E-Paper

কৃষিকাজের জেরে কমছে মৌমাছি, সংরক্ষণের লক্ষ্যে গবেষণা

বাঙালি দুই গবেষকের এই গবেষণা তিনটি কৃষি অঞ্চলের ৩০টি জায়গার উপরে করা হয়েছে।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ০৯:৪৮
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিরক্ষীয় অঞ্চলের কৃষিজমির আশপাশের গাছপালা ও তাতে পরাগ সংযোগকারী মৌমাছিদের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। তাদের সংরক্ষণ খুবই জরুরি। কোন ধরনের উদ্ভিদ ও মৌমাছির সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষকেরা গবেষণা করেছেন। এ নিয়ে গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘এগ্রিকালচার, ইকো-সিস্টেম অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ পত্রিকায়।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পিএইচ ডি গবেষক অনির্বাণ চক্রবর্তীর সঙ্গে গবেষণায় ছিলেন কয়েক মাস আগে প্রয়াত, ওই বিভাগেরই অধ্যাপক পার্থিব বসু। অনির্বাণ জানান, কোনও অঞ্চলে কৃষিকাজের পরিমাণ বাড়তে থাকলে গাছপালা-বনাঞ্চল কেটে চাষের জমি তৈরি শুরু হয়। সেই জমিতে চাষ শুরু হলে ব্যবহার হয় রাসায়নিক কীটনাশক। যার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে মৌমাছিদের শরীরে। একই সঙ্গে মৌমাছি হারিয়ে ফেলে স্বাভাবিক বাসস্থান। ফলে পরাগ মিলন ব্যাহত হয়। এতে কমছে পরাগ মিলনের ফলে উৎপাদিত ফসলও।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মৌমাছিদের বাঁচাতে কৃষিজমিতে ফুলগাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এই সংরক্ষণের প্রচেষ্টা আরও উন্নত ও নিখুঁত করতে মৌমাছিদের সংখ্যা হ্রাস নিয়ে ভাবনাই যথেষ্ট নয়, বরং তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য কী রকম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা-ও জানা জরুরি ছিল।

বাঙালি দুই গবেষকের এই গবেষণা তিনটি কৃষি অঞ্চলের ৩০টি জায়গার উপরে করা হয়েছে। সেগুলি হল— আলিপুরদুয়ার জয়ন্তী বনাঞ্চল, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় এবং ওড়িশার কুলডিহার জঙ্গল অঞ্চল। গবেষণায় মূলত যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে তা হল— প্রথমত, কৃষির ঘনত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে মৌমাছি ও উদ্ভিদের বৈচিত্র কমছে। দ্বিতীয়ত, বনাঞ্চল বা স্বাভাবিক বাসস্থানে বসবাসকারী মৌমাছি ও গাছেদের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই রকম কৃষিজমিতে হ্রাস পাচ্ছে। তৃতীয়ত, বহু প্রজাতি লুপ্ত হচ্ছে, এমনকি পরিবেশ থেকে মুছে যাচ্ছে তাদের বৈশিষ্ট্যগুলিও। তার পরিবর্তে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মৌমাছি ও উদ্ভিদ প্রজাতিই টিকে থাকছে। হারিয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্যের মৌমাছি বা উদ্ভিদেরা পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রে যে দায়িত্ব পালন করত, সেই কাজ করার জন্য আর কেউ বেঁচে থাকছে না।

কী ধরনের মৌমাছি আর উদ্ভিদ লড়াই করে বেঁচে থাকতে পারছে? অনির্বাণ জানান, তুলনায় ছোট মৌমাছিদের প্রজাতি, যাদের জিভের দৈর্ঘ্য ছোট ও মাটির নীচে গর্ত করে বসবাস করতে পারে, শুধুমাত্রা তারাই বেঁচে থাকছে। যে সব গাছের উচ্চতা কম এবং ফুল কিছুটা বড় মাপের ও চ্যাপ্টা-ছড়ানো প্রকৃতির, তারাই টিকে থাকছে। ‘‘পরিবেশের পক্ষে এ বিপজ্জনক সঙ্কেত। কারণ, গাছ ও মৌমাছি পরস্পরের উপরে নির্ভরশীল। বিশেষ কোনও প্রজাতির মৌমাছি কমে গেলে তার পরাগ সংযোগের উপরে নির্ভরশীল গাছের প্রজাতিরও বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ভবিষ্যতে কৃষিজমিতে ফুলের গাছ ও মৌমাছিদের বৈচিত্র্যের পুনরুদ্ধার করা এবং বজায় রাখার জন্য পরিকল্পিত পদ্ধতিতে কাজ করা দরকার।’’— বলছেন অনির্বাণ।

এই গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে, এমন গাছ লাগানো উচিত যাদের উচ্চতা বেশি, ফুল ছোট ও লম্বাটে আকৃতির। যে সব মৌমাছির শরীর বড়, জিভের দৈর্ঘ্য লম্বা ও গাছের কোটরে বা শুকনো ডালপালার মধ্যে বাসা বানায়, তাদের সংরক্ষণ জরুরি। এই ধরনের মৌমাছিরা যে সব গাছ থেকে মধু বা পরাগ সংগ্রহ করে ও যে সব গাছে বাসা তৈরি করে, সেই গাছের প্রজাতি কৃষিজমিতে রোপণ করা প্রয়োজন। আজ, মঙ্গলবার বিশ্ব মৌমাছি দিবসের আগে অনির্বাণ বললেন, ‘‘স্যর চাইতেন, মৌমাছি ও পরাগ মিলন নিয়ে সাধারণের সচেতনতা বাড়ুক। এতে প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা সহজ হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

agriculture

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy