Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিৎপুরে ধর্ষণে ধৃত ৩, ‘ক্লোজ’ ২ পুলিশ অফিসার

চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে রেলের এক কর্মীকে ধর্ষণের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ নিতে টালবাহানার জেরে কোপ পড়েছে দুই পুলিশকর্তার উপরেও। দমদম জিআরপি থানার ওসি অপূর্ব চক্রবর্তী এবং চিৎপুর ইয়ার্ডের পুলিশ-ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ক্লোজ’ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত জিৎ লাল, গজেন্দ্র ও মনীশকে এ দিন চিৎপুর এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন জনই রেলকর্মী। এক অভিযুক্ত অবশ্য এখনও ধরা পড়েনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৯
Share: Save:

চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে রেলের এক কর্মীকে ধর্ষণের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ নিতে টালবাহানার জেরে কোপ পড়েছে দুই পুলিশকর্তার উপরেও। দমদম জিআরপি থানার ওসি অপূর্ব চক্রবর্তী এবং চিৎপুর ইয়ার্ডের পুলিশ-ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ক্লোজ’ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত জিৎ লাল, গজেন্দ্র ও মনীশকে এ দিন চিৎপুর এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন জনই রেলকর্মী। এক অভিযুক্ত অবশ্য এখনও ধরা পড়েনি।

জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে স্বামী মারা যাওয়ার পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে চিৎপুরে চাকরি পেয়েছিলেন ওই মহিলা। দিনের পর দিন সুনসান রেল ইয়ার্ডে ফাঁকা কামরায় সহকর্মীদের হাতে তিনি ধর্ষিতা হয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছিল পুলিশ। এমনকী, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও তিনি রেহাই পাননি। গত বুধবার চিৎপুর ইয়ার্ডের ফাঁড়ি ও দমদম জিআরপি থানায় পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও প্রথমে তিনি পুলিশের সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ। উল্টে, মহিলাকেই কার্যত মন্দ-চরিত্রের বলে তাঁর স্বামীকে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার পরামর্শ দেয় পুলিশ। শুক্রবার ওই মহিলার অভিযোগ দমদম জিআরপি-তে জমা পড়ার পরে গোটা ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এর পরে অবশ্য সক্রিয় হতে হয়েছে পুলিশকে। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণে অভিযুক্ত রেল ইয়ার্ডের চতুর্থ শ্রেণির তিন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রেল পুলিশের শিয়ালদহ ডিভিশনের সুপার উৎপল নস্কর শনিবার বলেন, “ওই মহিলা যখন অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়েছিলেন, তখন পুলিশ অফিসারদের ভূমিকা কী ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দমদম জিআরপি থানার ওসি অপূর্ব চক্রবর্তী ও চিৎপুর ইয়ার্ডের পুলিশ-ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে।”

জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে স্বামীর মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরি পাওয়ার পরেই ওই মহিলা বার বার ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে ফের বিয়ে করে সংসারও পাতেন তিনি। কিন্তু তার পরেও তাঁর উপরে অত্যাচার থামেনি। রেহাই মেলেনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও। তাঁর স্বামী সব জেনে পাশে দাঁড়ানোর পরে মহিলা পুলিশের দ্বারস্থ হন। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এখনও তিনি কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে রেল ইয়ার্ডে এমন একটি ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসায় পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ বিব্রত। রেলের তরফে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “খবরের কাগজে ঘটনার কথা পড়ে নিজেরাই তদন্ত শুরু করেছি।” রবিবাবু জানান, ওই তদন্ত কমিটিতে উচ্চপদস্থ মহিলা কর্মীরা রয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণ হলে দোষীদের শাস্তি হবে।

রেল ইয়ার্ডের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, আগেও এক মহিলা কর্মী ওখানে লাঞ্ছিতা হন। অভিযোগকারিণীকে বদলি করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদী স্বর সে বার পুলিশ অবধি পৌঁছয়নি। ফলে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

রেল সূত্রের খবর, কম-বেশি ৯০০ জন চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে জনা তিরিশ মহিলা কর্মী। তাঁদের পদ হল হেল্পার। তাঁরা ট্রেনের ঢিলেঢালা কলকব্জা আঁটোসাঁটো করা, পাখা-আলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। অভিযোগকারিণী ওই কাজই করতেন।

চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে ঢুকলে দিনের যে কোনও সময়েই মনে হবে, এ এক অচেনা জগৎ। কলকাতা স্টেশন থেকে দমদমের দিকে রেললাইন ধরে মিনিট পনেরো হাঁটলেই মনে হবে কলকাতা শহর যেন হঠাৎ উবে গেছে। এলাকাটা যেন কলকাতার মানচিত্রের বাইরে। আঁকাবাঁকা রেললাইন যেখানটায় গ্যারাজে ঢুকেছে, তার চারপাশে ঘন ঝোপজঙ্গল। সেখানেই কামরা মেরামত, ধোয়ামোছা চলে। এ রকম একটি ফাঁকা কামরাতেই দিনের পর দিন অভিযোগকারিণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। এবং চিৎপুর রেল ইয়ার্ডের কর্মীদের একাংশই কবুল করছেন, ওই সব ফাঁকা কামরায় বসে এসি চালিয়ে মদ খাওয়া ও মহিলাসঙ্গ করা মোটেই বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়।

শুধু চিৎপুর নয়, অন্য ইয়ার্ডগুলির পরিবেশও মোটেই ভাল নয়। এ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষই উদ্বেগ জানিয়েছেন। ওই সব তল্লাটে অবাধ মদ্যপান, জুয়া খেলার অভিযোগ যে মাঝেমধ্যেই উঠেছে, তা-ও অস্বীকার করেননি তাঁরা। রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, এ বার থেকে কেবল রাতে নয়, দিনেও রেলরক্ষী বাহিনী টহল দেবে ইয়ার্ডগুলোয়। টহলের জন্য জওয়ানের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE