Advertisement
E-Paper

পুজোর বাজারে জমজমাট ভোট-বাজারের চৌরঙ্গি

‘কী ভিড়, এগোনোই যাচ্ছে না!’ ‘একটু সাইড প্লিজ।’ ‘স্পেশ্যাল অফার, মাত্র ২৫০ টাকায়...।’ শনিবার ভরদুপুরে টুকরো টুকরো এই কথাগুলোই কানে আসছিল ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেট চত্বরে। কিন্তু চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে এ দিন ভোর থেকে ধর্মতলা চত্বরে এক দিকে যখন বন্ধ দোকানপাটের সামনে চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল, তখন ওই এলাকারই অন্য দিকে এই ভিড় কিসের?

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২০
জনজোয়ার। শনিবার, ধর্মতলায়।  ছবি:দেশকল্যাণ চৌধুরী

জনজোয়ার। শনিবার, ধর্মতলায়। ছবি:দেশকল্যাণ চৌধুরী

‘কী ভিড়, এগোনোই যাচ্ছে না!’

‘একটু সাইড প্লিজ।’

‘স্পেশ্যাল অফার, মাত্র ২৫০ টাকায়...।’

শনিবার ভরদুপুরে টুকরো টুকরো এই কথাগুলোই কানে আসছিল ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেট চত্বরে।

কিন্তু চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে এ দিন ভোর থেকে ধর্মতলা চত্বরে এক দিকে যখন বন্ধ দোকানপাটের সামনে চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল, তখন ওই এলাকারই অন্য দিকে এই ভিড় কিসের?

ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে, আর মাত্র দু’সপ্তাহ পরেই দুর্গাপুজো। তাই নতুন জামাকাপড় কেনাকাটা করতে এ দিন সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল নিউ মার্কেট, লিন্ডসে স্ট্রিট এলাকায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যে হতেই সেই ভিড় পরিণত হয়েছিল কার্যত জনসমুদ্রে। শুধু কলকাতার লোকজনই নয়, মফস্সল থেকেও বহু মানুষ এ দিন কেনাকাটা করতে এসেছিলেন ধর্মতলা এলাকায়।

লিন্ডসে স্ট্রিটের ভিড়ে ঠাসা এক জুতোর দোকান থেকে গলদঘর্ম হয়ে বেরিয়ে এলেন আড়িয়াদহের ঝন্টু পাল। বললেন, “কী ভিড়! একটা জরুরি কাজ থাকায় মেট্রোয় এসে চাঁদনি চকে নেমেছিলাম। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় লোকজন নেই দেখে ভেবেছিলাম নিউ মার্কেটও হয়তো বন্ধ। কিন্তু পরে যত এগিয়েছি তত লোক বেড়েছে।” আবার সলপের বাসিন্দা সুবীর রায়ের মন্তব্য, ‘‘এত ভিড় যে আধ ঘণ্টা লেগে গেল ধর্মতলা মোড় থেকে এই জুতোর দোকানে আসতে।’’

নিউ মার্কেট ও লিন্ডসে স্ট্রিটে শুধু বড় দোকান বা শপিং মলই নয়, জনারণ্য হয়ে ছিল গোটা চত্বরই। রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে বসে অসংখ্য অস্থায়ী দোকান। অগত্যা ভিড় ঠেলে হাঁটতে মেন রাস্তাকে বেছে নিয়েছিলেন অনেকেই।

ডানকুনির দেবরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় স্ত্রী মৌমিতাকে নিয়ে পুজোর বাজার করতে এসেছিলেন নিউ মার্কেটে। এসপ্ল্যানেড মেট্রো থেকে নেমে কিছুক্ষণ ফুটপাথ ধরে হাঁটার পরে নেমে গেলেন রাস্তায়। তাঁদের কথায় “ফুটপাথে দাঁড়ানোরই জায়গা নেই। হাঁটব কি করে?”

সকাল থেকেই ধর্মতলা চত্বরের গোটা ফুটপাথ আস্ত একটা শপিং মলের চেহারা নিয়েছিল। সেখানে কোথাও স্পেশ্যাল অফারে তিনটে জামা মিলছে ২৫০ টাকায় আবার ১৫০ টাকায় ‘মর্দানি’ শার্ট মিলবে বলে চেঁচিয়ে লোক ডেকেছেন দোকানিরা। জামাকাপড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে চুড়ি, হার, হরেক কিসিমের ব্যাগও। জামাকাপড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই সবও কিনছেন মহিলারা। বান্ধবীদের সঙ্গে শপিং-এ এসেছিলেন সদ্য চাকরি পাওয়া সুজাতা মুখোপাধ্যায়। এক ডালা রঙিন চুড়ি থেকে গয়না বাছাই করতে করতে বললেন, “এখন লম্বা চেনের সঙ্গে বড় লকেটই ফ্যাশন। পাঁচ রকমের তো কিনবই।”

শুধু কেনাকাটাই নয়, সঙ্গে পেটপুজোও। পুজোর বাজার সেরে রেস্তোরাঁ বা অস্থায়ী খাবারের স্টলের সামনেও ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। আর তাতেই চুটিয়ে ব্যবসা করেছেন ছোট দোকানিরাও।

তবে এ দিন চৌরঙ্গির এক প্রান্তে নির্বাচনের গোলমাল এড়াতে যেমন কড়া পুলিশি নজরদারি চলেছে, তেমনই আবার পুজোর ভিড় সামলাতে নিউ মার্কেট এলাকাতেও তৎপরও ছিল পুলিশ। কলকাতা পুরসভা, পুলিশ ও শপিং মল মিলিয়ে গোটা এলাকা প্রায় ৭৫টি সিসিটিভির নজরবন্দি ছিল। কোনওটা মনিটরিং করা হচ্ছিল থানায় বসে, কোনওটা আবার পুলিশ ক্যাম্পে বসে। খাস লালবাজার থেকেও দেখা হয়েছে ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেটের ছবি। ভিড়ের মধ্যে পকেটমারদের দৌরাত্ম্য সামলাতে ছিল সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারিও। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “ভোটের জন্য এ দিন পুলিশ সংখ্যায় একটু কম ছিল। তবুও ভিড় সামলাতে যতটা সম্ভব পুলিশ দেওয়া হয়েছিল।”

কিন্তু ভোটের জন্য এ দিন রাস্তায় বাসের সংখ্যা ছিল কিছুটা কম। তাই জুতো-জামাকাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে ধর্মতলার মোড়ে বাস-ট্যাক্সির জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনেকেই একে ভোগান্তি বলে মানতে নারাজ। পুজোর বাজার করতে আসা ওই মানুষগুলোর কথায়, “ভোট-বাজারে এইটুকু কষ্ট তো হবেই।”

pujo shopping vote santonu ghosh kolkata news online kolkata news vote market chowrangi tm bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy