি সহায়তা— দুই-ই দরকার। ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতে ডিজিটাল মাধ্যমের বিকল্প নেই।’’ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের যুগেও অজস্র ছবি গোছগাছ করাটা জরুরি। এ বছর শিবমন্দিরের পুজোয় সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে ‘হেরিটেজ ওয়াক’ করে পাড়ায় সত্যজিৎ রায়, দেবকী বসু, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়দের বাড়ি চেনানো হয়েছিল। এক-একটি বছরের বাছাই পুজো, বিজ্ঞাপন থেকে পুজোর নানা দিক সংরক্ষণের কাজটাও জরুরি। ডিজিটাল আঙ্গিকে ফেলে আসা সময়টাকে ছুঁয়ে থাকারই পক্ষপাতী পুজোকর্তারা।

Durga Puja Festival দুর্গোপুজো
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy