E-Paper

দূষণ পরীক্ষায় ফেল করবে জেনেও কেন পুরনো গাড়ির স্বাস্থ্যে ছাড়

পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশের ১৩টি শহরে বিএস-৪ বিধি চালু হয়।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চলার যোগ্য এবং স্বাস্থ্যও ভাল বলে শংসাপত্র (ফিট সার্টিফিকেট) পেয়ে গিয়েছে যে গাড়ি, সেই গাড়িই ফেল করছে দূষণের পরীক্ষায়! এর পরে মোটা টাকা জরিমানার সঙ্গেই মালিকের নামে রুজু হয়ে যাচ্ছে এফআইআর! পরিস্থিতি এমন যে, মামলা-মুক্ত করে সাধের গাড়ি রাখাটাই কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শহরে ব্যক্তিগত পুরনো গাড়ির মালিকদের অনেকেরই এখন এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, দূষণ বেশি হতে পারে জেনেও তা হলে কেন পুরনো ব্যক্তিগত গাড়িকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দেওয়া হচ্ছে? যদি এই ভাবে মামলাই করা হবে, তা হলে পথে নামার ছাড়পত্র দেওয়ার বদলে কেন বাতিল করা হচ্ছে না?

এমনই সমস্যায় পড়া এক ব্যক্তি সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ২২ বছরের পুরনো তাঁর একটি ‘ভারত স্টেজ-২’ বা ‘বিএস-২’ (ভারতে গাড়ির ধোঁয়া থেকে বায়ুদূষণ মাপার মাপকাঠি হল ভারত স্টেজ বা বিএস) গাড়ি রয়েছে। পারিবারিক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বলে তিনি গাড়িটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করেন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি লক্ষ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে গাড়িটির ‘রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট’ (আরসি) ‘ব্লক’ করে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘রিমোট সেন্সিং ডিভাইস’-এ গাড়িটি দূষণ-বিধি লঙ্ঘন করেছে। এ জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং এফআইআর করা হয়েছে। অনেকেরই দাবি, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে অনেক পুরনো
গাড়ির মালিকেরই। কিন্তু কোনও গাড়ি দূষণ সংক্রান্ত পরীক্ষায় পাশ
করলে তবেই ফিট শংসাপত্র দেওয়া হয়। এই ধরনের গাড়ি যে এখনকার বিএস-৬ গাড়ির চেয়ে বেশি দূষণ ছড়ায়, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা হলে প্রথমেই কেন
শংসাপত্র বাতিল করা হচ্ছে না? প্রশ্ন উঠছে, দূষণ পরীক্ষা ছাড়াই কি তবে ফিট থাকার শংসাপত্র পেয়ে যাচ্ছে গাড়িগুলি? পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া এমন গাড়িই কি পথে নেমে বিপদ ঘটাচ্ছে?

পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশের ১৩টি শহরে বিএস-৪ বিধি চালু হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে দেশে সব ধরনের গাড়ির জন্যই তা চালু হয়েছে। বায়ুদূষণের মাপকাঠিতে দেশের যে ১২২টি শহর (নন অ্যাটেনমেন্ট সিটিজ়) রয়েছে, তার মধ্যে কলকাতা এবং হাওড়া রয়েছে। এই দুই শহরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) অন্যতম প্রধান উৎসই হল যানবাহনের ধোঁয়া (২২ শতাংশ)। এই পরিস্থিতিতে শুধু পুরনো বাণিজ্যিক গাড়িই নয়, ভারত স্টেজ-৪ দূষণ মাপকাঠি মেনে তৈরি হওয়া যাবতীয় বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়িই ধাপে ধাপে বাতিলের জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কারণ, কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট যানবাহনের তুলনায় পুরনো গাড়ির হার মাত্র পাঁচ শতাংশ হলেও মোট দূষণের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের নেপথ্যে রয়েছে পুরনো গাড়ি। কোনও বিএস-১ ভারী ডিজ়েল-চালিত গাড়ি বিএস-৬ গাড়ির থেকে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি দূষণ ছড়ায়।

সরকার এ জন্য একটি রিমোট সেন্সিং ডিভাইস ব্যবহার করে। এমন একটিই যন্ত্র রয়েছে বলে খবর। এই যন্ত্র ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে শহরের নানা
রাস্তায় বসিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। ওই যন্ত্রের কাছ দিয়ে যে সমস্ত গাড়ি যায়, সেগুলির ধোঁয়া পরীক্ষা করে পদক্ষেপ করা হয়। সাত দিনের মধ্যে দূষণ পরীক্ষা করিয়ে বিধি মেনে চলার প্রমাণপত্র জমা করতে পারলে বহু ক্ষেত্রে জরিমানা মকুবও হয়। কিন্তু পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, ‘‘এ আসলে বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো। যদি এ ভাবে জরিমানা এবং মামলাই করা হবে, তা হলে আদালতের নির্দেশ উড়িয়ে এমন গাড়ি পথে নামতে দেওয়া হচ্ছে কেন?’’

পরিবহণ দফতরের এক কর্তা যদিও বললেন, ‘‘অনেকেরই পুরনো গাড়ির সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে থাকে। সেই আবেগের কারণেই মানবিক ভাবে দেখা হয়। তা ছাড়া, সাত দিনের মধ্যে দূষণ পরীক্ষায় পাশ করে ছাড় পাওয়ার রাস্তাও তো খোলা থাকছে।’’ পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীও একাধিক দফায় জানিয়েছেন, অনেকেই কষ্ট করে গাড়ি কেনেন। বার বার গাড়ি কেনা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই মানবিক ভাবেই ব্যক্তিগত গাড়ির এই বিষয়টি দেখা হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pollution Fit Certificate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy