Advertisement
E-Paper

ট্যাক্সি ধর্মঘটের ডাক কি আত্মঘাতী, প্রশ্ন

এ যেন নিজের নাক কেটে নিজেরই যাত্রাভঙ্গ! ওলা, উবেরের মতো ক্যাবের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার বদলে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকে এ শহরের ট্যাক্সিচালকেরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়লেন বলে মনে করছেন রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১২
Share
Save

এ যেন নিজের নাক কেটে নিজেরই যাত্রাভঙ্গ!

ওলা, উবেরের মতো ক্যাবের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার বদলে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকে এ শহরের ট্যাক্সিচালকেরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়লেন বলে মনে করছেন রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা।

হলুদ হোক বা নীল-সাদা— ট্যাক্সিচালকদের দাদাগিরিতে অতিষ্ঠ আম-নাগরিক। স্বভাবতই অর্থনীতির সহজ নিয়ম মেনে ভাল পরিষেবা পেতে শহরবাসী ঝুঁকছেন ওলা, উবেরের মতো ক্যাবের দিকে। দ্রুত কমছে ট্যাক্সির রমরমা। এর থেকে বেরিয়ে আসতে ট্যাক্সিচালকেরা নিজেদের সংশোধনের পথে হাঁটবেন, এমনটাই ভেবেছিলেন রাজ্য পরিবহণ কর্তারা। তার পরিবর্তে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকায় আখেরে ট্যাক্সিমালিক ও চালকদেরই ক্ষতি বলে মনে করছেন তাঁরা।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

আগামী ২ সেপ্টেম্বর ভোর ছ’টা থেকে ৪ সেপ্টেম্বর ভোর ছ’টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)-সহ ছ’টি সংগঠন। তাঁদের অনেক দাবি থাকলেও ধর্মঘটের মূল কারণ ওলা, উবেরের মতো ‘নিউ এজ’ ট্যাক্সির রমরমা। বিটিএ-র নেতা সুমন গুহের কথায়, ‘‘বেআইনি ভাবে ওলা-উবের রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে। নিজেদের ভাড়া নিজেরাই ঠিক করে নিচ্ছে। এ ভাবে কখনও চলতে পারে নাকি! সরকারের কাছে এই সব সংস্থাগুলির উপরে নিয়ন্ত্রণ আনার দাবি আমরা আগেও জানিয়েছি। কিন্তু সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা ধর্মঘট ডেকেছি।’’ এক ধাপ এগিয়ে সুমনের আরও দাবি, ‘‘সরকার যদি ওই সব সংস্থার ভাড়া নিয়ন্ত্রণ না করতে চায়, সে ক্ষেত্রে আমাদেরও ইচ্ছেমতো ভাড়ায় গাড়ি চালানোর অনুমতি দিক। আমরাও যাত্রীদের ‘অন কল’ এসি গাড়িতে ওদের চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় পরিষেবা দেব।’’

বিটিএ-র সঙ্গে একমত রাজ্যের বিরোধী দলের শ্রমিক সংগঠনগুলিও। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-র নেতা অনাদি সাহু মনে করেন, নতুন এই ব্যবস্থাকে তাঁরা আটকাতে পারবেন না। বেসরকারি সংস্থাগুলি মুনাফা করবে, এ কথাও সত্যি। কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরকারেরও কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ইতিমধ্যে হাজার কুড়ি ট্যাক্সি রাস্তায় চলছে। আরও কত গাড়ি রাস্তায় চলবে, তাদের ভাড়াই বা কী হবে, যে কোনও মূল্যে ওই সব সংস্থাকে বাজার দখলের অধিকার দেওয়া হবে কি না, এ সবই সরকারকে ঠিক করতে হবে। না হলে কিছু দিনেই অচলাবস্থা তৈরি হবে।’’

তবে এ সবের সমাধান খুঁজতে বিটিএ-র মতো ধর্মঘট ডাকাই রাস্তা, এমনটা এখনই মনে করছেন না সিটু-সহ বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা। অনাদিবাবুর কথায়, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে আলোচনায় বসেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেব।’’

তবে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি এ নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকলেও পরিবহণ দফতরের তাবড় কর্তারাই মনে করছেন, ধর্মঘট এই সমস্যার সমাধান নয়। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এমনিতেই ট্যাক্সিচালকদের প্রত্যাখ্যানের জন্য সাধারণ মানুষের তাঁদের উপরে অসন্তুষ্ট। এই অবস্থায় ধর্মঘট ডাকলে, ভাড়াবৃদ্ধির দাবি জানালে মানুষের সমর্থন থেকে তাঁরা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে প়়ড়বেন। তাতে আখেরে ক্ষতি তাঁদেরই।’’

তবে একই সঙ্গে, হলুদ বা নীল-সাদা ট্যাক্সিরও যে প্রয়োজন আছে, তা-ও মানছেন পরিবহণ কর্তারা। পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার সাধারণ মানুষের পৃথিবীকে অস্বীকার করতে পারে না। যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না বা যাঁদের কাছে মোবাইলও নেই, তাঁদেরও ট্যাক্সিতে চড়তে হয়। তাঁদের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, বাজার অর্থনীতিতে সরকারই বা কেন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে? অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, প্রতিযোগিতাই ভাড়া ঠিক করে দেবে। হলুদ বা নীল-সাদা ট্যাক্সির একচেটিয়া কারবার বন্ধ হলে ভাড়াও তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কমতে বাধ্য। কারণ ভাড়া নয়, পরিষেবার মান বাড়িয়ে গ্রাহকদের টানাই এই সব সংস্থার মূল লক্ষ্য।

যদিও যে সরকার বাসভাড়ার উপর থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে চায় না, সেই সরকারই ট্যাক্সির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে চাইবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান পরিবহণ কর্তারাই। ইতিমধ্যেই সরকার এ ব্যাপারে উল্টো পথে হেঁটেছে। ট্যাক্সিকে ভাড়া নির্ধারণে স্বাধীনতা দেওয়ার বদলে সর্বক্ষণ খোলা অফিস, গাড়িতে সিসিটিভি, প্যানিক বাটন রাখতে বলার মতো শর্ত চাপিয়ে ওলা, উবেরের মতো ক্যাব সংস্থাগুলিকে বাঁধতে চাইছে সরকার।

ola uber transport industry taxi strike kolkata taxi strike taxi fare competition taxi competition

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}