Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
R G Kar Medical College and Hospital

যত্রতত্র পড়ে মদের বোতল এবং অন্যান্য নেশার দ্রব্য, আরজি কর চত্বর যেন বহিরাগতদের মুক্তাঞ্চল!

হাসপাতাল জুড়ে বহিরাগতদের দাপটে নিজেদের আতঙ্কের কথা অস্বীকার করছেন না পড়ুয়ারাও। নার্সিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া বললেন, ‘‘রাত হলেই এই এলাকাটা ওদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়।’’

আর জি কর হাসপাতালের স্টোর রুমের পাশে গাড়ি রাখার জায়গায় পড়ে আছে মদের বোতল। রবিবার। 

আর জি কর হাসপাতালের স্টোর রুমের পাশে গাড়ি রাখার জায়গায় পড়ে আছে মদের বোতল। রবিবার।  —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৪
Share: Save:

হাসপাতাল তো নয়, যেন ‘বহিরাগতের’ মুক্তাঞ্চল! যেখানে না আছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী, না আছে আলোর ব্যবস্থা। অভিযোগ, এই অব্যবস্থার সুযোগে রাত হলেই চলে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত। হাসপাতালেই বসে যায় তাদের মদ্যপানের আসর। যার প্রমাণ ছড়িয়ে গোটা হাসপাতাল চত্বরে। কোথাও পড়ে রয়েছে একাধিক মদের বোতল, কোথাও বা
অন্যান্য নেশার দ্রব্য। এমনই পরিস্থিতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের।

দিন কয়েক আগে ওই হাসপাতালেই এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণ-কাণ্ডে পরের দিনই গ্রেফতার হয়েছে অভিযুক্ত। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক ভাবে কিছু তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তা হল, রাত ১১টার সময়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছিল অভিযুক্তকে। ওই ফুটেজে হাসপাতালের চারতলায় এক রোগীকে সঙ্গে নিয়ে তাকে দেখা যায়। এর কিছু ক্ষণ পরে চারতলা থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের ভিতরেই দীর্ঘ সময় ধরে মদ্যপান করে অভিযুক্ত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের এমার্জেন্সি (জরুরি) ভবনের পিছনে কোনও এক জায়গায় বসে মদ্যপান করে সে। রবিবার সেই হাসপাতাল চত্বরের পাশাপাশি, আশপাশে ঘুরে বহিরাগতদের বেলাগাম যাতায়াত ও মদের আসর বসার তথ্যপ্রমাণও উঠে এসেছে।

আর জি কর হাসপাতালে এমার্জেন্সি ভবনের পিছনে রয়েছে বহুতল স্টোর রুম এবং
অ্যাকাডেমিক ভবন। এই দুই ভবনের এক দিকে রয়েছে অ্যানাটমি ভবন এবং উল্টো পাশে রয়েছে হস্টেল। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিভাগের ভবনও রয়েছে। এই অনেকটা এলাকা জুড়ে গোটা কয়েক আলোর ব্যবস্থা থাকলেও তা যে পর্যাপ্ত নয়, তা দেখলেই বোঝা যায়। আর জি কর হাসপাতালের পড়ুয়াদের দাবি, এই অংশে সাধারণত চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও কাজ না হওয়ায় রোগী বা তাঁদের আত্মীয়দের ভিড় থাকে না। দিনের বেলায় পড়ুয়াদের একটি অংশকে দেখা গেলেও সন্ধ্যা নামতেই তাঁরাও কেউ এখানে বিশেষ আসেন না। অভিযোগ, কেউ না আসার সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই অংশে বহিরাগতদের মদের আসর বসে। এমনকি, বিভিন্ন অসামাজিক কাজ হয় বলেও অভিযোগ করছেন পড়ুয়ারাই।

এ দিন হাসপাতাল চত্বরের পিছনের অংশে গিয়ে দেখা গেল, বহুতল স্টোর রুমের নীচে
পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে গোটা চারেক গাড়ি দাঁড়িয়ে। আশপাশের ফাঁকা জায়গাতেও আরও কয়েকটি গাড়ি দাঁড় করানো। স্টোর রুমের ওই চত্বরেই এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে রয়েছে মদের বোতল এবং প্লাস্টিকের গ্লাস। মদের বোতলের কোনওটি ভাঙা, আবার কোনওটি গোটা ফেলে রাখা রয়েছে। গোটা চত্বর জুড়ে পড়ে রয়েছে খাবারের প্যাকেটের সঙ্গে অন্যান্য নেশার সামগ্রী।

হাসপাতাল জুড়ে বহিরাগতদের দাপটে নিজেদের আতঙ্কের কথা অস্বীকার করছেন না
পড়ুয়ারাও। নার্সিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া বললেন, ‘‘রাত হলেই এই এলাকাটা ওদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামলেই কেউ আর ওই অঞ্চলে পা দেন না।’’ বহিরাগতেরা সংখ্যায় এতটাই বেশি থাকে যে চাইলেও তাদের আটকানো যায় না, জানাচ্ছেন হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী। তাঁর কথায়, ‘‘রাতে ওরা দল বেঁধে ঘোরে। আটকাতে গেলে কেউ বলে আমি স্থানীয়, কেউ কোনও রকম কথার উত্তর না দিয়েই ভিতরে ঢুকে যায়।’’

আর জি করের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক সুদীপ্ত রায় এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালকে কেন্দ্র করে একটা দালালচক্র সক্রিয় থাকে। কখনও রোগীর বাড়ির লোক সেজে, কখনও অ্যাম্বুল্যান্সের সহায়ক সেজে হাসপাতালে ঢোকার চেষ্টা করে। নিয়ন্ত্রণে আনতে এর আগেও একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE