Advertisement
০২ মে ২০২৪
Citizenship Amendment Act

বেনাগরিক তকমার আতঙ্কে পুরনো ভোটার তালিকায় নথির খোঁজ

রাজ্য লেখ্যাগার থেকে পরিবারের পুরনো ভোটার তালিকার খোঁজে ফের ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ জড়ো হচ্ছেন। কোচবিহার, অসমের বাঙালিদের মতো রাজ্যের অন্য জেলাগুলি থেকেও অনেকেই আসছেন।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৫
Share: Save:

‘পুরনো ভয়’ এসেছে ফিরিয়া! দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার মফিদুল ইসলাম, জামাল সেপাইরা সকাল থেকে শেক্সপিয়র সরণিতে হত্যে দিয়ে পড়ে। রোজার উপোস রেখে রাজ্য লেখ্যাগার বা স্টেট আর্কাইভসের দফতরে পরিবারের পুরনো ভোটার তালিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। নদিয়ার হরিণঘাটার দুই তরুণ, রফিকুল বিশ্বাস ও সাহিল বিশ্বাসরাও ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন। দেশে নাগরিকত্ব নিয়ে নতুন আইন কার্যকর করার পটভূমিতে দিল্লির শাসকদের সমর্থক মতুয়াদের একাংশ উৎসব করলেও বাংলার বৃহত্তর সমাজে চেনা ভয়টাই গেঁড়ে বসেছে।

রাজ্য লেখ্যাগার থেকে পরিবারের পুরনো ভোটার তালিকার খোঁজে ফের ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ জড়ো হচ্ছেন। কোচবিহার, অসমের বাঙালিদের মতো রাজ্যের অন্য জেলাগুলি থেকেও অনেকেই আসছেন। ভোটের আগে দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হবে, গত ফেব্রুয়ারিতে অমিত শাহের এই ঘোষণার পরে সেই আইন খাতায়-কলমে সদ্য কার্যকর করা এবং বিষয়টি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পরে অনেকেই ভোটার তালিকার কাগুজে প্রমাণ জোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

স্টেট আর্কাইভসের এক কর্তা বৃহস্পতিবার বলছিলেন, ‘‘২০১৮ সালে অসমে এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়ার পরে একটা অস্বাভাবিক ভিড় এখানে আছড়ে পড়েছিল। তখন ভিড় সামলাতে এই অফিসে পুলিশ পাহারাও বসাতে হয়েছিল। চলতি সপ্তাহেও রোজই ৬০-৭০ জন করে নথি চেয়ে ভিড় করছেন।’’ ওই কর্তা জানাচ্ছেন, দফতরে লোকাভাবের জন্য একসঙ্গে এত জনের আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এক দিনে ২০ জনের বেশি মানুষের আবেদন গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এবং তাঁদের বলা হয়েছে, ভোটার তালিকার তথ্য দিতেও ৪৫ দিন লাগবে।

লেখ্যাগার দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০ জনের অফিসে ন’জন রয়েছেন। পুরনো ভোটার তালিকা দেখার কাজটিও আউটসোর্স করে সামলানো হচ্ছে। জনৈক আধিকারিকের কথায়,
‘‘আগে প্রধানত অসমের বাঙালি, যাঁদের কোচবিহারে বাড়ি, তাঁরা আসছিলেন। কোচবিহারে জেনকিন্স স্কুলে গোলমালের ঘটনায় জেলাশাসকের অফিসে আগুন দেওয়া হয়। জেলার পুরনো ভোটার তালিকার নথিও পুড়ে যায়। অসমে বিয়ে হওয়া অনেক বাঙালি মহিলার নাম এনআরসি-তে বাদ পড়ায় তাঁদের আত্মীয়েরা তখন আসছিলেন। পরে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে পারে, এই আতঙ্কে বাংলার মুসলিমরা দল বেঁধে আসতে থাকেন।’’

সিএএ-র আওতায় মুসলিমদের এমনিতেই বাদ রাখা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এনআরসি হলে ‘বাংলাদেশি’ তকমা ঠেকাতে এ রাজ্যে কয়েক প্রজন্মের বাসিন্দা মুসলিমরাও পরিবারের পুরনো ভোটার তালিকা হাতে রাখতে চাইছেন। বাটা কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী জামাল, মফিদুলরা বলছিলেন, ‘‘১৯৬৪ নাগাদ মহেশতলার চকচান্দুল, নুঙ্গি মোল্লাপাড়া, চুনরির মতো গ্রামে গোষ্ঠী সংঘর্ষে অনেকের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। পুরনো নথি কী-ই বা পাব! পুরনো ভোটার তালিকায় বাবার নাম জোগাড় করতে এসেছি।’’

চেন্নাইয়ে রেস্তরাঁর পাচক রফিকুল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সাহিলরাও ভোটার তালিকায় তাঁদের দাদুর নাম খুঁজতে এসেছেন। আর্কাইভসের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগে অসমে বাংলার ভোটার তালিকার নামে দালালরা মোটা টাকা তুলত। নথি জালের চেষ্টাও হত। কয়েকটি কেন্দ্রের পুরনো ভোটার তালিকার নথি ভাল অবস্থায় নেই। মহাকরণ থেকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও যতটা পারি সাহায্য করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Amendment Act CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE