সূচনা: শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ ও অন্যেরা। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
প্রায় ৩০ বছর দক্ষিণেশ্বরে কাটিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। কিন্তু সেখানে তাঁর নামাঙ্কিত কোনও মঠ ছিল না। এ বার দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা কেন্দ্র ‘রামকৃষ্ণ মঠ, দক্ষিণেশ্বর’।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পিছন দিকে জননী সারদা সরণিতে দোতলা একটি বাড়ি ২০১০ সালে বেলুড় মঠকে দান করেছিলেন চণ্ডীদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুর পরে মঠ বাড়িটি অধিগ্রহণ করে এবং সেখানে সন্ন্যাসীদের সাধন-ভজনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের মানচিত্রে একটি ‘সার্কিট’ সম্পূর্ণ করতে দক্ষিণেশ্বরে মঠ তৈরির পরিকল্পনা করেন কর্তৃপক্ষ। সেই মতো ২০১৮ সালে ওই বাড়ি সংলগ্ন জমি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়। এর পরে দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি নিজের পৈতৃক বাড়িটিও দান করেন মঠকে। পাশাপাশি, আরও কিছু জমি-বাড়ি কেনা হয়। ওই সমস্ত বাড়ি সংস্কার করে, রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রথমে একটি উপকেন্দ্র তৈরি করা হয়। সেখান থেকেই পূর্ণাঙ্গ মঠ তৈরির পদক্ষেপ শুরু হয়।
বুধবার স্বামী অদ্বৈতানন্দের জন্মতিথিতে দক্ষিণেশ্বরের মঠে প্রস্তাবিত শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ। পুজো-অর্চনার মধ্যে দিয়ে সেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। উপস্থিত ছিলেন মঠ ও মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী গিরিশানন্দ, সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্বামী বলভদ্রানন্দ ও স্বামী বোধসরানন্দ। ছিলেন ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া ও কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা।
এ দিন স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনে দক্ষিণেশ্বর ও আলমবাজার হল অভূতপূর্ব সংযোজন। যেটিকে সামগ্রিক ভাবে বলা চলে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সার্কিট।’’ তিনি জানান, সার্কিটের শুরু স্বামী বিবেকানন্দের বসতবাড়ি থেকে। এর পরে কথামৃত ভবন, বলরাম মন্দির, বাগবাজার মায়ের বাড়ি, কাশীপুর মঠ, বরাহনগর মঠ, আলমবাজার ও দক্ষিণেশ্বর মঠ এবং সর্বশেষে বেলুড় মঠ।
এ দিন সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ মঠ স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা কেন্দ্র হিসাবে কাজ শুরু করবে। যার প্রথম অধ্যক্ষ করা হয়েছে স্বামী ঈশব্রতানন্দকে। তিনি আরও জানান, দেশের ২৭৩তম কেন্দ্র এবং বিশ্বের ৩২৬তম শাখা কেন্দ্র হচ্ছে এই দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ মঠ। স্বামী বোধসরানন্দ জানান, মঠ তৈরিতে এখনও পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে মন্দির তৈরির কাজ শেষ হবে। মন্দিরটি হবে দোতলা। একতলায় থাকবে বড় হলঘর, দোতলায় শ্রীরামকৃষ্ণের মর্মর মূর্তি-সহ মন্দির। দক্ষিণেশ্বর মন্দির লাগোয়া হওয়ায় এখানেও ভক্ত এবং পর্যটকদের ভিড় থাকবে বলে মনে করছেন সকলে। এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরের আশপাশের পরিবেশ শেষ কয়েক বছরে কলুষিত হয়েছে। রামকৃষ্ণ মঠ তৈরি হওয়ায়
সেই পরিবেশ মুক্ত করার প্রয়াস আরও দৃঢ় হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy