Advertisement
০২ মে ২০২৪
Illegal Parking Business

‘অবৈধ’ পার্কিংয়ে ভরেছে বিধাননগর, প্রশ্ন পুরসভার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে

অনেক জায়গায় পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন প্রশ্নও উঠছে যে, রাস্তা দখল করে চলা সব পার্কিং লট থেকেই কেন রোজগারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বিধাননগর পুরসভা?

An image of Parking

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৮
Share: Save:

সরকারি ভাবে পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে হাতে গোনা। কিন্তু বাস্তবে সল্টলেক তথা বিধাননগর পুর এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতোই গজিয়ে উঠেছে পার্কিং লট। অনেক জায়গায় পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন প্রশ্নও উঠছে যে, রাস্তা দখল করে চলা সব পার্কিং লট থেকেই কেন রোজগারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বিধাননগর পুরসভা?

বিধাননগর পুর এলাকায় ৪১টি ওয়ার্ড রয়েছে। সূত্রের দাবি, পুরসভার আয় হয় মাত্র সাতটি পার্কিং লট থেকে। যার সব ক’টিই রয়েছে সল্টলেক এলাকায়। অথচ, এর বাইরে রাজারহাট-গোপালপুর কিংবা রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা এলাকার মধ্যেও বিভিন্ন হাসপাতাল এবং হোটেলের সামনে গাড়ি রাখা হয়। তা ছাড়া সল্টলেকের অন্যান্য জায়গা
তো রয়েছেই। কিন্তু কে বা কারা ওই সব ‘অবৈধ’ পার্কিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে পুরসভার অন্দরেই।

কিছু দিন আগে বিধাননগরের প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এমন বেআইনি পার্কিংয়ের লোকজনের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অনিন্দ্যের অভিজ্ঞতা, ‘‘এইচবি ব্লকের একটি শপিং মলের সামনে গাড়ি রাখার সঙ্গে সঙ্গে উইন্ডস্ক্রিনে পার্কিংয়ের স্টিকার সেঁটে দেওয়া হয়েছিল। পরনে কালো পোশাক ছিল কর্মীদের। আমি ওঁদের লাইসেন্স দেখতে চাইলে ওঁরা রাজি হননি। এর পরেই আমাদের মধ্যে চেঁচামেচি শুরু হয়। স্থানীয় পুর প্রতিনিধিকে বিষয়টি জানালে উনি জানান, যাঁদের তিনি রেখেছেন, তাঁদের পোশাক কালো রঙের নয়।’’ এই ঘটনা প্রসঙ্গে আবার স্থানীয় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি রঞ্জন পোদ্দারের দাবি, ‘‘ওই ওয়ার্ডে বিস্তীর্ণ দুই এলাকা নিয়ে দু’টি পার্কিং লট রয়েছে। কর্মীদের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ব্যবহার করতে ও লাইসেন্স রাখতে বলেছি। এ বার রেট চার্টও ঝোলাতে বলে দেব।’’

সূত্রের খবর, কোভিডের পরে ২০২১-’২২ সালে পার্কিং থেকে পুরসভার যেখানে বছরে ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে, সেখানে ২০২২-’২৩ সালে সেই আয় নেমে গিয়েছে বছরে ৭৫ লক্ষ টাকায়! অভিযোগ, চুক্তি শেষ হলেও কোথাও কোথাও পুরনো লোকজনই পার্কিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বিধাননগর পুরসভা দাবি করেছে, চলতি আর্থিক বছরে পার্কিং থেকে এক কোটি টাকারও বেশি উপার্জন করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সল্টলেক এলাকায় বহু আবাসিক বাড়ি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে। কোথাও অফিস, কোথাও রেস্তরাঁ, কোথাও অন্য কোনও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হচ্ছে। যার জেরে সল্টলেকের মতো পরিকল্পিত এলাকায় উপচে পড়ছে গাড়ির ভিড়। সিটি সেন্টার চত্বরে দাঁড়ালে চার দিকে পার্কিং লট চোখে পড়ে। একই পরিস্থিতি করুণাময়ী, বিকাশ ভবন চত্বরেও। তার বাইরে রাজারহাটের দিকে গেলে ভিআইপি রোড, চিনার পার্ক-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ইচ্ছে মতো গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। কারণ, ওই সব এলাকায় অজস্র হোটেল, হাসপাতাল রয়েছে। এক মেয়র পারিষদের কথায়, ‘‘নগরায়ণ হলে গাড়ি বাড়বে। তার জন্য পার্কিং লটেরও প্রয়োজন হবে। তাই বলে রাস্তার উপরে পার্কিং করা হবে, অথচ পুরসভার আয় হবে না, এমন হতে পারে না। পুর কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখা উচিত। পার্কিং থেকে প্রচুর আয়ের সুযোগ রয়েছে।’’

বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমরা গত দু’বছরের মধ্যে নতুন করে
পার্কিংয়ের ছাড়পত্র দিইনি। যদি কেউ এর বাইরে পার্কিংয়ের ব্যবসা করে থাকেন, সেটা বেআইনি কাজ। আমাকে অনেকে অভিযোগ করলেও নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে পারেননি। অভিযোগ শুনে নির্দিষ্ট জায়গায় লোক পাঠিয়েও দেখেছি, এমন কিছু হচ্ছে না।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এই অবৈধ পার্কিং ব্যবস্থাকে কি পুরসভার ছাতার তলায় আনার কোনও পরিকল্পনা আছে? কারণ এই অবৈধ কাজে তো পুরসভার আয়ের মোটা অঙ্কের ক্ষতি হচ্ছে! উত্তরে মেয়র জানাচ্ছেন, এই অবৈধ কাজ করছেন কারা, আগে সেই বিষয়টা খুঁজে বার করতে হবে। পুলিশকেও এই বিষয়টা নিয়ে বলা হবে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE