E-Paper

পুর হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আর জি করে তড়িঘড়ি সংস্কার?

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, হেরিটেজ ভবনে কাজের আগে হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন লাগে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২০
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে লালবাজারের পথে চিকিৎসকদের মিছিল। সোমবার।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে লালবাজারের পথে চিকিৎসকদের মিছিল। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

কলকাতা পুরসভার নথি জানাচ্ছে, ঐতিহ্যের মাপকাঠিতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গ্রেড ‘টুবি’র অন্তর্গত। নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে ভাঙা, সংস্কারের কাজের আগে পুরসভার ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির (হেরিটেজ কনজ়ারভেশন কমিটি) অনুমতি নেওয়া দরকার। অথচ, আর জি কর-কাণ্ডের পরে হাসপাতালে তড়িঘড়ি শুরু হওয়া সংস্কারের কাজের জন্য পুর হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলেই জানাচ্ছেন কমিটির সদস্যদের একাংশ।

প্রসঙ্গত, অপরাধের ঘটনাস্থল, অর্থাৎ, ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের সেমিনার রুম থেকে অদূরেই কেন তড়িঘড়ি ওই সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠেছে। সিবিআই তদন্তেও এই প্রশ্ন অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে সূত্রের খবর।

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, হেরিটেজ ভবনে কাজের আগে হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি সংস্কারের কাজের নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে বলেই তাঁর দাবি। প্রাক্তন মেয়রের দাবি, ‘‘ক্রাইম সিন মানে শুধুই যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে, তা নয়, তার পরিপার্শ্বও। কিন্তু এখানে তা নষ্টের চেষ্টা করাটা নিঃসন্দেহে ফৌজদারি অপরাধ্যযোগ্য (ক্রিমিনাল অফেন্স)।’’

পুর নথি জানাচ্ছে, গ্রেড ‘টুবি’ বিল্ডিংয়ে সমান্তরাল (হরাইজ়ন্টাল) ও উল্লম্ব (ভার্টিকাল) কাঠামো তৈরি করা যায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কাঠামোকে অবশ্যই বাকি ভবনের ঐতিহ্যশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সেই কাঠামো সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, তা খতিয়ে দেখবে পুর হেরিটেজ কমিটি। এই ক্ষেত্রে আবেদনভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কমিটির। কিন্তু আর জি কর-কাণ্ডের ঘটনাস্থল (সেমিনার রুম) থেকে অদূরেই সংস্কারের কাজে এই সমস্ত নিয়ম মানা হয়নি বলেই পুরসভা সূত্রের খবর।

পুর হেরিটেজ কমিটির বর্তমান এক সদস্য বলছেন, ‘‘যত দূর জানি, আর জি কর থেকে সংস্কারের কাজের জন্য অনুমোদন চেয়ে কমিটির কাছে কোনও প্রস্তাব আসেনি। তবে অনেক আগে এসে থাকলে সেটা আলাদা ব্যাপার।’’ কিন্তু এ ক্ষেত্রে আগে অনুমতি চাওয়ার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, সংস্কারের যাবতীয় প্রস্তুতি চোখে পড়ে আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীর খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পরে। হেরিটেজ কমিটির আর এক সদস্য বলছেন, ‘‘নিয়মমতো অনুমতি চাওয়ার কথা হলেও প্রতিনিয়ত হাসপাতালে অনেক ধরনের কাজই হয়। এ বার সমস্ত ক্ষেত্রেই তো পুর হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন নেওয়া যায় না।’’

কিন্তু অন্য জায়গায় সংস্কারের কাজের সঙ্গে বর্তমানের আর জি করে সংস্কারের কাজের বিষয়টি গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয় বলে মত অনেকের। এই ‘স্পর্শকাতর’ সময়ে সংস্কারের কাজের অনুমতি দেওয়া নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত দফতরের। দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দিলে পূর্ত দফতর আগ বাড়িয়ে এই কাজ করবে না। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্দেশ না পেলে কেন কাজ হবে? অডিটে জবাবদিহি কে করবে সে ক্ষেত্রে? সাধারণ যুক্তি তো এটাই বলে।’’

ঘটনাচক্রে যে হেরিটেজ কমিটির অনুমতি ছাড়াই সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল আর জি করে, সেই হেরিটেজ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহে শহরে আসার কথা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল মনুমেন্টস অথরিটি’র এক প্রতিনিধিদলের। উদ্দেশ্য, শহরের মেটকাফ হল নিয়ে আলোচনা। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুর হেরিটেজ কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘‘আসলে প্রবাদই আছে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। এটাও অনেকটা সে রকমই। ন্যাশনাল মনুমেন্টস অথরিটিও আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে এ শহরে সে অর্থে হয়তো আমাদের গুরুত্ব থাকে না!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College and Hospital Heritage Committee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy