Advertisement
E-Paper

অভিযোগের জোড়া ফলায় বিদ্ধ সরোবরের নিরাপত্তা

নানা অভিযোগ ঘিরে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বেশ কিছু দিন থেকেই। বুধবার দু’টি পৃথক ঘটনা সেই প্রশ্ন আবারও নতুন করে তুলে দিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:১৭
—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

রবীন্দ্র সরোবরের নিরাপত্তা কতটা জোরদার?

নানা অভিযোগ ঘিরে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বেশ কিছু দিন থেকেই। বুধবার দু’টি পৃথক ঘটনা সেই প্রশ্ন আবারও নতুন করে তুলে দিল। যেখানে মেরে এক পুলিশকর্মীরই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি সরোবর চত্বরেই মত্ত যুবকেরা তাঁদের শারীরিক নিগ্রহ করেছে বলে দুই তরুণী অভিযোগ করেছেন। বাধা দিতে গেলে দুই তরুণীর এক বন্ধুও ওই মত্ত যুবকদের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। আক্রান্তদের অভিযোগ, সরাসরি স্থানীয় থানার বড়বাবুকে ফোন করেও দ্রুত সাহায্য মেলেনি।

জানা গিয়েছে, হেরম্বচন্দ্র কলেজের ছাত্র আব্দুল মোস্তাক সরস্বতী পুজোর বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়েছিলেন দুই বান্ধবীকে নিয়ে। তিনি নিজেকে কলেজের ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবেও দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, সন্ধ্যার দিকে সরোবরের সি-৪ ক্লাবের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময়ই কয়েক জন যুবক তাঁর এক বান্ধবীর গাউন ধরে টানে। এর পরে তারা দুই তরুণীকে লক্ষ করে কুরুচিকর মন্তব্য করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। মোস্তাকের কথায়, ‘‘ছ’টি ছেলে ছিল। সকলেই মত্ত। হাতে পানীয়ের বোতলও ছিল। প্রতিবাদ করতে গেলে ওরা ছুটে এসে আমার এক বান্ধবীকে ঘুষি মারে। আমি ওদের ধরতে গেলে, আমাকেও বেধড়ক মারধর করেছে। অনেকেই সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা দেখছিলেন। কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। কোনও নিরাপত্তারক্ষী বা পুলিশকর্মীও সেখানে ছিলেন না।’’

এলাকাটি রবীন্দ্র সরোবর থানার অন্তর্গত। এর পরে নিজেই পরিচিতের মাধ্যমে নম্বর জোগাড় করে মোস্তাক ওই থানার ওসি-কে সরাসরি ফোন করেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওসি তার পরেও পুলিশ পাঠাননি। উল্টে আমাদেরই থানায় যেতে বলেন। তখনই পুলিশ এলে ওই ছেলেদের ধরা যেত।’’ এর পরে রবীন্দ্র সরোবর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন মোস্তাকেরা। যদিও তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশ বিষয়টিকে অত্যন্ত লঘু করে দেখছিল। মারধর, যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিতে চাইছিল না। পুলিশ বলছিল, তারা যেমন করে বলবে, অভিযোগে তেমনই লিখতে হবে। কিন্তু আমি অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত যা ঘটেছে সেটাই অভিযোগে লেখা হয়েছে।’’

রবীন্দ্র সরোবর থানার ওসি জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের যদিও বক্তব্য, ‘‘ওই যুবক মিথ্যে বলছেন। ফোন করে আমায় তিনিই বলেছিলেন যে, অভিযুক্তেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। তাই ওঁদের থানায় আসতে বলা হয়েছিল। পাশাপাশি ওই এলাকায় পুলিশও পাঠানো হয়।’’ অবশ্য পুলিশ ওই ঘটনায় শেখ ফিরোজ নামে এক

যুবককে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত যুবক প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের বাসিন্দা। ওই ঘটনার পরেই সরোবরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয় বলে পুলিশের একাংশের দাবি।

তার পরেও দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে। রাত সাড়ে আটটার পরে জনা ছয়েক তরুণ-তরুণী রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে থাকায় পুলিশ তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বচসার মধ্যেই রবীন্দ্র সরোবর থানার সাব-ইনস্পেক্টর সঞ্জয় পাণ্ডেকে ধরে তন্ময় দে নামে এক যুবক মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। সঞ্জয়বাবুর ডান হাত ভেঙে যায়। তাঁর পুলিশের পোশাকও ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। বুধবার রাতেই অবশ্য তন্ময়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তবে যেখানে পুলিশই আক্রান্ত হচ্ছে, সেই রবীন্দ্র সরোবরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে কে? সরোবরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। কেএমডিএ নিযুক্ত এক নিরাপত্তা আধিকারিক বলেন, ‘‘টালিগঞ্জ স্টেশন লাগোয়া সরোবরের একাংশে পাঁচিল দেওয়ার কাজ চলছে। ওই ফাঁকা অংশ দিয়ে প্রায়ই অনেকে ঢুকে পড়েন। ফলে মূল গেটগুলিতে যতটা নজর দেওয়া হয়, অন্য অংশে নজর দেওয়ার খামতি থেকে যাচ্ছে। পাঁচিলের কাজ শেষ হলে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।’’

তত দিন উপায়? এলাকাটি কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের অন্তর্গত। সেখানকার ডিসি দেবস্মিতা দাস ‘‘পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে’’ ছাড়া কিছু বলেননি।

Rabindra Sarobar Security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy