Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সোনারপুর

বেপরোয়া লরি ধরতে গিয়ে পিষ্ট ট্যাক্সিচালক

একেবারে সিনেমার মতো দৃশ্য। তবে বিয়োগান্তক পরিণতি।বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতো এখানেও ঘাতক যান এক বেপরোয়া লরি। তবে এ ক্ষেত্রে ‘তোলাবাজ’ পুলিশের তাড়া খেয়ে নয়, লরিটি বেপরোয়া গতি নিয়েছিল একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে। আর লরিটিকে তাড়া করেছিলেন সেই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাক্সির চালক।

নর্দমায় পড়ে যাওয়া সেই ট্যাক্সি। (ইনসেটে) জনার্দন মজুমদার। — নিজস্ব চিত্র

নর্দমায় পড়ে যাওয়া সেই ট্যাক্সি। (ইনসেটে) জনার্দন মজুমদার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৪
Share: Save:

একেবারে সিনেমার মতো দৃশ্য। তবে বিয়োগান্তক পরিণতি।

বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতো এখানেও ঘাতক যান এক বেপরোয়া লরি। তবে এ ক্ষেত্রে ‘তোলাবাজ’ পুলিশের তাড়া খেয়ে নয়, লরিটি বেপরোয়া গতি নিয়েছিল একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে। আর লরিটিকে তাড়া করেছিলেন সেই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাক্সির চালক।

মঙ্গলবার ভোরের প্রায় জনমানবহীন রাস্তা। সোনারপুর থানার চৌহাটি মোড়ের কাছে ধামাইতলার দারি রোড। সেখানেই ট্যাক্সিটির পিছনে ধাক্কা মেরেছিল লরি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্যাক্সি গিয়ে পড়ে রাস্তার পাশের নালায়। কোনও রকমে ট্যাক্সির দরজা খুলে লরির পিছনে ছোটা শুরু করেন চালক জনার্দন মজুমদার (৫৪)। ট্যাক্সিকে ধাক্কা মারার পরে অপ্রশস্ত রাস্তায় তখন দুলকি চালে এগোচ্ছে লরি। কিছুটা ছুটে তার চালকের কেবিনের জানলা ধরে ঝুলে পড়েন জনার্দনবাবু। অন্য হাতে কেবিনের দরজা খোলার চেষ্টা করতে থাকেন। ঠিক যেমন সেলুলয়েডের পর্দায়, বিশেষত বলিউডি ছবিতে ভিলেনকে পর্যুদস্ত করে নায়ক।

বাস্তবে অবশ্য ব্যাপারটা আর রোমাঞ্চকর থাকেনি। কারণ, ট্যাক্সিচালককে কেবিনের জানলা ধরে ঝুলতে দেখে গতি বাড়ান লরিচালক। গতি ও ঝাঁকুনিতে ভারসাম্য হারিয়ে জনার্দনবাবুর হাত ফস্কে যায়। ছিটকে মাটিতে পড়তেই তাঁর মাথা পিষে যায় লরির পিছনের চাকায়। পথচলতি এক সাইকেল-আরোহী রাস্তার উপরে মাথা থেঁতলানো এক ব্যক্তিকে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের ডাকেন। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন।

ঘটনাস্থলেই জনার্দনবাবুর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে দুর্ঘটনার পরে লরিটি উধাও হয়ে যায়। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তার চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

ধামাইতলা থেকে কিছুটা দূরেই বাড়ি জনার্দনবাবুর। তাঁর স্ত্রী অসীমা মজুমদার জানান, মালিকের ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে চালাতেন জনার্দন। রোজ ভোরেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতেন তিনি। ভোরে দারি রোডে উদ্দাম গতিতে লরি চলাচল নিয়ে তাঁর স্বামী প্রায়ই আশঙ্কা প্রকাশ করতেন বলে জানিয়েছেন অসীমাদেবী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ড ও লাগোয়া পোলেরহাট ও রঘুনাথপুর পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় পাঁচটি বড় আবাসন তৈরি হচ্ছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এর জন্য রাত ১০টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত দারি রোড দিয়ে ইট, বালি, পাথর ও মাটি বোঝাই প্রায় শ’দেড়েক লরি যাতায়াত করে। পুলিশ ও পুরসভার তরফে কোনও নজরদারি থাকে না। ফলে রাতভর লরিগুলি বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়েরা।

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, আবাসন প্রকল্পগুলি থেকে পুরসভা মোটা টাকা আয় করছে। অথচ দারি রোডের বেপরোয়া লরি চলাচলের বিষয়ে পুলিশ ও পুরসভার কাছে অভিযোগ দায়ের করা হলেও প্রতিকার হয়নি। রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, ‘‘কয়েক সপ্তাহ আগেই যান-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করেছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় স্কুলের সামনে যান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে চাপ বেড়েছে। ফের পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে পরিকল্পনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident taxidriver sonarpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE