বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন এক তরুণ। সেই রাতেই ফেরার পথে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। একমাত্র ছেলের মৃত্যু তছনছ করে দিয়েছিল মাকে। ছেলের স্মৃতি আগলে রাখতে ঘটনার এক বছর পরে তাঁরই পোষ্যকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন প্রৌঢ়া।
২০২৪ সালের সপ্তমীর রাত। বন্ধুরা এসেছিলেন ডাকতে, ঠাকুর দেখতে যাওয়ার জন্য। তাঁদের সঙ্গেই রাতে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন বছর আঠারোর বিশ্বজিৎ দাস।রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। সার্ভে পার্ক থানা এলাকায় ই এম বাইপাসের ছিটকালিকাপুর মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারের রেলিংয়ে ধাক্কা মারে তাঁর বাইক। বিশ্বজিৎ নিজেই সেটি চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে রুবি মোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় বিশ্বজিতের।
নরেন্দ্রপুরের বাড়িতে বসে ওই তরুণের মা শিপ্রা দাস বলছিলেন, ‘‘সেই রাতে পুলিশের ফোন এসেছিল। দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলল। সবাই মিলে হাসপাতালে যখন পৌঁছলাম, তত ক্ষণে সব শেষ।’’ নরেন্দ্রপুরে বাড়ি হলেও গড়িয়ায় মাসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন বিশ্বজিৎ। সেখানকার বরোদা প্রসাদ স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। শিপ্রা জানালেন, ২০০৯ সালে তাঁর স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তার পরে আর যোগাযোগ রাখেননি। অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে ছেলে ও মেয়েদের বড় করেছেন তিনি। মেয়েদের বিয়েও দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। তাঁর কথায়, ‘‘আর কয়েক দিন পরেই ছেলের চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হবে। পুজোর দিনগুলো যত এগিয়ে আসছে, ততই সেই রাতের কথা মনে পড়ছে।’’
মৃত্যুর কয়েক দিন আগে একটি পথকুকুরকে হঠাৎ বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন বিশ্বজিৎ। আদর করে নাম রেখেছিলেন ডোডো। এখন সেই ডোডোকে আগলেই দিন কাটে ছেলে হারানো মায়ের। কুকুরটিকে কোলে বসিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে শিপ্রা বললেন, ‘‘ছেলে মাসির বাড়ি থেকে এ বাড়িতে ফিরলেই ডোডো ছিল ওর সব সময়ের সঙ্গী। সারা ক্ষণ ওকে নিয়েই ঘুরত। ছেলে তো আর আমাদের সঙ্গে থাকল না। ওর আদরের ডোডোই এখন আমার সঙ্গী। ওকে আগলেই আমার দিন কেটে যায়।’’
এ বছর পুজোয় নতুন কোনও জামাকাপড় কেনেননি শিপ্রা। পুজোর মধ্যে কোথাও যাবেনও না। বর্তমানে পরিচারিকার কাজ আর করেন না তিনি। দুই মেয়ে নিয়মিত বাড়িতে এসে মায়ের দেখাশোনা করেন। তাঁরাও পুজোয় বেরোবেন না। বিশ্বজিতের এক দিদি মৌসুমি দাস সামন্ত বললেন, ‘‘পুজোর উৎসব আমাদের কাছে সারা জীবনের মতো ম্লান হয়ে গিয়েছে। কী করে আনন্দ করব?’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)