Advertisement
E-Paper

‘ছোটা ভীমের’ দেখভাল নিয়ে বিপাকে হাসপাতাল 

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল আর জি করের প্রসূতি বিভাগে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সুজাতা মণ্ডল নামে এক মহিলা।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০১
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

টিভি-র কার্টুনে সে মুশকিল-আসান। তবে কলকাতার সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডে বেড়ে ওঠা ‘ছোটা ভীম’-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের অন্ত নেই! কার্টুনের গল্পে ঢোলকপুরের মহারাজ বিপদে পড়লেই ডাক পড়ে ভীমের। আর এখানে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে পরিচয় সমস্যায় জর্জরিত ভীমের বিপদ কাটাতে ডাক পড়েছে কলকাতা পুলিশের। যদিও সমাধান এখনও অধরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল আর জি করের প্রসূতি বিভাগে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সুজাতা মণ্ডল নামে এক মহিলা। সন্তান প্রসবের তিন দিন পরে ২৩ এপ্রিল দুপুরে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। সেই থেকে হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগের ওয়ার্ডই ঘর সেই শিশুর। হাসপাতালের কর্মীরাই আদর করে নাম দিয়েছেন ভীম। তার ফাইলের উপরে লেখা রয়েছে, ‘ছোটা ভীম’! পুলিশ সূত্রের খবর, ওয়ার্ড থেকে মা উধাও হয়ে যাওয়ার পরে গত মে মাসে হাসপাতালের সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। এর পরে মায়ের খোঁজ পেতে টালা থানার দ্বারস্থ হন আর জি কর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই ভীমের জীবনে এক নাটকীয় মোড়! হঠাৎ এক দিন এক মহিলা হাসপাতালে এসে দাবি করেন, ওই শিশুটি তাঁর সন্তান। কিন্তু নিজের মাতৃত্বের প্রমাণ হিসেবে কোনও নথি তিনি দেখাতে পারেননি। তা হলে সন্তানকে ফেলে চলে গেলেন কেন? মহিলার বক্তব্য ছিল, হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ তাঁর খোঁজ নেননি। তাই রাগের মাথায় তিনি সন্তানকে ওয়ার্ডে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। প্রামাণ্য নথি ছাড়া শুধু মৌখিক দাবির ভিত্তিতে মহিলার হাতে সদ্যোজাতকে তুলে দিতে রাজি হননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাঝেমধ্যে এসএনসিইউ বিভাগের নীচে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন ওই মহিলা। সন্তানকে ফেরত চেয়ে আর্জি জানান। কিন্তু তিনিই যে ওই শিশুর মা, সে বিষয়ে নিঃসংশয় না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কেউই পদক্ষেপ করতে নারাজ।

এই মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করে পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে শিশু চুরির একটা চক্র কাজ করে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সম্প্রতি চিকিৎসকের ছদ্মবেশে এক সদ্যোজাতকে চুরি করার চেষ্টা করেছিল এক তরুণী। শিশুটির মা তখন শৌচালয়ে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর নাম করে তাকে তার দিদিমার কাছ থেকে নিয়ে নেয় ওই তরুণী। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী কাগজ দেখতে চাইলে ওই তরুণী ধরা পড়ে যায়। এর পরে লেবার রুমের সামনের সিঁড়িতে শিশুটিকে শুইয়ে দৌড়ে পালায় সে। সেই কারণেই ভীমের ক্ষেত্রে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চান না আর জি কর কর্তৃপক্ষ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে ডিএনএ পরীক্ষার কথা ভাবা হয়েছিল। সেখানেও আবেদনকারী কে হবেন, তা নিয়ে টানাপড়েন তৈরি হয়। পুলিশের বক্তব্য, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কাউকে তো আবেদন করতে হবে। ওই মহিলা আবেদন করলে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ডিএনএ পরীক্ষা হতে পারে। কিন্তু মহিলা তো আবেদন করছেন না। মহিলাকে কি আবেদন করতে বলা হয়েছে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ, কারও কাছেই এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাল্টা যুক্তি, মহিলা ডিএনএ পরীক্ষা করাতে রাজি না হলে পুলিশ তো অন্য কাউকে দিয়ে আবেদন করাতে পারত। কিন্তু তা তো হয়নি!

এই টানাপড়েনে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভীমের বেড়ে ওঠা নিয়ে অন্য রকম জটিলতা তৈরি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশ জানান, এসএনসিইউ বিভাগে অনেক সদ্যোজাত রয়েছে। তাদের বিশেষ যত্নে রাখতে হয়। ভীম এখন পরিণত শিশুর মতো আচরণ করছে। ওয়ার্ডের ভিতরে কার্যত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে। যা ১১ মাসের শিশুর পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সদ্যোজাত বিভাগে একটি শিশু এ ভাবে হাঁটাচলা করলে সে সংক্রামিত হতে পারে। একই কথা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অন্য সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তা ছাড়া, এক বছরের শিশুর পরিচর্যার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন হাসপাতালের কর্মীরা।

হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানের কোনও উপায় বার না হলে এ ধরনের শিশুদের যে প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হয়, তা-ই করা হবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, একটি উপায়ের কথা ভাবা হয়েছে। তবে তা এখনই প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়।

R G Kar আর জি কর হাসপাতাল Bhima ভীম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy