Advertisement
E-Paper

বেলা একটু বাড়তেই মুছে গেল ফিকে লালটুকুও

যুদ্ধে রাবণকে পরাস্ত করার পরে শরবিদ্ধ প্রতিপক্ষের কাছে নতশির হয়েছিলেন রাম। বলেছিলেন, ‘আপনি শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক। আপনার কাছে রাজনীতির উপদেশ চাই।’ এ ভোটে বামফ্রন্টের মেয়র পদপ্রার্থী অসীম দাশগুপ্তের ফল কী হচ্ছে, শনিবার কয়েক রাউন্ড ভোট গোনার পরেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। গণনাকেন্দ্রের দোতলায় তখনই প্রাক্তন বামমন্ত্রীর কাছে কথাটা পাড়লেন তৃণমূলের সমীর সাহা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০৬
ভোটের রায় শুনে অসীম দাশগুপ্ত। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ভোটের রায় শুনে অসীম দাশগুপ্ত। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

যুদ্ধে রাবণকে পরাস্ত করার পরে শরবিদ্ধ প্রতিপক্ষের কাছে নতশির হয়েছিলেন রাম। বলেছিলেন, ‘আপনি শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক। আপনার কাছে রাজনীতির উপদেশ চাই।’
এ ভোটে বামফ্রন্টের মেয়র পদপ্রার্থী অসীম দাশগুপ্তের ফল কী হচ্ছে, শনিবার কয়েক রাউন্ড ভোট গোনার পরেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। গণনাকেন্দ্রের দোতলায় তখনই প্রাক্তন বামমন্ত্রীর কাছে কথাটা পাড়লেন তৃণমূলের সমীর সাহা। ‘‘দেখুন, আমি কিন্তু আপনার বাড়ি যাব। কয়েকটি কাজে আপনার পরামর্শ চাই।’’
দিনশেষে জয়ী প্রতিদ্বন্দ্বীর তরফে এই আবদারটুকুই প্রবীণ রাজনীতিকের জন্য প্রাপ্তি হয়ে থাকল। হয়তো এ ভোটে যাদের তিনি নেতৃত্ব দিলেন, সেই বাম-শিবিরের জন্যও এটাই সান্ত্বনা-পুরস্কার। জীবনে প্রথম বার ভোটগণনার সময়ে নিজে উপস্থিত ছিলেন অসীমবাবু। পরে বাড়ি ফিরে বলছিলেন, সব রাজনৈতিক দল, সাধারণ নাগরিকদের ভোট লুঠের বিরুদ্ধে এককাট্টা করতে হবে।
৩২ নম্বর ওয়ার্ডে স্রেফ ইই ব্লকের কমিউনিটি হলের বুথে সামান্য ভোটে এগিয়েছিলেন অসীমবাবু। তবু এ পরাজয়ের মধ্যেও সামগ্রিক ভাবে বাম-শিবিরের জন্য এ লড়াইয়ে তিনি আশার আলো খুঁজে পেলেন।
এ ভোটে অন্তত রাজ্যের শাসক দলই যে রাবণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, তা বোঝাতে কসুর করেননি অসীমবাবু। বলেছেন, ‘‘বিধাননগরের মানুষ ক্ষুব্ধ! ভোটের ট্রেন্ড দেখে বুঝেছি, ভোট লুঠ না হলে আমরাই পুরবোর্ড গড়তাম।’’ সুতরাং আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বামেদের একেবারে মুষড়ে পড়ার কিছু নেই বলেও মনে করছেন তিনি।
শাসকদলের ঝোড়ো জয়ের দিনে, সল্টলেকের বামেদের দেখে কিন্তু মেঘের আড়ালে সূর্যের খোঁজ মেলেনি। গণনাকেন্দ্র থেকে দশ মিনিটের হাঁটাপথে প্রশাসন ভবনের সামনের ফুটপাথে সিপিএম সমর্থকদের জটলা। মেরেকেটে জনা পঞ্চাশের ভিড়। রাজপথে ঝান্ডা হাতে তৃণমূলের দাপাদাপি। বাম-সমর্থকদের ফিসফাস শোনা গেল, ‘‘ভোটে আমরা আদৌ আছি না নেই, বুঝতে পারছি না!’’ এক জন বললেন, ‘‘বিমানদা (বসু)-রা তো বয়কট বলে খালাস! এ দিকে প্রার্থীরা কাউন্টিংয়ে যাচ্ছেন। আমরা থাকব কি থাকব না, কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না।’’

এফডি ব্লকের বাড়িতে রমলা চক্রবর্তীও তখন হতাশা চাপতে পারছেন না। টিভি-র সামনে বসে সরব স্বগতোক্তি, ‘‘রিপোলের দিন ভোট বয়কট করে কী লাভ হল, কে জানে!’’ গুটিকয়েক দলীয় সমর্থকের সঙ্গে অস্ফূট আলোচনা চলে। ‘‘ওরা (তৃণমূল) কায়দা করে এফডি, বৈশাখী বা এটিআইয়েই ভোট করাল। আমরা ওখানে ভাল লড়াই করেছিলাম। ভোট বয়কট না করলে পরের দিন আমরা আরও ভাল করতাম!’’ আফশোসের সুর শোনা গেল, পুনর্ভোটেই কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিল। আমাদের শক্ত ঘাঁটিগুলোয় যেখানে ভোট লুঠ হল, সেখানেই বা কেন ফের ভোট করাতে পারল না দল?

প্রথম দিন ভোটে সুজিত বসুর ছেলেদের সঙ্গে টক্কর দিতে আরও ক’টা ছেলে পাওয়া গেল না বলেও হা-হুতাশ! ‘‘বড্ড অসহায় লাগছিল!’’ এর মধ্যে কংগ্রেসের দেবরাজ চক্রবর্তীর জয়ের খবর। রমলা খুশি, ‘‘বাঃ, দোলা-পূর্ণেন্দুরা ওর যা পিছনে লেগেছিল!’’ সুভাষ চক্রবর্তীর কথা উঠতেই চোখমুখ উজ্জ্বল, ‘‘উনি বুঝতেন ভোট কাকে বলে। ২০০৬ সালে এক বার টিভি-তে দেখাচ্ছে যে, উনি পিছিয়ে। আমরা ভয়ে কাঁটা! ওঁর কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। চুপচাপ পেশেন্স খেলে চলেছেন। শেষমেশ শেষ হাসিটা উনিই হাসলেন।’’

সকাল ১০টা নাগাদ এক বার খবর এসেছিল, রমলা এগিয়ে আছেন। ঘরে ক’জন হাততালি দিতে সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী ধমক দিলেন। ‘‘চুপ কর, এটা সাময়িক।’’

একটু বাদে সিটি সেন্টারের কাছের জটলাতেও দেখা গেল রমলাকে। কিছু ক্ষণ রাস্তায় বসার পরে একটা ফাঁকা অটোয় উঠে বসলেন। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী সিপিএম প্রার্থী আজিজুল হোসেন মোল্লা এসে ‘রমলাদি’কে বললেন, ‘‘আশীর্বাদ করুন যেন ভাল কাজ করতে পারি। ৯৮৭ ভোটে জিতেছি।’’

মিইয়ে থাকা পরিবেশটায় অবশ্য হেরফের হল না। টুকরো আক্ষেপ, দত্তাবাদে কুলিপাড়া, সুকান্তনগরে টিএমসি জবরদস্তি আটকে দিল। অসীমবাবুকেও হারিয়ে দিল!

তত ক্ষণে শাসকের দাপাদাপি আরও বাড়ছে রাজপথে। কাকে দেখে রমলা বলে ওঠেন, ‘‘দ্যাখ, দ্যাখ, একদম জিম্বো (তাপস চট্টোপাধ্যায়)-র মতো দেখতে।’’ তাপসবাবু জিতেছেন শুনে বললেন, ‘‘ও ঠিক জানে, কী ভাবে ভোট বার করে নিতে হয়!’’

এক সমর্থক হঠাৎ খবর দিলেন, ওরা (তৃণমূল) কিন্তু প্রচুর ছেলে নামাচ্ছে। বাসে করে লোক ঢুকছে। সঙ্গে সঙ্গে ভিড়টা উসখুস করে ওঠে। এ বার মানে-মানে কেটে পড়াই ভাল। নয়তো বাড়ি ফিরতে অসুবিধে হবে।

রমলাও গাত্রোত্থান করে বললেন, ‘‘নাহ্, আমিও যাই! আমায় দেখলে আবার ওদের উপরে হামলা হতে পারে। বাড়িতে লোক থাকাটাও দরকার।’’ বেলা একটার মধ্যে রাজপথে লালেদের এই চিহ্নটুকুও বেমালুম মুছে গেল।

parijat bandyopadhyay red vanished saltlake vote result saltlake tmc cpm lost cpm vanished cpm red
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy