আলোকিত: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ফাইল চিত্র
আলো ও ধ্বনির সাহায্যে কলকাতার ইতিহাস তুলে ধরতে বছর তিনেক আগেই আর্থিক বরাদ্দ মিলেছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের জন্য। কিন্তু আজও সেই প্রকল্প রূপায়ণ করা যায়নি। প্রকল্প রূপায়ণে কলকাতার ইতিহাসের স্ক্রিপ্ট বানানোর কাজে দেরি এবং প্রকল্প বাবদ বাড়তি খরচের জোগান না মেলাই এই দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এ দিকে, যে টাকা বছর তিনেক আগেই এসে গিয়েছে, তা দ্রুত ব্যবহার না করা হলে ফেরত চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা শুরু হয়েছে।
কলকাতার ৩০০ বছর উদ্যাপনের পরে ১৯৯১ সালে প্রথম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আলো ও ধ্বনির সাহায্যে শহরের ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরা হয়। কিছু দিনেই তা দর্শকদের কাছে খুব আকর্ষণীয়ও হয়ে ওঠে। প্রায় ২৫ বছর তা চলে। তবে প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তা অবলুপ্তির পর্যায়ে পৌঁছলে বছর দুয়েক আগে ওই লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ভিক্টোরিয়া কতৃর্পক্ষ। তবে রাজ্য সরকারের আবেদনক্রমে কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতর ফের ওই প্রকল্প গড়ার জন্য আর্থিক সাহায্য দেয়।
কবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ওই অনুদান মিলেছে?
ভিক্টোরিয়া কতৃর্পক্ষ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের আবেদনক্রমে কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতর সেন্ট্রাল ফিনান্স অ্যাসিস্টান্স (সিএফএ) বাবদ রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতরে দু’কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা পাঠায়। পরে রাজ্য পর্যটন দফতর ওই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেয় কলকাতা পুরসভাকে। সেই দায়িত্ব পেয়েই পুর প্রশাসন কারিগরি সহায়তা দেওয়া এবং টেন্ডার করার দায়িত্ব বিশেষজ্ঞ সরকারি সংস্থা রাইটসকে দেয়। এর পরে রাইটস টেন্ডার করে একটি এজেন্সিকে বরাতও দেয়। তখনই প্রকল্প বাবদ খরচ ধরা হয় ৩ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। পুর প্রশাসন থেকে জানানো হয়, বাড়তি টাকা (৪৮ লক্ষ টাকা) দেবে রাজ্য সরকার। সেই মতো কাজের প্রক্রিয়াও শুরু হয়।
কী হবে ওই প্রকল্পে?
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত জানান, কলকাতার ইতিহাসে আগে যা দেখানো হতো, এ বার তার কিছুটা পরিবর্তন করা হবে। আগের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ভাষ্যকার ছিলেন বাংলায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ইংরেজিতে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। এ বার একক ভাবে কোনও ভাষ্যকার থাকছেন না। ঐতিহাসিকদের পরামর্শ নিয়ে স্ক্রিপ্টে বহুস্বরের বাচন এবং কথোপকথন থাকছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে এবং থ্রি ডি পদ্ধতিতে পুরো বিষয়টি দর্শকদের সামনে তুলে ধরাই হল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। তিনি জানান, ভিক্টোরিয়ার পূর্ব দিকের বিল্ডিংয়ের দেওয়ালকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এই ভাবনা প্রয়োগে এত দেরি কেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক মহলে। এ বিষয়ে জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘স্ত্রিপ্ট তৈরি করেছে পুরসভার বরাত পাওয়া সংস্থা। প্রথমে তারা একটি স্ক্রিপ্ট তৈরি করে অনুমোদনের জন্য দিয়েছিল ভিক্টোরিয়া কতৃর্পক্ষকে। তা অনুমোদন করে দেওয়া হয়। পরে ওই সংস্থা ফের জানায়, স্ক্রিপ্টের কিছু পরিবর্তন করতে হবে। নতুন করে আবার তা তৈরি করে পাঠায়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যেরা তা আবার দেখেন এবং দু’-একটি জায়গায় বদলের পরামর্শ দেন। পরে তা অনুমোদন করে দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিকে, পুরসভার এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রাথমিক ভাবে প্রকল্প বাবদ মোট খরচ ধরা হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। পরে স্ক্রিপ্ট বদলের সঙ্গে বেড়েছে খরচের বাজেটও। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পুরো থ্রি ডি করতে খরচ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকায় পৌঁছবে। এমনিতেই প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হয়েছে। তার উপরে বাড়তি টাকার জোগান নিয়েও চিন্তা রয়েছে। কারণ, প্রল্পের টাকা সময়ে খরচ না করা গেলে ফেরত পাঠানোই নিয়ম। এ ব্যাপারে ভিক্টোরিয়া কতৃর্পক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন পুর অফিসারেরা। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে কিউরেটরের সঙ্গে। জয়ন্তবাবু অবশ্য জানান, তাঁরা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রকের কাছে বাড়তি টাকা চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি, এই প্রকল্প যাতে আগামী মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ করা যায়, তাও দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। টাকা ফেরতের আশঙ্কা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘টাকা যাতে ফেরত না পাঠাতে হয়, সে বিষয়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy