E-Paper

শৌচাগার দুর্নীতির তদন্তে পুরসভার ভূমিকায় প্রশ্ন

শৌচাগার সংস্কারে দুর্নীতির ঘটনায় পুরসভার তদানীন্তন সিনিয়র এডুকেশন অফিসার-সহ আরও দুই অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে ইতিমধ্যেই শো-কজ় করা হয়েছে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৪
An image of Kolkata Municipal Corporation

কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

পুর বিদ্যালয়ে শৌচাগার সংস্কার দুর্নীতি-কাণ্ডে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি দিল একটি শিক্ষক সংগঠন। যে সংগঠন বছর সাতেক আগে শৌচাগার তৈরির সময়ে অনিয়মের বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে জানিয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু অভিযোগ, তা সত্ত্বেও সেই সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, শৌচাগার সংস্কারের কাজের ফাইলে তদানীন্তন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ছাড়াও একাধিক শীর্ষ আধিকারিকের সই রয়েছে। তাঁদের ছাড় দিয়ে শুধু নিচুতলার তিন জন আধিকারিককে কেন কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হল? কেন তদানীন্তন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা)-কে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হল না?

শৌচাগার সংস্কারে দুর্নীতির এই ঘটনায় পুরসভার তদানীন্তন সিনিয়র এডুকেশন অফিসার-সহ আরও দুই অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে ইতিমধ্যেই শো-কজ় করা হয়েছে। অতীতেও দেখা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন বিভাগে দুর্নীতির ঘটনায় কেবল আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এখানেই আধিকারিকদের একাংশের প্রশ্ন, পুরসভার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে কাজ হয়েছে। তাঁদের সই রয়েছে ফাইলে। তা হলে তাঁরা কেন তদন্তের বাইরে থাকবেন? কেন তাঁদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়নি? এ বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি, মেসেজেরও কোনও উত্তর দেননি।

এ দিকে শিক্ষক সংগঠনটির তরফে মেয়রকে লেখা চিঠিতে জানানো হয়েছে, বিদ্যালয়ের ভুয়ো প্যাড তৈরি করে সেখানে শৌচাগার তৈরির কমপ্লিশন সার্টিফিকেট (সিসি) দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, প্রযুক্তিবিদদের পরামর্শ ছাড়াই সেই প্যাডে শিক্ষকদের দিয়ে জোর করে সই করানো হয়েছিল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ‘‘শৌচাগার সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার পরে ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে কোনও রকম পরিদর্শন ছাড়াই শুধুমাত্র শিক্ষকদের দিয়ে জোর করে সই করিয়ে নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। অনেক বিদ্যালয়ের নিজস্ব প্যাড না থাকা সত্ত্বেও কেবল ঠিকাদারদের টাকা মেটানোর জন্য প্যাড ছাপানো হয়েছিল।’’ চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়ার দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ারদের। সেই কাজ কী ভাবে শিক্ষকদের দিয়ে করানো হল?’’

পুরসভা সূত্রের খবর, পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তদন্তের সুবিধার জন্য পুর শিক্ষা দফতরের তরফে আগেই ৫০টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একাধিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সাত বছর আগের এই ঘটনায় তৎকালীন দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকদের অনেকেই উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ অবসর নিয়েছেন। কেউ মারা গিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকদের কাছে যে যে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, তা নিয়ে মেয়রকে লেখা চিঠিতে আপত্তিও জানানো হয়েছে।

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, নিয়ম মতো শৌচাগার সংস্কার শুরুর আগে বিদ্যালয়ে সর্বশিক্ষা মিশনের নোটিস টাঙানোর কথা। কিন্তু নোটিস ছাড়াই শিক্ষকদের অন্ধকারে রেখে কাজ হয়েছিল। এক শিক্ষকের অভিযোগ, ‘‘কাজ শেষের পরে আমাদের দিয়ে সই করানো হয়। কী পদ্ধতিতে কাজ হয়েছিল, তা-ও আমাদের অজানা। তা হলে সাত বছর আগের ঘটনা সম্পর্কে যা যা জানতে চাওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে কী ভাবে উত্তর দেব?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

financial corruption Government Schools

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy