Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙাভাঙির মহাকরণ: হেরিটেজের নতুন নির্মাণ নাকি ধ্বংস

তিনি হীরালাল শাহ। শঙ্করের ‘জন অরণ্য’-র সেই চরিত্রের কথা মনে আছে? ঘুরে ঘুরে খুঁজছেন শহরের পুরনো বাড়ি, সেগুলোর কড়ি-বরগা! হেরিটেজ-দরদীদের তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কেন অন্যায়টা কী মশাই? চিরকাল তো আর এ বাড়ি থাকবে না। একদিন না একদিন ভাঙতে হবেই।” এখন যদি হীরালালবাবু অফিসপাড়ায় আসতেন, গালে হাত দিয়ে নির্ঘাৎ দাঁড়িয়ে পড়তেন মহাকরণের সামনে। কারণ, এ শহরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই ভবনের বেশ কিছু অংশ ভাঙার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

অশোক সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ১৮:০২
Share: Save:

তিনি হীরালাল শাহ। শঙ্করের ‘জন অরণ্য’-র সেই চরিত্রের কথা মনে আছে? ঘুরে ঘুরে খুঁজছেন শহরের পুরনো বাড়ি, সেগুলোর কড়ি-বরগা! হেরিটেজ-দরদীদের তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কেন অন্যায়টা কী মশাই? চিরকাল তো আর এ বাড়ি থাকবে না। একদিন না একদিন ভাঙতে হবেই।”

এখন যদি হীরালালবাবু অফিসপাড়ায় আসতেন, গালে হাত দিয়ে নির্ঘাৎ দাঁড়িয়ে পড়তেন মহাকরণের সামনে। কারণ, এ শহরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই ভবনের বেশ কিছু অংশ ভাঙার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

কালে কালে বেড়েছে মহাকরণের অবয়ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এই নির্বিচার সংযোজনে নষ্ট হয়েছে ঐতিহ্যের মাহাত্ম্য। তাঁর নির্দেশে তাই মহাকরণের প্রাক-স্বাধীনতার আদল ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে।

২০১৩-র ৪ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মহাকরণে শেষ কাজ করেন মমতা। এর পর ‘নবান্ন’-তে স্থানান্তরিত হয় রাজ্যের মূল সচিবালয়। পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দেওয়া হয় মহাকরণের বিভিন্ন বিভাগ। কতটা অংশ কী ভাবে ভাঙা হবে, তা ঠিক করতে বিভিন্ন স্তরে কয়েক ডজন বৈঠক হয়। সমীক্ষার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষক মধুমিতা রায় এ ব্যাপারে রিপোর্ট জমা দেন রাজ্য সরকারকে। ভাঙার কাজ শুরু হয় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে।

তদারকির মূল দায়িত্বে আছেন পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কণকেন্দু সিংহ। তিনি জানান, মহাকরণের আটটি ব্লক ভাঙা হবে। এর আয়তন প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গফুট। দু’টি পর্যায়ে হবে ভাঙার কাজ। প্রথম পর্যায়ের কাজ হবে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাঙার টেন্ডার চূড়ান্ত করা হবে। ভেঙে ফেলা অংশগুলোয় সবে সৌন্দর্যায়ন এবং সুবজায়নের কাজ।

কত টাকা লাগবে এই ভাঙাভাঙিতে?

পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, এর জন্য উল্টে সরকার টাকা পাবে। যাঁরা ভাঙার বরাত নিয়েছেন, তাঁরাই দেবেন টাকা। কত টাকা, তা ঠিক করার নির্দিষ্ট কিছু রূপরেখা আছে। বাড়িটি কত পুরনো, কী দিয়ে তৈরি— এ সব খতিয়ে হার নির্ণয় হয়। প্রথম পর্যায়ের ভাঙাভাঙিতে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা।

বিবাদি বাগ এলাকায় অফিস স্পেসের দাম এখন নাকি বর্গফুটপিছু প্রায় ২০ হাজার টাকা। সেই হিসাব দেখিয়ে বিরোধিরা অভিযোগ তুলেছেন, প্রায় ৫০০ কোটি টাকার জিনিস ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। তাদের মতে, এই টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যেত। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের দাবি, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।

ভাঙাভাঙির মহাকরণের আরও ছবি দেখতে ক্লিক করুন

হিস্ট্রি কলিং@মহাকরণ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE